চবিতে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

59

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের অডিন্যান্স পরিবর্তনসহ ছয়দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ভবনের মূল ফটকে তালা দিয়ে পূর্ব নির্ধারিত ক্লাস-পরীক্ষাও বর্জন করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে ইনস্টিটিউটের মূল ফটক অবরোধ করে এ বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ২টার দিকে পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত করা হলে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, পরপর দুই বছর সেমিস্টারের একটি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অকৃতকার্য হলে ছাত্রত্ব বাতিলের বিধান রয়েছে ইনিস্টিউটের অডিন্যান্সে। ইনস্টিটিউটের তৃতীয় ও পঞ্চম সেমিস্টারের পাঁচ শিক্ষার্থী এ ধরনের জটিলতায় পড়েন। এর মধ্যে আবেদনের ভিত্তিতে তিনজনকে স্পেশাল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেয় ইনিস্টিউটের একাডেমিক কমিটি। বাকি দুজন অনুমতি না পাওয়ায় ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এজন্য ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে আন্দোলনে নামেন। গতকাল সোমবার ইনিস্টিউটের তৃতীয় ও পঞ্চম সেমিন্টারের পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষাও তারা বর্জন করেন। শিক্ষার্থীরা ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ভবনের মূল ফটকে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন? এসময় ‘অর্ডিন্যান্স বদলাও, ছাত্রত্ব বাঁচাও,’ ‘পড়তে এসেছি পড়তে দিন, ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিন,’ ‘চাপিয়ে দেয়া অর্ডিন্যান্স, এবার হবে নিংশেষ’- এসব .স্লোগান সম্বলিত হাতে লেখা পোস্টার প্রদর্শন করেন এবং স্লোগান দিতে থাকেন। খবর পেয়ে সকাল ১০টার দিকে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। পরে প্রক্টরিয়াল বডি ইনস্টিটিউটের পরিচালক, শিক্ষক ও আন্দেলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সভায় বসেন। কিন্তু সভায় সম্পূর্ণ দাবি পূরণ না হওয়ায়। পুনরায় আন্দেলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বেশি মোট ১৯২ ক্রেডিটের পরীক্ষা দিতে হয় এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের। এখানে শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু কোন ধরনের সুযোগ না দিয়ে ছাত্রত্ব বাতিল করা করা হচ্ছে। ঈদের বন্ধের দুদিন আগে চতুর্থ সেমিন্টারের ফলাফল দেয়া হয়। আর বন্ধের এক সপ্তাহের মাথায় পরের সেমিস্টারের পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। তাই কোন শিক্ষার্থী আগের সেমিস্টারের কোন বিষয়ে অকৃতকার্য হলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না। একটি সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরও টিউটোরিয়াল পরীক্ষা ও ব্যবহারিক ক্লাস নেয়া হয় ইনস্টিটিউটে। এছাড়া পাঁচ শিক্ষার্থী বিশেষ পরীক্ষার জন্য আবেদন করলেও দুজনকে দেয়া হয়নি। এখানে দুজনের প্রতি অবিচার করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে বর্তমানে ছাত্রত্ব বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাখ্যা প্রদান এবং সকল শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, প্রহসনের অর্ডিন্যান্স পরিবর্তন করে ক্রেডিট লস পদ্ধতি চালু করা, ৯০ দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা, সেমিস্টার ফাইনাল শুরুর পূর্বেই সকল প্রকার টিউটোরিয়াল এবং ব্যবহারিক সম্পন্ন করা, রুটিন অনুসারের শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়া ও রানিং মাস্টার্স চালু করা।
বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাওসিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ক্রেডিট লস পদ্ধতি নেই। ফলে একটি কোর্সে পরপর দুইবার অকৃতকার্য হলেই ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যায়। ইনস্টিটিউটের অর্ডিন্যান্স শিক্ষকরা নিজেদের ইচ্ছামত তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য অর্ডিন্যান্স পরিবর্তন করতে হবে। আজ (সোমবার) তৃতীয় ও পঞ্চম সেমিস্টারে পরীক্ষা শুরুর কথা ছিলো। তারাও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে আমাদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী পাঁচ শিক্ষার্থী ছাত্রত্ব চলে বাতিল হওয়ার কথা। ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কমিটি তিনজনকে পরীক্ষার অনুমতি দিয়ে ছাত্রত্ব বাঁচিয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন বাকী দুইজনকে কেনো পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না? আন্দোলনের আগে এসব বিষয় নিয়ে আমরা পরিচালকের দৃষ্টি আর্কষণ করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের কথায় কোন কর্ণপাত করেনি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আন্দোলন করছি। আমাদের দাবিগুলো না মানলে আন্দোলন চালিয়ে যাব।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. দানেশ মিয়া বলেন, অর্ডিন্যান্স পরিবর্তন করাতো একদিনের বিষয় না। এগুলো দীর্ঘদিনের সমস্যা। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে তাৎক্ষণিক যেগুলো মেনে নেওয়া সম্ভব, তা আমরা মেনে নিয়েছি। এখানে উচ্চপর্যয়ে সিদ্ধান্তের বিষয় রয়েছে। অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, পাঁচজন শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। আবেদনের প্রেক্ষিতে একাডেমিক কমিটির তিনজনকে পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে। বাকি দুজনকে দেয়া হয়নি। কারণ এর আগেও তাদের দুবার বিশেষ পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কৃতকার্য হতে পারেনি। অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী একাডেমিক কমিটি যতটুকু করার এখতিয়ার রয়েছে, তা করবে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত তৃতীয় ও পঞ্চম সেমিস্টারের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দাবি-দাওয়াগুলো বিবেচনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তারা আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন।