চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মান বৃদ্ধিতে সরকারের আরো উদ্যোগ প্রয়োজন

19

 

গেল সোমবার চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অতিবাহিত হলো। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এ বন্দর দেশের জন্য গর্বের। চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের রাজস্ব আয়ের নিরন্তর একটি খাত। প্রাকৃতিক ভাবে চট্টগ্রাম বন্দর শত বছরেরও অধিক সময় ধরে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। আসামের লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা কর্ণফুলী নদীর ভাটিতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ১৩৫ বছর পূর্বে চট্টগ্রাম বন্দরের যাত্রা যেভাবে শুরু করা হয়েছিল বর্তমানে বন্দরটি সে অবস্থায় নেই। ধীরে ধীরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর নানা প্রকার আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় তার সক্ষমতা বাড়িয়ে যাচ্ছে। সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে বর্তমানে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা অনেকগুণ বেড়েছে। তবে সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের অন্যান্য আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরের তুলনায় দেশের এই প্রাচীন ও বৃহত্তর সমুদ্রবন্দর অনেকখানি পিছিয়ে। সরকার চট্টগ্রাম বন্দরকে যত আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে পারবে ততই দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।
নানা জটিলতার কারণে অতীতের সরকারসমূহ বন্দরের প্রতি যথাযথ নজর দেয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর হতে চট্টগ্রাম বন্দরের দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনাল চালু, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কম সময়ে অধিক পরিমাণ মালামাল ওঠা-নামা, এক সাথে বহু জাহাজ বন্দরে ভেড়ানোর সহজ ও উন্নত ব্যবস্থাসহ আজ চট্টগ্রাম বন্দর অনেক দূর এগিয়েছে। এখানে বৃহৎ আকারের জাহাজ হতে সরকারি মালামাল ওঠানামায় এখনো কিছু জটিলতা পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ১৩৫তম বন্দর দিবসে আমাদের আশার বাণী শুনিয়ে বলেন ‘চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভেড়ানোর উপযোগী হচ্ছে’- বন্দর চেয়ারম্যানের এমন মন্তব্য আশাব্যঞ্জক। তিনি খুব দ্রুত এমন উদ্যোগ বাস্তবায়নের আশার কথা শুনিয়েছেন। সংশ্লিষ্টমন্ত্রণালয় এবং সরকারের অনুকূল আন্তরিকতা থাকলে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে সরাসরি সবধরনের জাহাজ ভেড়ানোর ব্যবস্থা করা সম্ভব। প্রাকৃতিকভাবে চট্টগ্রাম বন্দর একটি গভীর ও সুবিধাজনক বন্দর। নানা কারণে এখানে কিছু সমস্য আছে। যে সকল সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধান বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য দূরুহ হলেও দুঃসাধ্য নয়। সরকার, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করলে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দরকে একটি অত্যাধুনিক বন্দরে রূপান্তর করা যায়। বিশ্বের বিখ্যাত সমুদ্রবন্দরসমূহের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দেশের অর্থনীতিকে দ্রæত এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষ ছাড়াও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে বহির্বিশ্বের বিশ্বস্থ আগ্রহী দেশ সমূহকে ইজারা দিয়েও বন্দরের আধুনিকায়নের কাজ ত্বরান্বিত করা যায়। বঙ্গোপসাগর মোহনা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত দীর্ঘ ৬০ কিলোমিটারেরও অধিক স্থানজুড়ে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ ব্যাপারে কর্ণফুলীর নাব্যতা বৃদ্ধি, অবৈধস্থাপনা উচ্ছেদ, নদীতে জেগে ওঠা দ্বীপসমূহকে সরানোর কার্যকর ব্যবস্থা করা গেলে চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠবে। কর্ণফুলী নদী ও সমুদ্র মোহনার নাব্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির পরিধি আরো বাড়ানো প্রয়োজন। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে সিঙ্গাপুরের আদলে সাজানো গেলে সমগ্র দেশের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে। ফলে বাংলাদেশ দ্রুত একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশের দ্বারপ্রান্তে। এমতাবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যাপক উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে মনোনিবেশ করলে আমাদের দেশ দ্রুত উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছতে সক্ষম হবে।
প্রসঙ্গক্রমে বলা যায় সরকারকে অনুধাবন করতে হবে যে, চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়ন মানে দেশের সার্বিক উন্নয়ন। ইদানীং কালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানীতে রূপান্তরে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তার সাথে আরো অধিক উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিলে চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানীতে রূপান্তরিত হবার পাশাপাশি দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারবে। অনেকগুলো মেগা প্রকল্প চট্টগ্রামে গ্রহণ করা হয়েছে। সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা গেলে এবং সম্পূরক নতুন প্রকল্প গ্রহণ করে দেশের সমৃদ্ধির স্বার্থে সঙ্গত কারনে চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকারের বিশেষ নজরদারী আশা করে দেশের সর্বস্তরের জনগণ।