চট্টলবীর পুত্র : শিক্ষা ও শিক্ষা উপমন্ত্রী

136

সাবেক মেয়র, চট্টলবীর আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সুযোগ্যপুত্র চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষাউপমন্ত্রী হওয়ায় চট্টগ্রামের মানুষ আনন্দিত। তিনি ছিলেন লন্ডনের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অব ইকোনমিক্সের ছাত্র এবং ব্যারিস্টার ডিগ্রি অধিকারী। পরিচ্ছন্ন রাজনীতির পথিকৃৎ, সজ্জন, ভদ্র, রুচিশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। চট্টলবীর পুত্র হিসেবে নয়, আজ তিনি নিজ গুণেও গুণান্বিত। শিক্ষাউপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেলের উদ্দেশ্যে দু’একটি কথা লিখতে চাই।

মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী! আপনি একুশ শতকের তারুণ্যের প্রতিনিধি। আপনি একুশ শতকের তারুণ্যের শক্তিকে জাগাতে পারবেন। তারুণ্যের উয়িকন্যাসকে উয়িনন্যাসে পরিণত করা আপনার দ্বারা সম্ভব। জীবন মূল্যবান হয়, মানুষ সম্পদে পরিণত হয়, যখন জীবনের সাথে শিক্ষার সমন্বয় ঘটে। এই সমন্বয় শিল্পী হওয়ার যোগ্যতা মানসিকতা চিন্তা-চেতনা আপনার আছে। আপনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার সোনার মানুষ। মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সোনা-রূপার খনির মতো মানুষও খনির তুল্য। (মুসলিম শরীফ)
পৃথিবী বিখ্যাত ‘টাইম’ ম্যাগাজিন প্রচ্ছদ করেছে, একুশ শতকের সম্পদ কী ? একুশ শতকের সম্পদ সোনা-রূপা-ডায়মন্ডের খনি নয়, বিমান-রকেট-গাড়ির ফ্যাক্টরি নয়, একুশ শতকের সম্পদ হলো ‘জ্ঞান’।
প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘জ্ঞানের চেয়ে বড় সম্পদ নেই, মূর্খতার চেয়ে বড় কোন দরিদ্রতা নেই’। আপনার হাতে আছে পৃথিবীর সেরা সম্পদ। আপনি সে সম্পদকে ছড়িয়ে দিয়ে জাতিকে মহাসম্পদ পরিণত করতে পারবেন। সমাজ পরিবর্তনের জন্য আগে নিজেই পরিবর্তন হতে হয়। এ পৃথিবী নামক গ্রহটি যাঁরা পরিবর্তন করেছেন তাঁরা আগে নিজেরাই পরিবর্তন হয়েছে। আপনি আমাদের সামনে দৃপ্ত পায়ে হেঁটে কীভাবে পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজকে তৈরি করেছেন তা আমরা দেখেছি। আপনি ঝযড়রিহম চবড়ঢ়ষব নন, উড়রহম চবড়ঢ়ষব. আপনি পারবেন শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে।
বিশ্ব আজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিকে, অথচ বাংলাদেশ দ্রুত বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা কমছে। নতুন প্রজন্ম যেন আজ শুধু বিবিএ জেনারেশন না হয়, সেদিকে সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করছি। বাংলাদেশ চার কোটি ছাত্র-ছাত্রী আছে, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের জনসংখ্যা ৩০-৩৫ লক্ষের নিচে। চার কোটি ছাত্র-ছাত্রীদের সঠিক শিক্ষা দিতে পারলে দেশটি এমনিই দাঁড়িয়ে যাবে। জাতিকে সঠিক শিক্ষায় এগিয়ে নেওয়ার যোগ্যতা আপনার আছে, তাই বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার হাতে অর্পণ করেছেন শিক্ষাউপমন্ত্রীর দায়িত্ব।
আজকের ছাত্র আগামীর সম্পদ। এই সম্পদ গড়ার মূল্যবান সময় বর্তমান। বর্তমান আপনার মত শিক্ষাবান্ধব ব্যক্তি শিক্ষাউপমন্ত্রী, এটি আমাদের জন্য বড় সম্পদ। দরিদ্র্যতার সংজ্ঞা এমন বদলে গেছে। আগে যার টাকা ছিল না সে দরিদ্র। বর্তমান যাদের শিক্ষা নেই, চিকিৎসা নেই, সংস্কৃতি নেই তারা দরিদ্র।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওয়াহের লাল নেহেরু বলতেন, ‘আগামী ভারত কেমন হবে তা ক্লাসরুমে নির্ধারণ হয়ে যায়’। আপনি সে ক্লাসরুমের এখন দক্ষ একজন অভিভাবক। আপনি জানেন, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী শিক্ষাবিদ কৈলাস সত্যার্থী ৩১ মে ২০১৫ সালে ঢাকায় এসে বলে গেছেন, ‘শিক্ষাখাতে এক ডলার ব্যয় করলে ২০ বছর পর সেখান থেকে ১৫ গুণ রিটার্ন আসে। অন্য কিছুতে বিনিয়োগ করলে এত বেশি রিটার্ন আসে না’। মানব সম্পদের ৮৫ ভাগ আসে দক্ষ মানব সম্পদ হতে। বাকি ১৫ ভাগ আসে অন্যান্য খাত হতে। মানবকে সম্পদে পরিণত করতে শিক্ষার প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে সন্তানের মত পছন্দ করেন, এবং পছন্দ করার মত গুণ আপনার মধ্যে যথেষ্ট আছে। আমার বিশ্বাস আপনি হবেন সেরা বিনিয়োগের সেরা কৃতি সন্তান। আপনি পারবেন জীবনের জন্য শিক্ষা আর জীবিকার জন্য প্রশিক্ষণকে এগিয়ে নিতে।
পৃথিবীর খ্যাতিমান উদ্যোক্তা ক্যামেরন হ্যারল্ডের একটি কথা উল্লেখ করছি, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে আমাদের স্কুলগুলো শিখায় যে, তোমরা চিকিৎসক হও, প্রকৌশলী হও। এতে আমরা অনেক সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাকে হারিয়ে ফেলি। নবপ্রজন্মকে যদি আমরা উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করি তাহলে মনে হয় বেকার সমস্যার কথা আমাদের আর চিন্তা করতে হবে না।
যুগান্তকারী আবিষ্কারগুলোর জন্য আমাদের অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। কম্পিউটার টিভি, রেডিও, বিদ্যুৎ, প্লেইন ইত্যাদি পাওয়ার জন্য হাজার হাজার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সামনের দিনের আবিষ্কারগুলোর জন্য আমাদের আর অপেক্ষা করতে হবে না। ডিজিটাল জগতের ছাত্র-ছাত্রীরাই স্বপ্রণোদিত হবে একের পর এক আবিষ্কার করবে। শুধু দরকার ছিল আপনার মত ডিজিটাল যুগের ভার্চুয়াল নেতা।
ব্রিজ নির্মাণ করতে সেতুমন্ত্রী, রোড করতে যোগাযোগমন্ত্রী, শিল্প প্রতিষ্ঠান দেখতে শিল্পমন্ত্রীর মত দায়িত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে দেননি, নিউক্লিয়ার শক্তির চেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, জাতিকে শিক্ষিত করা, উন্নত করা, এ লক্ষ্যে আপনার হাতে অর্পণ করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব। আপনি উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথে গণমাধ্যমে ঘোষণা করেছেন, ‘শিক্ষাকে কল্যাণমুখী করতে সচেষ্ট থাকবেন। সরকারের শিক্ষাবান্ধব কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করবেন। নির্বাচনী ইশতিহারে ঘোষিত সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিবেন’।
আসলে আপনি পারবেন আপনার দেওয়া কথা রাখতে। কারণ তরুণ ও যুবক বয়সে দেশ ও জাতিকে গঠনে দায়িত্ব পালনের সেরা সময়। এ সময় গায়ে থাকে শক্তি আর মনে থাকে জোর ও সাহস। সে শক্তি ও সাহস কাজে লাগিয়ে শিক্ষা উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের দায়িত্ব অর্পণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ বলেছিলেন, ‘আমাকে দশজন যুবক দাও, আমি সারা বিশ্ব তোলপাড় করে দেব’। মাহাথির মোহাম্মদ বলেছিলেন, আমি দশ যুবক পেলে মালয়ীদের সাথে নিয়ে বিশ্ব জয় করে ফেলবো’। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যায় না, ধার করা যায় না, টাকা দিয়ে কেনা যায় না, জমা রাখা যায় না, তার নাম ‘সময়’। সময়ের মধ্যে সেরা সময় ‘তারুণ্য’। তাই দেশ গড়তে আজ তরুণ ও যুবক নেতৃত্ব দরকার। মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী তারুণ্যের দেশপ্রেমিক প্রতিনিধি। তারুণ্যের শক্তি দিয়ে সরকারের ঘোষিত কর্মসূচি এগিয়ে নিবেন।
মহাবিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান, সবচেয়ে বিস্ময়কর, সবচেয়ে রহস্যময় জিনিস মানব ‘মস্তিষ্ক’। দশ হাজার কোটি নিউরনের দেড় লিটার ওজনের মস্তিষ্ককে সৃজনশীলভাবে ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে যাবে। সৃজনশীলভাবে মানব মস্তিষ্ক ব্যবহারই আজ আমাদের মূল কাজ। এই কাজের কান্ডারির ভূমিকা পালন করতে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল যোগ্য ব্যক্তি বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তাঁকে অভিনন্দন জানাই, সফলতা কামনা করি তাঁর জীবন ও দায়িত্বের।

লেখক : কলাম লেখক ও রাজনীতিক