চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন মার্চের শেষে

513

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে মাঠের আলোচনা শুরু হয়েছে মাস কয়েক আগে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সে আলোচনা জোর পেয়েছে আরো। আগামী বছরের মার্চের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। চাওয়া হয়েছে ভোটকেন্দ্রের তালিকা। ইতোমধ্যে আটটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে বিদ্যমান ভোটকেন্দ্র যাচাই-বাছাই কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, মার্চে নির্বাচন হলে ফেব্রূয়ারির মাঝামাঝি সময়ে চসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইনে বলা আছে, নির্বাচিত পরিষদের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম সভার পাঁচ বছর মেয়াদ পূরণের দিন থেকে ১৮০ দিন আগে পর্যন্ত যে কোনোদিন নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান পূর্বদেশকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে নগরীর ভোটকেন্দ্রগুলোর অবস্থা নির্ণয়ের নির্দেশনা পেয়েছি। সে নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের ভোটকেন্দ্রগুলোর তালিকা প্রস্তুত করে এবং তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে পরিবেশ ও পরিস্থিতি ঠিক আছে কিনা জানাতে বলেছি। এক্ষেত্রে অসঙ্গতি থাকা ভোটকেন্দ্রগুলো বাদ দিয়ে নতুন কেন্দ্রের প্রস্তাব পাঠানো হবে। চসিক নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই এসব কাজ করা হচ্ছে। ভোটার হালনাগাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হলেই ভোটার ও ভোটকেন্দ্র ধরে পুরোদমে কাজ করা হবে।’
সূত্র জানায়, গত অক্টোবরেই চসিক নির্বাচনের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সেসময় ভোটকেন্দ্রগুলোর বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। নভেম্বর মাসের শেষদিকে বিদ্যমান ভোটকেন্দ্রের তালিকা ইসিতে পাঠানো হয়। পরে বিদ্যমান ভোটকেন্দ্রগুলোর পরিবেশ সম্পর্কে আটটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে মতামত চেয়েছিল ইসি। এরমধ্যে ভোটকেন্দ্র ভবনের ধরন পাকা, কাঁচা এবং কত তলা বিশিষ্ট, দুরত্ব ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, পানি, বিদ্যুৎ ও টয়লেট ব্যবস্থাপনা আছে কিনা, কেন্দ্রের সামনে খোলা জায়গা ও মাঠ আছে কিনা, মেরামতের প্রয়োজন আছে কিনা, বিদ্যমান কেন্দ্র ব্যতীত উক্ত স্থানে নতুন কোনো স্থাপনা, প্রতিষ্ঠান আছে কিনা, থাকলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম, নতুন কেন্দ্রের প্রস্তাবনা আছে কিনা? থাকলে কেন্দ্রের নাম ও অবস্থান, নতুন কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন হলে প্রস্তাবনাসহ যৌক্তিকতা ছক আকারে তুলে ধরতে নির্দেশনা দেয় নির্বাচন কমিশন। একইসাথে গত ২১ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম প্রেরিত এক চিঠিতে যেসব প্রতিষ্ঠান ভোটগ্রহণের উপযোগী নয় সেগুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে পত্র পাঠানোর নির্দেশনাও দেয়া হয়।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগরের উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচনে জয়ী হয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে আগেভাগে দায়িত্ব নিলেও ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আজম নাছির উদ্দীনসহ কাউন্সিলররা দায়িত্ব নিয়ে প্রথম সভা করেন। সে হিসেবে ২০২০ সালের ৫ আগস্টের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন করার পক্ষে ইসি। এপ্রিলে রমজান হওয়ায় মার্চের মধ্যেই নির্বাচন শেষ করতে চান তাঁরা। এরমধ্যে মার্চ মাস থেকে শুরু হতে যাওয়া মুজিববর্ষের বিষয়টিও মাথায় রেখেছে কমিশন। তবে সিদ্ধান্ত মিললেই নির্বাচনের পুরোপুরি প্রস্তুতি রাখার পক্ষে আছে ইসি।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৮ লক্ষ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার নয় লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৩ জন এবং নারী ভোটার আট লক্ষ ৭৬ হাজার ৩৯৬ জন। নির্বাচন কর্মকর্তাদের ধারণা, ১০ শতাংশ হারে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ ভোটার এবার বাড়তে পারে। গত চসিক নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ৭১৯টি।
চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন খান পূর্বদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচন শেষ হলেই আমরা জোরেশোরে চসিক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিব। এখন ভোটকেন্দ্রগুলো নিয়ে কিছু কাজ হচ্ছে। ফেব্রূয়ারির মাঝামাঝি সময়ে তফসিল ঘোষণার পর মার্চের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে ধারণা করছি। পরীক্ষা, রমজান ও বর্ষার বিষয় মাথায় রেখে মার্চের মধ্যেই চসিক নির্বাচন সম্পন্ন করতেই যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ইসি।’