চন্দনাইশের ‘কাঞ্চন পেয়ারা’ রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও

39

মো. শাহাদাত হোসেন, চন্দনাইশ

চন্দনাইশের কাঞ্চন পেয়ারা চট্টগ্রামের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পেয়ারার হাট বসে চন্দনাইশের রৌশনহাট, গাছবাড়িয়া রেল স্টেশন। সারাদেশে বিখ্যাত চন্দনাইশের কাঞ্চন পেয়ারা। মিষ্টি বেশি, বিচির সংখ্যা তুলনামূলক কম। পাকলে ভেতরে কোনোটি সাদা, কোনোটি হলুদ, কোনোটি লালচে। প্রতি মৌসুমেই বারি, বাউ, ইপসা, কাজী ও কাঞ্চনসহ ১৩ জাতের ছোট-বড়, সবুজ, আধা-পাকা পেয়ারার বাম্পার ফলন হয় চন্দনাইশের পাহাড়ি এলাকায়। বংশ পরম্পরায় পেয়ারা চাষ ও বিক্রিতে নিয়োজিত এ অঞ্চলের অর্ধলক্ষ মানুষ। পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপাদিত এ পেয়ারা বেপারিদের হাত ঘুরে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এছাড়া, দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও জনপ্রিয় ফল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। চন্দনাইশের পেয়ারা চাষে ব্যবহার করতে হয় না কোন ওষধ বা রাসায়নিক পদার্থ। শুধুমাত্র বছরে একবার গাছের ডাল-পালা ছেঁটে দিয়েই বাগানের দায়িত্ব শেষ করা হয়। সাধারণত চৈত্র-বৈশাখ মাসে গাছে ফুল আসে। জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস পর্যন্ত বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করা যায়। চন্দনাইশের কাঞ্চন পেয়ারা সর্বোচ্চ ওজনে ১ কেজি ও সর্বনিম্ন ২৫ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রাকৃতিকভাবেই এই পেয়ারা স্বাদে সুমিষ্ট, ঘ্রাণে মোহনীয় এবং দেখতে খুব সুন্দর। একেকটি গাছ থেকে ৫০০ থেকে ৭০০ পেয়ারা পাওয়া যায়। প্রতি মৌসুমে দক্ষিণ চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বাগানে উৎপাদিত হয় ২০-৩০ কোটি টাকার পেয়ারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়। ভোরেই বাগানগুলো হয়ে ওঠে সরব। পেয়ারা সংগ্রহে নেমে পড়েন শ্রমিকরা। ভোরের আলো না ফুটতেই পাহাড় থেকে দল বেঁধে পেয়ারা নিয়ে বাজারে ফিরছেন চাষিরা। লাল কাপড়ে মোড়ানো পুঁটলি বেঁধে আনা হচ্ছে তিন থেকে চার মাইল পায়ে হেঁটে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন বিভিন্ন পয়েন্টে। চন্দনাইশের রৌশনহাট, বাদামতল, খাঁনহাট রেল স্টেশন, বাগিচাহাট এলাকায় ও খোলা জায়গায় বিক্রি হয় চন্দনাইশের পেয়ারা। তবে সবচেয়ে বেশি পেয়ারা বেচাকেনা হয় চন্দনাইশ উপজেলার রওশন হাটে। এখানে উৎপাদিত পেয়ারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে রপ্তানি করা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইন ও দুবাইসহ বেশ কয়েকটি দেশে। পেয়ারা চাষীরা জানান, দেশে দুই জাতের পেয়ারা রয়েছে। একটি কাজী পেয়ারা আর অন্যটি কাঞ্চন পেয়ারা। কাজী পেয়ারা আকারে বড় হলেও স্বাদ একটু কম। অন্যদিকে কাঞ্চন পেয়ারার আকার ছোট হলেও স্বাদ ও পুষ্টিতে ভরপুর। পেয়ারা চাষীদের রয়েছে বেশ কিছু সমস্যা পেয়ারা বিক্রির জন্য কোন নির্দিষ্ট স্থান নেই। নেই চাষীরা আরোও জানান, চলতি মৌসুমে বৃষ্টি কম হওয়ায় পেয়ারার ফলন তেমন ভাল হয়নি। বর্তমানে সংখ্য ভেদে এক ভার পেয়ারা ১ হাজার থেকে ১৪শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগামী আরো দুইমাস চলবে পেয়ারার মৌসুম।