‘চট্টগ্রাম সবার আগে’ আবারও প্রমাণ করল চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ

56

 

‘চট্টগ্রাম সবার আগে’ কথাটি মহাত্মাগান্ধীর। বিশ শতকের তৃতীয় দশকে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এক কর্মসূচিতে চট্টগ্রামে এসে স্বাধীনতাপ্রিয় চট্টগ্রামবাসীর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রতি জোরালো সমর্থন দেখে একথাটি বলেছিলেন। তার একথাটি রাজনৈতিক হলেও বাস্তবে এ অঞ্চলের সামগ্রিকতায় এ কথাটির বাস্তবতার প্রতিফলন দেখা যায় ঐতিহাসিকভাবে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, ’৬৬ ছয়দফা, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুর প্রথম প্রহরে চট্টগ্রাম বেতার থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সম্প্রচারসহ পরবর্তী স্বৈরচার বিরোধী আন্দোলনসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনেতিক উন্নয়নের যোগানদাতা এ চট্টগ্রাম। শিক্ষা ও সংস্কৃতিতেও এ চট্টগ্রাম সবসময় সবার আগে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের স্বনির্ভরতা এবং এ পরিষদের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলার গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নের যে কর্মযজ্ঞ, তা দেশের জেলা পরিষদের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। এজন্য দৈনিক পূর্বদেশের পক্ষ থেকে জেলাপরিষদের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন। গতকাল সোমবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৫টি উপজেলা, ১৫টি পৌরসভা ও একটি মহানগর নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ এখন সারাদেশের মডেল। দেশের অনেক জেলা পরিষদ যখন নিজেদের আয় বাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে তখনই নিজস্ব আয়ে অনেক বেশি স্বাবলম্বী হয়েছে এই জেলা পরিষদ। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ২৭ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে খুঁড়িয়ে চলা চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের বাজেট এখন ৩৪৯ কোটি টাকা। যার বেশিরভাগই ব্যয় হয়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে। গত এক যুগে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ শুধুমাত্র গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নেই তিন হাজার ৬১৪টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যেসব উন্নয়ন প্রকল্পে পাল্টে গেছে গ্রামীণ জনপদ।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম.এ. সালাম পূর্বদেশ প্রতিবেদককে বলেন, ‘জেলা পরিষদের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নিজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিজস্ব আয় আছে বলেই ছোটবড় অনেক প্রকল্প হাতে নিতে সহজ হয়। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে বিভিন্ন উপজেলায় শহীদ মিনার, স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। গৃহহীনদের ঘর দেয়া হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নেও কাজ করছে জেলা পরিষদ। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা নিজস্ব নতুন ভবনে উঠবো। জেলা পরিষদের উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে গ্রামের অলিগলিতে।’
মূলত আওয়ামী লীগ সরকার সারাদেশের জেলা পরিষদগুলোতে প্রথমে প্রশাসক নিয়োগ ও পরে নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়ার পর জেলা পরিষদের উন্নয়ন কর্মকান্ডে গতি আসে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও ২০১৬ সালে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান মো. আব্দুস সালাম। এই সময়টাকেই চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২০১৭টি সড়ক, ৬৫টি কালভার্ট ও ১৫৩২টি ড্রেন ও গাইড ওয়াল নির্মাণ করেছে জেলা পরিষদ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে ৫৮টি স্মৃতিস্তম্ভ ও ১০৮টি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের দেয়া হয়েছে ৬০টি ঘর। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নেও কার্যকর ভূমিকা রেখেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও মানবসম্পদ উন্নয়নে তিন হাজার ৮৪৪ জন নারী-পুরুষকে সেলাই-কাটিং, ব্লক-বাটিক, বুটিকস, এমব্রয়ডারি, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পাঁচ হাজার ৫৩১জন শিক্ষার্থী পেয়েছে শিক্ষাবৃত্তি। এছাড়াও দুর্যোগকালীন সময়েও ত্রাণ নিয়ে মানবেতর জীবন পার করা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, এক হাজার ৯৬০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসা সহায়তা এবং দুই হাজার ৩১৮ জন অসহায় ও দুঃস্থদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। ২০ হাজার পরিবার পেয়েছে খাদ্য সহায়তা, শীতবস্ত্র পেয়েছে ১৩ হাজার জন। তবে গত পাঁচ বছরেই উন্নয়নের বেশি অগ্রসর হয়েছে জেলা পরিষদ। এই সময়ে জেলা পরিষদে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে।
ছোট প্রকল্পে গ্রাম উন্নয়নে সুনাম বয়ে আনা জেলা পরিষদ কয়েকটি মেগা প্রকল্পও গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য জেলা পরিষদ টাওয়ার ও ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া জেটি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও পাঁচটি নতুন মার্কেট, চেয়ারম্যান বাংলো, পাঁচতলা বিশিষ্ট অফিসার্স কোয়ার্টার, সাত তলা বিশিষ্ট ডরমেটরি ভবন নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম জেলার প্রবেশমুখে নির্মাণ করতে যাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন প্রবেশদ্বার।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০৪১ সালের রূপকল্প ও ২০৩০ সালের এসডিজি অর্জনের অগ্রযাত্রায় বলিষ্ঠ অবদান রাখছে এই জেলা পরিষদ। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের স্বনির্ভরতা অর্জন ও চট্টগ্রামের গ্রামীন অবকাঠামো ও সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে যে সাহসিকতা দেখিয়েছে, তা প্রশংসাযোগ্য। আমরা আশা করব জেলা পরিষদের এধরণের কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তরিকতা অব্যাহত থাকবে। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এম.এ. সালাম একজন নীতিবান রাজনীতিক ও স্বজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাঁর হাত ধরে এগিয়ে যাওয়া জেলা পরিষদ দেশের মডেল হয়ে থাকবে-এমনটি প্রত্যাশা চট্টগ্রামবাসীর।