চন্দনাইশে লেবুর বাম্পার ফলন

258

দক্ষিণ চট্টগ্রামের লেবুর সুখ্যাতি সর্বত্র। চলতি মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লেবুর ভালো ফলন হয়েছে। খরা রোদে তাপদ্রাহে যখন সাধারণ মানুষ অতিষ্ট, তখন মৌসুমের ফল লেবুর চাহিদা প্রচুর। সে সাথে লেবুর দাম ভালো থাকায় কৃষকেরা বেজায় খুশি। প্রচুর গরমের কারণে লেবু বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, পটিয়ার পাহাড়ী এলাকায় প্রতি বছর লেবুর চাষ হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় লেবুর ফলন ভালো হয়েছে। সে সাথে লেবুর দাম চড়া থাকায় কৃষকদের খরচ পুষিয়ে লাভের মুখ দেখছেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা। জনপ্রিয় ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু ফলটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্য বহন করে। ফলটি মূলত উৎপাদিত হয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, চন্দনাইশ, বোয়ালখালী, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, লোহাগাড়া ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায়। এছাড়া পটিয়ার খরনা, কচুয়াই, হাইদগাঁও, কেলিশহর ইউনিয়নের পূর্বাংশে পাহাড় জুড়ে হয়ে থাকে লেবুর চাষ। একইভাবে চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়ন জুড়ে, দোহাজারী ইউনিয়নের লালুটিয়া, রায়জোয়ারা, হাশিমপুরের ছৈয়দাবাদ, কাঞ্চনাবাদের লর্ড এলাহাবাদ সহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা জুড়ে প্রচুর লেবুর বাগান রয়েছে এবং সেখানে প্রতি বছরই প্রচুর পরিমাণে লেবুর চাষ হয়ে থাকে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে লেবুর ফুল আসে এবং জৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ মাস জুড়ে ফলন পাওয়া যায়। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লেবুর ফলন ভালো হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার কমর মুন্সিরহাট, চন্দনাইশের রওশনহাট, খানহাট, বাগিচাহাট, বাদামতল, হাজারীহাট, সাতকানিয়ার কেরানীহাট, বাঁশখালীর কালিপুর, জলদি বাজার লেবু বিক্রির প্রধান কেন্দ্রস্থল। লেবু চাষীদের সূত্রে জানা যায়, লেবু সাধারণত ৫ জাতের হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে-কাগজী লেবু, পাতী, এলাচী, বাতাবী ও নতুন জাতের হাইব্রীড সিডলেস নামে একটি লেবু চাষও বর্তমানে হচ্ছে। কাগজী লেবু ছোট আকৃতির হয়। চট্টগ্রাম ছাড়া আর কোথাও এত বিপুল পরিমাণ লেবু উৎপাদন হয় না। স্থানীয়ভাবে লেবুর দুই টুকরি বা ঝুড়ি নিলে এক ভার হয়। সে রকম প্রতি ভারে ৪শ থেকে ৬শ পর্যন্ত লেবু থাকে। বর্তমানে প্রতি ভার লেবুর দাম ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চলতি বছর লেবুর ফলন ভালো হওয়ায় রমজান মাসের চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত লেবুর প্রয়োজনীয়তা মিটিয়ে গ্রাহকদের চাহিদা পূরণে সমর্থ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে ৩-৪ গুণ দাম বেশি পাচ্ছে কৃষকেরা। ফলে কৃষকেরা বেজায় খুশি। তারা বললেন, প্রতিদিন প্রচুর লেবুও বিক্রি হচ্ছে। ভরা মৌসুমে এবং বর্ষা শুরু হলেও অতিরিক্ত বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এবং রমজান মাস হওয়ায় লেবুর চাহিদাও প্রচুর। ১টি লেবু খুচরা মূল্যে প্রকৃতি ভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচাইতে বেশি লেবুর চাষ হয় চন্দনাইশ ও পটিয়াতে। পটিয়া বন বিভাগের আওতায় প্রায় ১০ হাজার একর বনভূমি থাকলেও এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার একর বন ভূমিতে লেবুর চাষ হয়। চন্দনাইশের হাশিমপুর, ধোপাছড়ি, লালুটিয়া, রায়জোয়ারা, কাঞ্চননগর এলাকায় বেশকিছু লেবুর বাগান রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমান লেবু উৎপাদিত হয়ে থাকে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের উৎপাদিত এ লেবু ঢাকার কাওরানবাজার, সেনবাজার সহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় বাজারে সরবরাহ করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে লেবু বাজারজাত হয়। ট্রাক, বাস এবং ট্রেন হচ্ছে লেবু পরিবহনের মাধ্যম। অনেক সময় বিভিন্ন স্থানে দ্রুত লেবু সরবরাহে বিলম্ব হলে শত শত মেট্রিক টন লেবু পঁচে-গলে নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে এ অঞ্চলের লেবু ও পেয়ারা সংরক্ষণে বিভিন্ন সময়ে হিমাগার স্থাপনের দাবী উঠলেও রহস্যজক কারণে তা আজও উপেক্ষিত। ফলে লেবুর ফলন হলেও এর সুফল পাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। ৫ জাতের লেবুর মধ্যে কাগজী লেবুর গুনগতমান উন্নত। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে দিন দিন এর উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। চন্দনাইশ, পটিয়া সহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাজার হাজার একর বনভূমি মাত্র ৪ থেকে ৫ হাজার ভূমিতে লেবু চাষ হচ্ছে। অন্য শত একর পরিত্যক্ত ভুমি যদি লেবু চাষের আওতায় আনা হয়, তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণ লেবু বিদেশে রপ্তানী করা যেত। স্থানীয় চাষীদের মতে: সবজি রাখার জন্য হিমাগার না থাকায় উৎপাদিত লেবুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি সংরক্ষণ করতে না পারার কারণে অনেক সময় কম দামে শাকসবজি বিক্রি করতে হয়। লেবু চাষীদের মতে চলতি বছর প্রতিটি বাগান থেকে গড়ে কমপক্ষে ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকার লেবু বিক্রি করা সম্ভব হবে। কোটি কোটি টাকার লেবু উৎপাদন হলেও এখানকার লেবু চাষীরা সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ের কোন সাহায্য সহযোগিতা পান না বলে অভিযোগ করেন। এমনকি লেবু চাষীদের ব্যাপারে কোন তথ্য ও সরকারী কোন দপ্তরে নেই।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে সব রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে সব রকমের প্রতিকুলতা পাশ কাটিয়ে বছরের পর বছর লেবু উৎপাদন করে কোটি কোটি টাকা আয় করলেও এখানকার লেবু চাষীদের সমস্যা সমাধানে কেউ এগিয়ে আসেনি। তাছাড়া তাদেরকে লেবু চাষে আধুনিক প্রশিক্ষণ সহ সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এ উৎপাদন সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং লেবু রপ্তানী করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে অভিমত মত ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞ মহল। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি সরকার বলেছেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লেবুর ফলন ভালো হয়েছে। সে সাথে গরমের কারণে দাম ভালো থাকায় কৃষকেরা উপকৃত হয়েছে।