চট্টগ্রাম হাজী ক্যাম্পের কাজ দ্রুত শুরু করা হোক

38

চট্টগ্রাম হাজী ক্যাম্প দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী হাজী ক্যাম্প ছিল। ৫ হাজার হজ যাত্রীর ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পাহাড়তলীর অন্তর্গত চট্টগ্রাম হাজী ক্যাম্প ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের প্রথম ও প্রাচীন এ হাজী ক্যাম্পটি বর্তমানে পরিত্যক্ত। হজ ইসলাম ধর্মের পাঁচ স্তম্ভের একটি অপরিহার্য স্তম্ভ। বর্তমানে দেশের হজ যাত্রীদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে দেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়। প্রতিবছর দেশের লাখো বিত্তবান নর-নারী হজব্রত উদযাপনে পবিত্র মক্কা নগরীতে গমন করে। দেশের হজ যাত্রীদের নিকট হতে সরকার একটি মোটা অংকের টাকা পেয়ে থাকে, হজে যাত্রীরা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলীতে স্থাপিত চট্টগ্রাম হাজী ক্যাম্প দীর্ঘদিন হতে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে হজব্রত পালনেচ্ছু যাত্রীদের সেবা-পরিসেবার কাজ করতো। ৯ দশমিক ৩৫ একর জায়গাজুড়ে ঐতিহ্যবাহী হাজী ক্যাম্পটি অবহেলায় পরিত্যক্ত ঘোষণা মুসলিম প্রধান দেশের জন্য অপমানজনক ও লজ্জার বিষয়।
দেশে রাজধানী ঢাকার পরই বন্দর নগরী চট্টগ্রামের গুরুত্ব। বর্তমান সরকার চট্টগ্রাম মহানগরী তথা সমগ্র চট্টগ্রামের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামকে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি করেছেন। তিনি চট্টগ্রাম হতে রেল যোগাযোগ কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজ দ্রæত এগিয়ে নিচ্ছেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রাজধানী ঢাকা হতে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগের টেকসই নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল স্থাপনের কাজও শেষের পথে। বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম বিশে^ তথা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষ মর্যাদায় আসীন হবে। চট্টগ্রামের মানুষ দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে ঐতিহ্যগতভাবে এগিয়ে। আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামের মর্যাদাকে সমগ্র দেশে উচ্চকৃত করে আছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় আশিভাগ আমদানী-রপ্তানি চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করেই হয়ে থাকে। এর ফলে দেশের স্থায়ী রাজস্ব আয়ের সিংহভাগ চট্টগ্রাম বন্দর হতেই পাওয়া যায়। যে কারণে সরকার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছেন। চট্টগ্রামে শিল্পনগরী সম্প্রসারণ এবং মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর প্রতিষ্ঠা করেছেন। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম হতে সরকারের রাজস্ব আয় ক্রমে আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। সে তুলনায় চট্টগ্রাম আরো অধিক পরিমাণ উন্নয়ন দাবি করতে পারে সরকারের কাছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, চট্টগ্রাম হতে টি বোর্ড সরানোর চেষ্টা হয়েছিল। অবশেষে টি বোর্ড চট্টগ্রামেই রাখা হয়েছে। ঢাকার হাজী ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার পর হতে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হাজী ক্যাম্প অবহেলায় অনাদরে পরিত্যক্ত স্থাপনায় রূপান্তর হলো। বিষয়টি চট্টগ্রামবাসীর জন্য খুবই দুঃখজনক ও লজ্জার।
চট্টগ্রামের মানুষ স্বভাবতই অধিকাংশ ব্যবসায়ী, সে কারণে দেশ হতে যত হাজী হজ করতে যায় তার মধ্যে অধিকাংশ চট্টগ্রামের লোক। অথচ চট্টগ্রাম হাজী ক্যাম্পটি সরকারি অনাদর অবহেলায় পরিত্যক্ত হয়ে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হওয়ার কথা দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ১৯৮৫ ইংরেজি হতে চট্টগ্রাম হাজী ক্যাম্পটি অকেজো হয়ে পড়েছে, এরপর হাজী ক্যাম্পটি মন্ত্রণালয়ে পুনঃনির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। সরকার হাজী ক্যাম্প সংস্কার কিংবা পুনঃনির্মাণের যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল তা বিগত ৭ বছরেও বাস্তবায়নের কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায় বর্তমানে ভুতুড়ে হাজী ক্যাম্প বখাটে ও মাদকসেবীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চট্টগ্রামবাসীর দাবি, চট্টগ্রামের ঐতিহ্য রক্ষায় এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের হাজীদের কল্যাণার্থে চট্টগ্রাম হাজী ক্যাম্পটি আধুনিক স্মার্ট হাজী ক্যাম্প হিসাবে পুনঃনির্মাণের ব্যবস্থা করা হোক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম হাজী ক্যাম্পকে আন্তরিকভাবে সম্পৃক্ত করবেন, এমন আশা সমগ্র চট্টগ্রামবাসীর।