চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অস্থির ক্যাম্পাসে ফিরে আসুক স্বস্তি

24

 

অতিমারি করোনার ভয়াল তান্ডবে শিক্ষা কার্যক্রম যখন প্রায় অচল তখনও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীন কোন্দলে অস্থির ছিল ক্যাম্পাস ও হল। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ, বিভিন্ন কর্মসূচিতে অতিরিক্ত ব্যয়, আর্থিক অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রকাশিত হয় দৈনিক সংবাদপত্র ও অনলাইন নিউজে। এ নিয়ে প্রশাসনের জোরালে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও সম্প্রতি ফারসি ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও অর্থ লেনদেনের মত একটি অডিও ফাঁস হলে প্রশাসন নড়েচড়ে বসেন। তাৎক্ষণিক উপাচার্যের একান্ত সহকারী (পিএস)সহ তিনজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। একইসাথে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তও বাতিল করা হয়। তবে এ ঘটনার রেশ না কাটতেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অননুমোদিত পদে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ উঠে। এর পাশাপাশি ছাত্রী হলে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, পানির সংকট, আবাসিক শিক্ষক নিযমিত হলে অবস্থান না করার অভিযোগে আবাসিক ছাত্রীরা হল প্রভোস্টকে তালা মেরে দাবি আদায়ে বাধ্য করাসহ ছাত্রলীগের দুই গ্রæপের সংঘাত পরবর্তী হল থেকে ব্যাপক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহলকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। শুক্রবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বুধবার রাতে পূর্বঘটনার জের ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ বিজয় ও সিএফসির মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, মাহমুদুল হাসান রূপক নামে বিজয় গ্রুপের সিনিয়র এক কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের রব হলের ঝুপড়িতে নাস্তা করতে গেলে সেখানে থাকা সিএফসি কর্মীরা তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয় গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় সিএফসি কর্মীরা শাহ আমানত হল এবং বিজয় কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হল মোড়ে অবস্থান নেয়। এসময় উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এবং প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।পরবর্তীতে শহর থেকে ছেড়ে আসা রাত সাড়ে আটটার শাটল রাত সোয়া নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে এসে পৌঁছালে সেখানে অনিক হোসাইন রিফাত নামে এক সিএফসি কর্মীকে মারধর করে বিজয় কর্মীরা। এ ঘটনার জেরে দুই হলের মধ্যে পুনরায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির হস্তক্ষেপে উভয় গ্রুপকে নিজ নিজ হলে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে চবি প্রশাসন পুলিশের সহায়তায় দুই হলে অভিযান চালিয়ে রামদা, কিরিচ, গুলতি, কাচের বোতল, ও রডসহ বিভিন্ন প্রকার দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয় ।
এ ধরণের একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে প্রীতিলতা হলের ক্যান্টিনের খাবারের নিম্নমান, কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার, ছাত্রীদের হেনস্তা ও আবাসিক শিক্ষকদের নিয়মিত না আসাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও হলে প্রতিদিনই বিভিন্ন সময়ে হলের লাইনে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকে বলেও অভিযোগ ছাত্রীদের। এ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন হলে অবস্থানরত ছাত্রীরা। তারা এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার হলের প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকদের ভেতরে রেখে বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে আন্দোলন করেছে। পরবর্তীতে প্রভোস্ট এবং প্রক্টরিয়াল বডির আশ্বাসে তালা সরিয়ে নেয় তারা।
দেশের অন্যতম প্রধান সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরে এমন হযবরল অবস্থায় প্রমাণ করে বিদ্যাপীঠটি চরম সংকট অতিক্রম করছে। অনেকে এ সংকটের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নমনীয়তা বা দুর্বলতাকে দায়ী করলেও উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের ইমেজ নষ্ট করার জন্য স্বার্থন্বেষীদের ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন। যাই হোক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান পরিস্থিতির দায় চবি প্রশাসন কোনভাবে এড়াতে পারিন না। এরপরও আমরা মনে করি, নিয়োগে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগের উপর ভিত্তি করে যেসব তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সঠিক ও সত্যতা বিষয়ে সহযোগিতা করা, কেউ অপরাধ করে তাকলে তাদের চিহ্নিত করা। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ জাতীয় ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে, এর কোন প্রতিবেদন প্রকাশ করতে দেখা যায় না বা প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থাও নেয়া হয় না। বর্তমান পরিস্থিতিতে অতীতের খারাপ দৃষ্টান্ত পরিহার করে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংকট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে-এমন প্রত্যাশা আমাদের।