চন্দনাইশে গবাদি পশু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত, আতঙ্কে খামারীরা

168

চন্দনাইশে হঠাৎ করে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গবাদি পশুর ভাইরাস জনিত চর্মরোগ লাম্পি স্কিন ডিজিজের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে চরম আতঙ্কিত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা। জানা যায়, এ রোগের সুনির্দিষ্ট প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন না থাকায় প্রাদুর্ভাবের শঙ্কা আরো বাড়ছে। তবে শঙ্কিত না হয়ে খামারিদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরতরা।
ইতোমধ্যে এ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ নিবারনে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে লিপলেট বিতরণ করা হচ্ছে। সে সাথে আক্রান্ত গবাদি পশুকে প্রতিদিন ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে বলে জানান। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথমে পশুর পা ফুলে যায়, শরীরে জ্বর হয়, গরুর চামড়ার উপরি অংশে টিউমার জাতীয় উপসর্গ ও বসন্তের মতো গুটি গুটি দেখা যায়। এরপর দু-একদিনের মধ্যেই গরুর শরীর জুড়েই গুটি গুটি হয়ে ঘা-এ পরিণত হয়। এ সময় গরুর শরীরে ১০৪ থেকে ১০৬ ডিগ্রী তাপমাত্রার জ্বর দেখা দেয়, গরু খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয়। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হতে দেখা যায়। ক্ষতস্থান থেকে মাংস খুলে-খুলে পড়তে থাকে। ফলে চন্দনাইশের খামারীরা আতংকে রয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগটি প্রথম ১৯২৯ সালে জাম্বিয়াতে দেখা দেয়। পরে আফ্রিকা মহাদেশের সর্বত্রে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসম‚হে এবং ২০১৪-২০১৫ সালে আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, কাজাকিস্থানসহ আশেপাশের দেশসম‚হে এ রোগ দেখা দেয়। ২০১৬ সালে গ্রীস, সাইপ্রাস, বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, কসোভোসহ আশেপাশের দেশসম‚হে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৯ সালে চীন ও ভারতে আক্রান্তের পরেই বাংলাদেশে এ রোগটি অতি সম্প্রতি প্রথম বারের মতো দেখা দেয়। এটি ভাইরাস জনিত চর্মরোগ। যা শুধুমাত্র গরু, মহিষকে আক্রান্ত করে। এ রোগ মশা, মাছি, আটালি, আক্রান্ত পশুর লালা, নাক-চোখের ডিসচার্জ, ষাড়ের বীর্য, আক্রান্ত গরু-মহিষের দুধ এবং ব্যবহারিত ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মধ্যমে ছড়ায়। অনুক‚ল পরিবেশে এ ভাইরাস ছয় মাস পর্যন্ত জীবিত থাকে। ভাইরাস জনিত এ চর্মরোগে শুধুমাত্র গরু-মহিষ আক্রান্ত হয়। এ রোগ থেকে বাঁচার জন্য গবাদি পশুকে মশা-মাছি মুক্ত রাখা, খামার পরিচ্ছন্ন রাখা, সময়মত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা দেয়া।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত গবাদিপশু দুর্বল হয়ে ওজন কমে যায়। গাভী গরুর দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়, চামড়ার গুনগতমান নষ্ট হয়ে যায়। তারা জানান, ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজে উপজেলায় ২০টি’র অধিক গবাদিপশু আক্রান্ত হয়েছে। এ সকল পশুকে চিকিৎসা দেয়ার পর ভালো হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন। এ রোগে কোথাও গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। লোকজনকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ এবং ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ এ রোগে শুধুমাত্র গরু-মহিষ আক্রান্ত হয় মানুষ আক্রান্ত হয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম। এ রোগে আক্রান্ত হলে ডেঙ্গ জ্বরের মত শুরুতেই প্রচন্ড জ্বর হয়, পুরো শরীর ফুলে যায়, স্বাভাবিকভাবে রোগ সারতে ২০ থেকে ২৫ দিন লাগে। যেহেতু মশার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায় সেহেতু মশা, মাছি বা পোকা মাকড় যাতে গবাদি পশুর উপর বসতে না পারে সেজন্য সর্তক থাকতে হবে। প্রয়োজনে মশারি টাঙ্গানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ওষুধ খাওয়ানোর পর রোগ না সারলে অ্যান্টি অ্যালার্জিক দেয়া আবশ্যক।