চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ভারতে পণ্য পরিবহন শুরু

66

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্যবাহী কন্টেইনার পরিবহন শুরু হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির প্রায় দুই বছর পর ভারতের হলদিয়া বন্দর থেকে ট্রায়াল পর্যায়ে প্রথম পণ্যবাহী কন্টেইনার জাহাজ এমভি সেঁজুতি আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে। আজ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে জাহাজটি ভিড়ার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত ট্রানজিট চুক্তির আওতায় পণ্য পরিবহন পুরোদমে শুরু হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন মাত্রা সূচিত হবে। প্রতিটি কন্টেইনারের বিপরীতে কাস্টমস সরকারি রাজস্ব আদায় করা হবে। বাংলাদেশের সড়ক পথ ব্যবহারের জন্যও সড়ক ও জনপদ বিভাগ নির্ধারিত মাশুল আদায় করবে। এছাড়া দেশের শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফ এজেন্ট, কার্গো পরিবহন এজেন্ট এর আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেই সাথে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার বিকালে পণ্যবাহী কন্টেইনার নিয়ে ভারতের হলদিয়া বন্দর ত্যাগ করেছে এমভি সেঁজুতি নামের জাহাজটি। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে পৌঁছার পর আজ মঙ্গলবার সকালে জাহাজটি বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) জেটিতে ভিড়বে। সেখানে পণ্যবাহী কন্টেইনারগুলো নামানোর পর বন্দর ও কাস্টমস এর নির্ধারিত চার্জ পরিশোধ শেষে বাংলাদেশের সড়ক পথে আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে ভারতের আগরতলা চলে যাবে।
এমভি সেজুঁতির শিপিং এজেন্ট ম্যাংগো লাইন লিমিটেড সূত্র জানায়, ট্রানজিটের ৪টি পণ্যবাহী কন্টেইনারের দুটিতে টাটা স্টিল কর্তৃক উৎপাদিত টিএমটি স্টিল বার ও দুটিতে ইটিসি এগ্রো প্রসেসিংয়ের মসুর ডাল রয়েছে। এর মধ্যে এস এম কর্পোরেশনের আমদানিকৃত স্টিল বারের চালানটি আগরতলার জিরানীয়ায় যাবে। এছাড়া জেইন ট্রেডার্সের ডালের চালানটি যাবে আসামের করিমগঞ্জে।
এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে জাহাজ ভিড়ানোর পর পণ্যবাহী কন্টেইনারগুলো নামানো হবে। তারপর বন্দর ও কাস্টমস এর নির্ধারিত চার্জ পরিশোধ শেষে বাংলাদেশের সড়কপথে আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে ভারতের আগরতলা যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ট্রানজিটের পণ্যবাহী জাহাজ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে। জাহাজটি বার্থ খালি থাকা সাপেক্ষে বন্দরের এনসিটিতে ভিড়ানো হবে। এরপর বন্দর ও কাস্টমসের নির্ধারিত চার্জ আদায় শেষে বাংলাদেশের সড়কপথে আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে ভারতের আগরতলা যাবে।
এদিকে গত ১৩ জুলাই এক আদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভারতীয় ট্রান্সশিপমেন্টের পরীক্ষামূলক পণ্য চালানের জন্য মাসুল নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই সাতটি মাসুল হলো চালান প্রতি প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, টন প্রতি ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ৩০ টাকা, প্রতি টন নিরাপত্তা মাসুল ১০০ টাকা, এসকর্ট মাসুল প্রতি টন ৫০ টাকা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক মাসুল প্রতি টন ১০০ টাকা। এছাড়া প্রতি কন্টেইনার স্ক্যানিং ফি ২৫৪ টাকা এবং বিধি অনুযায়ী ইলেকট্রিক সিলের মাসুল প্রযোজ্য হবে। এর বাইরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্য উঠানামা মাসুল, রিভার ডিউজ, পোর্ট ডিউজ আদায় করবে।
ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের প্রধান সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, পণ্য পরিবহনের কাস্টম হাউস সার্বিক প্রস্ততি নিয়ে রেখেছে। কাস্টম নির্বিঘেœ সেবা দিতে পারবে।
তিনি বলেন, গ্যাট চুক্তি অনুযায়ী ট্রানজিট পণ্যে শুল্ক আরোপের সুযোগ নেই। তবে রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী মাসুল আদায় করা হবে। তবে প্রতি চালানে কত শুল্ক আদায় করা হবে তা পণ্য পৌঁছার আগেই বলা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের অক্টোবরে দিল্লিতে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে দুই দেশের সচিব পর্যায়ে চুক্তি হয়। এক বছর পর ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকে এ সংক্রান্ত পরিচালন পদ্ধতির মান বা এসওপি সই হয়। নানা জটিলতা শেষে প্রায় দুই বছর পর ভারতীয় পণ্য পরিবহনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ভারতের সাথে ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়া সফল হলে এরপর চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে নেপাল এবং ভুটানের সাথে একই ধরণের চুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশের।