চন্দনাইশে প্রচণ্ড শীতকে উপেক্ষা করে বোরো ধান রোপণ শুরু

60

শস্য ভাণ্ডার নামে খ্যাত দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রতিটি বিলে শুরু হয়েছে বোরো ধান রোপণ ও বীজতলা তৈরির কাজ। উত্তরের হিমেল হাওয়া, হাড়কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করেই বোরো ধান রোপণ ও বীজতলা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার কৃষকরা। উপজেলার ২টি পৌরসভা, ৮টি ইউনিয়নের ৩৩ হাজার কৃষক পরিবারে চলছে বোরো ধান রোপণ ও বীজতলা তৈরির প্রস্তুতি। উপজেলার বিভিন্ন ধানী জমিতে চলছে বোরো ধানের চারা রোপণ ও বীজতলা তৈরির কাজ। প্রচণ্ড শীত আর ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা তৈরি করা থেকে শুরু করে চারা রোপণ করা পর্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যেই সময় কাটছে চাষিদের।
ইতোমধ্যে নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও বোরো চারা রোপণের জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন কৃষকরা। চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকায় জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করে সেচ দিয়ে ধানের চারা রোপণের কাজ চলছে। কোন কোন জমিতে চলছে চাষ, বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে চারা, চলছে রোপণ সব মিলিয়ে মাঠে মাঠে ধুম পড়েছে বোরো ধান লাগানোর।
কৃষকরা বলছেন, এক ফসল বিক্রি করে অন্য ফসল আবাদ করা হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তবে ধান চাষে বার বার লোকসান হওয়ায় কৃষকরা ধান চাষ থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। লোকসানের কারণে উপজেলার ৩৩ হাজার কৃষক পরিবারের মধ্যে অনেকে বিগত মৌসুমে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে জানান। বর্তমানে অনেক কৃষক পাইকারী হারে কৃষিজমিগুলো লীজ দিয়ে তৈরি করছেন মাছ চাষের পুকুর। এতে করে স্থায়ী ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তিন ফসলী কৃষি জমি। বাজারে এখন ধানের দাম কম। অন্যদিকে, আবাদের উপকরণের দাম বাড়তি। ফলে চাষীরা নিজেরাও আবাদের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।
অপরদিকে, ধানের দাম না থাকায় সবচেয়ে বিপাকে আছেন বর্গাচাষীরা। তারা আরোও বলেন, লাগাতার ধানের দাম না থাকার কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার যতদিন যাচ্ছে ফসল উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে শ্রমিকের মজুরি প্রতিদিন সর্বনিম্ন সাড়ে ৬’শ টাকার ওপরে দিতে হচ্ছে। ডিএপি সার প্রতি বস্তা ৭’শ ৮০ থেকে ৭’শ ৯০ টাকা। আমদানি কম হলে দাম বেড়ে যায়। ইউরিয়া সার বস্তা প্রতি ৮’শ, এমওপি ৭’শ ৫০টাকা। এছাড়াও রয়েছে অন্যান্য খরচ। এ সারগুলোর দাম কমলে উৎপাদন খরচ কমতো। এছাড়া কীটনাশকের দাম কখন বাড়ে আর কখন কমে তা বলা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রাণী সরকার বলেছেন, কৃষকদের বোরো ধানের আবাদ করাকালে পর্যাপ্ত সহযোগিতা দেয়া হবে।
গত বছর চন্দনাইশে বোরো ধানের লক্ষমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৫’শ হেক্টর। অর্জন হয়েছিল ৩ হাজার ৫’শ ৫ হেক্টর। তিনি এবার আরো বেশি লক্ষমাত্রা অর্জনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের নির্দেশনা ও পরামর্শক্রমে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে ঘুরে ঘুরে নির্বিঘ্নে বোরো ধান চাষে বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন বোরো ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষ, বীজ শোধন, আদর্শ বীজতলা, তীব্র শৈত্য প্রবাহে বোরো বীজতলার যত্ন ইত্যাদি গ্রহণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন।