চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে লবণপানি আর ধূলোয় জমাট আস্তরণ!

35

পটিয়া প্রতিনিধি

ট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে লবণ পানি আর ধূলোয় জমাট আস্তরণ জমে দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠেছে। এ মহাসড়কে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। হঠাৎ ব্রেক কষলেই উল্টে যাচ্ছে যানবাহন। এ মহাসড়কে দুর্ঘটনার শিকার অধিকাংশ গাড়ি সড়কেই উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। পটিয়া উপজেলার লবণ শিল্প নগরী তথা ইন্দ্রাপুল এলাকায় মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ৫-৭টি দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকারের হার সবচেয়ে বেশি।
এদিকে গত দুই মাস ধরে একের পর এক দুর্ঘটনার কারণে অধিক দুর্ঘটনাপ্রবণ ইন্দ্রপুল এলাকায় পানি দিয়ে মহাসড়কে জমে থাকা লবণ পানির আস্তরণ ধুয়ে দিয়েছেন মেয়র আইয়ুব বাবুল। পটিয়া ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় এ কার্যক্রম চালানো হয়। জানা গেছে, ট্রাক আর কাভার্ডভ্যানে খোলা লবণ পরিবহনের কারণে সড়কে পড়া লবণ পানির সাথে ধূলোয় চট্টগ্রাম-কক্সাবাজার মহাসড়কে জমে সাথে আস্তরণের ফলে মহাসড়ক পিচ্ছিল হয়ে উঠে। বিকাল থেকে পরদিন মহাসড়ক পর্যন্ত সকাল পর্যন্ত আস্তরণ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। এ কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে এবং ওই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর মিছিলে পরিণত হয়েছে এ সড়কটি। বড় ধরণের দুর্ঘটনা ছাড়া পুলিশের খাতায় এসব দুর্ঘটনা রেকর্ড হয় না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলা থেকে লবণ নিয়ে পটিয়া, নগরীর সদরঘাট ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ট্রাকযোগে লবণ পরিবহন করা হয়। লবণ পরিবহনের ক্ষেত্রে কিছু বিধি-নিষেধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না এ ক্ষেত্রে। সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে ট্রাক থেকে যাতে লবণ পানি সড়কে না পড়ে সেজন্য নিচে ত্রিপল দিতে হবে। কিন্তু লবণ ব্যবসায়ীরা তা মানছে না। তারা লবণ পরিবহনে টেকসই ত্রিপল ব্যবহার করছেন না। এর ফলে কক্সবাজার থেকে পটিয়া ও নগরীর বিভিন্ন কারখানায় লবণ সরবরাহের সময় লবণ মিশ্রিত পানি পড়ছে মহাসড়কে। লবণ পানির সাথে ধূলোয় মিশে মোটা আস্তরণ তৈরি হয়েছে।
যাত্রীরা জানান, শুকনো মৌসুম শুরু থেকে লবণ পানিতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক। কোনো সুরক্ষা ছাড়াই উপকূলীয় এলাকা থেকে ট্রাকে মহাসড়ক দিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে লবণ। এ সময় ট্রাক থেকে লবণপানি পড়ে পিচ্ছিল হয়ে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে এ সড়কটি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার থেকে ট্রাকে বেশির ভাগ লবণ আসে পটিয়ার ইন্দ্রপুলের লবণ মিলগুলোতে। কিছু লবণ যায় বোয়ালখালী ও নগরীর মাঝিরঘাটস্থ কয়েকটি কারখানায়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর লবণ উত্তোলনের মৌসুমে এই ধরণের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সড়কপথে লবণ পরিবহনে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং নীতিমালা ভঙ্গ করলে আইনী ব্যবস্থার বিষয়ে উল্লেখ না থাকায় সড়ক পথে খোলা লবণ পরিবহন বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রশাসনের সব সংস্থা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে লবণ পানি আর ধূলোয় তৈরি হওয়া আস্তরণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন। তবে চট্টগ্রামের বাইরে থেকে আসা পরিবহন চালকরা অজ্ঞতার কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হন। লবণ পরিবহনের কারণে বিকাল থেকে ভোর এই মহাসড়ক সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। গত এক মাসে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে পটিয়ায়। তাতে হতাহতের সংখ্যাও অনেক বেশি।
এদিকে পটিয়ায় এক কিলোমিটার এলাকা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠায় ঝুঁকিপূর্ণ লবণ পানির পিচ্ছিল মহাসড়ক পানি দিয়ে ধুয়ে দিয়েছেন পটিয়া পৌর কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে লবণ পানিতে পিচ্ছিল হয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছিল। মহাসড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এ এলাকাটিকে ঝুঁকিমুক্ত করতে পটিয়া পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে মহাসড়কে পানি দিয়ে পরিস্কার করে দেয়া হয় গতকাল শনিবার। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন পটিয়া পৌরসভার মেয়র আইয়ুব বাবুল। এ কাজে পৌর কর্তৃপক্ষকে সার্বিক সহায়তা করে পটিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। এ সময় মহাসড়কের পটিয়া পৌরসভার মুন্সেফবাজার থেকে আমজুরহাট এলাকা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার অংশ ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় পানি দিয়ে পরিস্কার করে দেয়া হয়।
মহাসড়কে একের পর এক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা এড়াতে পৌর কর্তৃপক্ষের ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকাবাসী। লবণ পানিতে পিচ্ছিল মহাসড়কে দুর্ঘটনারোধে এ পদক্ষেপ একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পটিয়া ইন্দ্রপুল লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক আল্লাই, ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম, প্রদীপ ত্রিপুরা, পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মামুন, পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান প্রমুখ।