চন্দনাইশে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে মহাসড়ক

125

মুষলধারে টানা বৃষ্টির প্রভাবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চন্দনাইশ হাশিমপুর বড়পাড়া এলাকা হতে পাঠানিপুল পর্যন্ত রাস্তার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। যার উচ্চতা ছিল প্রায় ৩ ফুট। এতে ভোগান্তিতে পড়ে শত শত গাড়ি, এমনকি চলার পথে কয়েকটি গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে বাগিচাহাট থেকে দোহাজারী স্টেশন পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। নিচু হওয়ার কারণে রাস্তার উপরে অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হয়েছে বলে জানালেন সড়ক বিভাগ। এদিকে বৃষ্টির এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন স্থানীয়রা। অনেককে মহাসড়কের উপর জাল দিয়ে মাছ ধরতে দেখা গেছে।
গতকাল শনিবার দুপুর পৌণে একটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত থেকে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে গাড়ি চলাচলে বিঘœ ঘটে। এতে কক্সবাজার এবং বান্দরবান জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে দোহাজারী হাইওয়ে থানা জানিয়েছে, রাস্তার একপাশ বন্ধ করে অন্য পাশ দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে দেয়া হয়েছে। আর নষ্ট হওয়া গাড়ি দ্রæত অপসারণ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরপাড়া (কসাইপাড়া) থেকে পাঠানিপুল পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মিটার রাস্তা পানির নিচে প্লাবিত হয়। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী গাড়িসমূহ বড়পাড়া গিয়ে আটকে যায়। এতে কিছু যাত্রীকে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে। আবার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী গাড়ি পাঠানিপুলে গিয়ে থেমে যায়। পানির প্রবল স্রোত থাকলে ছোট গাড়িগুলো চলাচল করতে পারে না। পানির স্রোত কমে গেলে হাইওয়ে পুলিশ রাস্তার এক পাশ বন্ধ করে অন্য পাশ দিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। যার কারণে শত শত গাড়ি দু’পাশে আটকে পড়ে। আর স্থানীয় কয়েকটি পুকুর এবং বিল ডুবে যাওয়ার কারণে মাছ ধরতে দেখা গেছে স্থানীয়দের। উৎসবমুখর পরিবেশে মহাসড়কের উপর বিভিন্ন জাল ফেলে তাদের মাছ ধরতে দেখা গেছে। কারও জালে রুই মাছ, কারও জালে কাতল, চিংড়ি, বোয়ালসহ বড় বড় মাছ ধরা পড়ে।
মো. আজাদ হোসেন নামের স্থানীয় একজন বলেন, প্রতিবছর এ জায়গা দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। আমরাও এ সুযোগটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। আমি দুপুর দুইটা থেকে মাছ ধরে প্রায় দুই কেজির মত পেয়েছি।
বাদশা নামে আরেক স্থানীয় জানান, প্রবল বর্ষণের ফলে বিভিন্ন মাছ নিচ থেকে উপরে উঠে। আমি জাল ছাড়া হাতিয়ে কয়েকটি মাছ ধরেছি। আর এ মাছ ধরা একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে।
লোহাগাড়া থেকে চট্টগ্রামগামী যাত্রী মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, সাড়ে ১২টায় লোহাগাড়া থেকে গাড়িতে উঠেছি কিন্তু এ জায়গায় এসে আটকা পড়েছি। দুপুরে খাবার পর্যন্ত খেতে পারিনি। এখন গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে ওপাশে গিয়ে অন্য গাড়ি ধরবো।
সাতকানিয়া থেকে চট্টগ্রামগামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী জেবুন্নেছা জানান, বৃহস্পতিবারে বাড়িতে গিয়েছিলাম আজকে চলে যাচ্ছি। এভাবে যে আটকা পরবো ভাবতেই পারিনি। এখন কাপড় চোপড় সব নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তাটি যদি উঁচু থাকতো তাহলে এ দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাঙ্গু নদীর বাঁধ ভাঙনের ফলে এ প্লাবনের সৃষ্টি হয়। আর খাচ্চড়ি খাল এবং বারুমতি খাল দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ার কারণে পানির উচ্চতা বেড়ে যায়। সে সাথে রাস্তা নিচু এবং ব্রিজ-কালভার্ট কম হওয়া প্লাবনের অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেন।
মহিউদ্দিন নামে এক স্থানীয় কর্মজীবী জানায়, বৃষ্টি আর রাস্তায় পানি উঠার কারণে আজকে চাকরিতে যাওয়া হয়নি। দুপুর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ ছিল। এতে আমার মত অনেকে ভোগান্তিতে পড়েন।
হাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলমগীরুল ইসলাম চৌধুরী পূর্বদেশকে জানান, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে আমার ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডসহ মহাসড়ক পানির নিচে। চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের উপরে ৩ ফুট থেকে ৪ ফুট পানি উঠেছে। বৃষ্টি পড়লে পানির উচ্চতা বেড়ে যায় আবার কমে গেলে পানির উচ্চতাও কমে যায়। আমার ইউনিয়নের ওই এলাকার প্রায় ২০০টি পরিবার এখন ক্ষতিগ্রস্ত। ইতোমধ্যে কয়েকটি গৃহপালিত পশু পাখি মারা গেছে বলেও খবর পেয়েছি। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে আগামীকাল (আজ) ত্রাণ প্রদান করবো। আর খাচ্চড়ি খাল এবং বারুমতি খাল যদি পুনঃখনন করা হয় তাহলে দুইটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার লোকজন এ জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে।
দোহাজারি হাইওয়ে থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে তৎপর ছিলাম। এক পাশ থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে অন্য পাশ গাড়ি ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু গাড়ির চাপ থাকার কারণে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। পরে পানি কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়।
কথা হয় চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী আবু হেনা তারেকের সাথে। তিনি পূর্বদেশকে জানান, প্রতিবছর বর্ষাকালীন সময়ে চন্দনাইশের বড়পাড়া এলাকার কিছুটা অংশ পানির নিচে থাকে। আমরা রাস্তাটিকে উঁচু করার জন্য মন্ত্রণালয়ে বলে রেখেছি। এমনকি এটা নিয়ে ডিজাইন পর্যন্ত করা হয়েছে। সিটপ্ল্যান অনুযায়ী রাস্তাটিকে উঁচু করার জন্য প্রয়োজনে আবারো জানাবো।