চট্টগ্রাম থেকে বন্যপ্রাণি পাচার হচ্ছে বিদেশে

4

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণি পাচার থামছেই না। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম থেকে এসব প্রাণি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় কিছু বাসিন্দা এসব বন্যপ্রাণি ধরতে পাচারকারীদের সহায়তা করছে। প্রথমে এসব বন্যপ্রাণি চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। পরে সেগুলো পাঠিয়ে দেয়া হয় ঢাকাসহ দেশের ভেতরে ও বিভিন্ন দেশে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিলুপ্তপ্রায় এসব বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ করা অতীব জরুরি বলে জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
সর্বশেষ গত ১০ নভেম্বর সজারু ও ২টি লজ্জাবতী বানর জব্দ করা হয়। সজারু ও লজ্জাবতী বানরসহ গ্রেপ্তার করা হয় ২ পাচারকারীকে। এর আগে গত ৮ ও ২৭ অক্টোবর লোহাগাড়া থানার অভিযানে মহাবিপন্ন প্রাণি উল্লুক, ২টি মেছোবাঘ, একটি চিতাবিড়াল ও একটি বনমোরগ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আটক হওয়া দুজন ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের অপরাধ স্বীকার করায় তাদের প্রত্যেককে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং ৫ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড দেয়া হয়। অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণিগুলো চুনতি অভয়ারণ্যে পাঠানো হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ি বনাঞ্চল থেকে বিপন্ন প্রজাতির এসব বন্যপ্রাণি ও পাখি ধরছে পাচারকারীরা। পরে সেগুলো পাচারকারীদের নির্ধারিত ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের নূপুর মার্কেট, দেওয়ানহাটসহ বিভিন্ন স্থানে এখন এ বন্যপ্রাণি কেনা-বেচাকেন্দ্রিক চক্র গড়ে উঠেছে।
লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান জানান, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া দিয়েই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন গহীন এলাকা থেকে দুর্লভ বন্যপ্রাণিগুলো চট্টগ্রাম দিয়ে অন্য জায়গায় পাচার করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বড় একটি চক্র এ পাচারকারীদের সহায়তা করছে। তাদের বিষয়ে সেখানে যোগাযোগ করে নেটওয়ার্কটিকে শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশাল বন এলাকা হওয়ায় আমাদের পাহারা দেয়া সম্ভব হয় না। এরপরও বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে পাচারকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪০টি অভিযান পরিচালনা করে ৩৭১টি বন্যপ্রাণি ও পাখি উদ্ধার করা হয়। এ সময় আরো প্রায় ৫০টির বেশি বন্যপ্রাণি উদ্ধার করেন তারা। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১৪টি অভিযানে ১৫৬টি এবং ১০টি জায়গা থেকে আরো ৩৪টি প্রাণি উদ্ধার করা হয়। এসব বন্যপ্রাণির মধ্যে রয়েছে তক্ষক, বনরুই, মায়া হরিণ, বানর, বন্য শূকর, বেজি, অজগর সাপ, শঙ্খিনী সাপ, পদ্ম গোখরা, গুইসাপ, দুধরাজ সাপ, হগ ব্যাজার, মেছো বিড়াল, বন বিড়াল, গন্ধগোকুল, ভাল্লুক, লজ্জাবতী বানর, বন্য শূকর, উল্লুক, মুনিয়া, বুলবুলি, বানর, ঘুঘু, শালিক, পেঁচা, টিয়া, কালিম, চিল, কাছিম ইত্যাদি। উদ্ধারের সময় জড়িতদের জরিমানা ও শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, মূলত চট্টগ্রামে যেসব বন্যপ্রাণি উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন গহীন এলাকা থেকে নিয়ে আসা হয়। পাচারকারীরা চট্টগ্রামকে এখন রুট বানিয়ে পাচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের নূপুর মার্কেট ও দেওয়ানহাটসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে বন্যপ্রাণি উদ্ধার ও জরিমানাসহ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা আরও অভিযান পরিচালনা করব।