চট্টগ্রাম বন্দর পণ্য পরিবহন ২৫ শতাংশ বাড়বে

5

ফারুক আবদুল্লাহ
চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দৈর্ঘ্য ও ড্রাফটের জাহাজ জেটিতে ভিড়েছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর তথা দেশের নৌ-বাণিজ্যের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নতুন মাইলফলক রচিত হয়েছে। মার্শাল আইল্যান্ডসের পতাকাবাহী ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ মিটার ড্রাফটের কমন এটলাস নামের জাহাজটি মেঘনার গ্রæপের আমদানি করা ৩৬ হাজার ৮৫০ টন চিনি নিয়ে বন্দরে জেটিতে প্রবেশ করে। আগে যেসব জাহাজ সর্বোচ্চ দুই হাজার ৫০০ কন্টেইনার নিয়ে জেটিতে ভিড়ত, সেখানে বর্তমানে ২০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ তিন হাজার থেকে তিন হাজার ২০০ কন্টেইনার নিয়ে ভিড়তে পারবে। এতে ২৫ শতাংশ বাড়তি পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে জেটিতে কম সময়ে বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে পারবে। একইসঙ্গে বাল্ক কার্গো জাহাজে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন খোলা পণ্য বেশি পরিবহন করা সম্ভব হবে।
এছাড়া বড় জাহাজ সরাসরি জেটিতে আসার ফলে বহির্নোঙরে আসা অনেক জাহাজকেই আর অপেক্ষা করতে হবে না। এ কারণে বহির্নোঙরে অবস্থানরত মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে করে পণ্য হ্যান্ডলিং কমে যাবে। আমদানিকারক সরাসরি বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে পারবেন। ফলে অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য মতে, স্বাধীনতার আগে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে সর্বোচ্চ ১৩৭ মিটার দৈর্ঘ্য এবং সাত মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারতো। সত্তরের দশকে কর্ণফুলী চ্যানেল সংস্কারের পর ১৯৭৫ সালে বন্দরের জেটিতে ১৬০ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে সাত মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ে। পরবর্তীতে চ্যানেলের খননকাজ চালু রাখার ফলে ১৯৮০ সালে ১৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮ মিটার ড্রাফট, ১৯৯০ সালে ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে আট মিটার ড্রাফট, ১৯৯৫ সালে ১৮৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার ড্রাফট এবং ২০১৪ সালে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে নয় মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দরের জেটি ভিড়েছে। এর দীর্ঘ আট বছর পর চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দৈর্ঘ্য ও ড্রাফটের জাহাজ ভিড়েছে।
এর আগে ২০২১ সালের জুন থেকে এইচআর ওয়েলিং ফোর্ড নামের প্রতিষ্ঠানটি কর্ণফুলী নদীর হাইড্রোলজিকেল অ্যান্ড মরফোলজিকেল সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু করে। প্রায় ১১ লক্ষ ডলার ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর বর্তমান পলি পড়ার হার, নদীর দুই পাড়ে কী ধরনের প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প গড়ে তোলা বাঞ্ছনীয়, কর্ণফুলী নদী ঘিরে বন্দরের স¤প্রসারণ, নদীর গতি-প্রকৃতিতে করণীয়সহ মোহনা থেকে জেটি পর্যন্ত বর্তমানে থাকা ড্রাফট অনুযায়ী জাহাজের চলাচলের বিষয়ে সমীক্ষা রিপোর্ট দেওয়ার জন্য এইচআর ওয়েলিং ফোর্ডকে নিয়োগ দেওয়া হয়। জাহাজ ভিড়ানোর বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বন্দরের ইতিহাসে নতুন এই মাইলফলকটি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
চট্টগ্রাম কর্তৃপক্ষ জানান, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মতামত এবং জাহাজের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দর জেটিতে আসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি পণ্য পরিবহন খাতে খরচ কমে আসবে।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩১ লাখ ৩৩ হাজার ২০ টিইইউস, কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১১ কোটি ৯২ লাখ ৭৬ হাজার ২৬২ টন। একই বছরে জাহাজ এসেছে ৪ হাজার ৩৪৪টি।