চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যাপক প্রস্তুতি

85

করোনার প্রথম ঢেউয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় প্রস্তুত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। দেশি-বিদেশি জাহাজ ও ইমিগ্রেশন পয়েন্টে নাবিকদের স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। চালু রাখা হয়েছে বন্দরের সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ বুথ, ২৫ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার ও ২৫ শয্যার করোনা ওয়ার্ড।
বন্দর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের ১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৪৬৮ জন। খবর বাংলানিউজের
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীন চট্টগ্রাম বন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোতাহার হোসেন জানান, গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজের ১৫৩ জন দেশি-বিদেশি নাবিকের স্ক্রিনিং করেছি আমরা। এর মধ্যে ৫ জনকে ইমিগ্রেশন পয়েন্টে স্ক্রিনিং করা হয়। তিনি জানান, গত ৯ ফেব্রæয়ারি থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে আসা ৩৭ হাজার ৪৪৯ জন নাবিকের স্ক্রিনিং সম্পন্ন করেছি আমরা। এর মধ্যে করোনা রোগের লক্ষণ কারও মধ্যে পাওয়া যায়নি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, জেলা সিভিল সার্জন ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আমাদের কার্যক্রমে কোনো ঘাটতি নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আরও ১০ জন কর্মী বাড়তি দিয়েছেন।
বন্দরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া এ বন্দরে এক দিনের জন্য কার্গো-কনটেইনার হ্যান্ডলিং বন্ধ থাকেনি। এমনকি করোনার প্রথম ধাপে যখন লকডাউন দেওয়া হয়েছিল সারা দেশে তখনো চট্টগ্রাম বন্দর পুরোদমে চালু ছিল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রতিটি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাকআপ টিম করা হয়েছে, যাতে একটি দলে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসা ও বাকিদের আইসোলেশনে রাখা হয়। এর ফলে বন্দর ২৪ ঘণ্টা, ৭ দিন সচল থাকবে।
সূত্র জানায়, বহির্নোঙরে আসা জাহাজ জেটিতে আনা-নেওয়া করা হয় বন্দরের নিজস্ব পাইলট দিয়ে। এসব পাইলটের ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এর বাইরে বন্দর জেটি, টার্মিনাল ও অফিসে দায়িত্বরতদের মুখে মাস্ক পরা, সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এমনকি সম্প্রতি মাতারবাড়ী বন্দর প্রকল্প নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে বন্দর ভবনের সামনের মাঠে খোলামেলা পরিবেশে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সারা দেশে সরকারি ছুটির ৫৬ দিনে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার কনটেইনার (টিইইউ’স)। গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে ২০ মে পর্যন্ত হ্যান্ডলিং হয় ১ কোটি ৩৭ লাখ ২৮ হাজার ৬৪২ মেট্রিকটন পণ্য। এর মধ্যে ৫৬ দিনে বন্দরে খাদ্যপণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে ২২ লাখ ৯৮ হাজার ৪২৪ মেট্রিকটন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদের (সিবিএ) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নায়েবুল ইসলাম ফটিক বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবেলা এবং বন্দর সচল রাখার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট রয়েছে। বন্দর হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে আইসিইউ সাপোর্ট নেই। সেই ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, ম্যাস্ক হাসপাতাল, পার্কভিউ হাসপাতালের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ কমিটির সদস্য হিসেবে গতকাল সোমবার আমরা ইমপেরিয়াল হাসপাতালের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সবচেয়ে বড় কথা, করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধকেই গুরুত্ব দিতে হবে বেশি। তাই বন্দরের কর্মী, বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলোর কর্মীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বাধ্য করার ওপরই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রথম ধাক্কার লকডাউনের সময়ও দেশের অর্থনীতি, আমদানি-রফতানি, ভোগ্যপণ্যের সাপ্লাই চেন স্বাভাবিক রাখতে চট্টগ্রাম বন্দর সার্বক্ষণিক সচল ছিল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা করে বন্দর সচল রাখার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। করোনা প্রতিরোধ, সুচিকিৎসার ব্যবস্থার পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।