চট্টগ্রাম আদালতের কিংবদন্তী অ্যাডভোকেট বদরুল হক খান

502

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

চট্টগ্রাম আদালতের অন্যতম সেরা আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট বদরুল হক খান। ১৯১৯ সালে ওকালতিতে যোগদান করে প্রায় অর্ধশত বছর নিরবচ্ছিন্ন আইনচর্চা করে অনেক কীর্তি স্থাপন করেন তিনি। ১৯৬৯ সালে মানব জীবনের অবধারিত নিয়তি মৃত্যুই তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মমুখর জীবনের ওপর যবনিকা টেনে দেয়।
চট্টগ্রামের সমাজ ও সভ্যতার জন্য বদরুল হক খানের অবদান কম নয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, বিচারপ্রার্থী জনগণের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে তাঁর সমস্ত ওকালতি মেধা ও শ্রম তিনি নিয়োজিত করেছিলেন। রাজনীতি, সমাজসেবা ও আইনচর্চার মাধ্যমে তিনি জনসেবায় তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। চট্টগ্রাম আদালতে অনেক স্মরণীয় আইনজীবী আইন চর্চার মাধ্যমে অসামান্য কীর্তি স্থাপন করে গেছেন, কিন্তু বদরুল হক খান একজনই, তাঁর সঙ্গে তুলনীয় হতে পারেন এমন আইনজীবী বিরল।
অ্যাডভোকেট বদরুল হক খান একাধারে আইনের প্রয়োগ, আইনের ব্যাখ্যা ও আইন শিক্ষাদান করেছেন। অর্ধশতাধিক বছর তাঁর ওকালতি জীবনের বয়স। তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে তিনি জীবদ্দশায় আইনের একটি ইনস্টিটিউশনে পরিণত হয়েছিলেন।
ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তম চট্টগ্রাম জেলার শুভপুর, রামগড়, ফটিকছড়ি থেকে কক্সবাজার, চকরিয়া-টেকনাফ পর্যন্ত অ্যাডভোকেট বদরুল হক খান জনগণের উকিল হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান আলহাজ বদরুল হক খান ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির একজন প্রথিতযশা আইনজীবী। তিনি ছিলেন ফৌজদারী আইনের বিশেষজ্ঞ।
তার সবচেয়ে বড় অবদান গরিব মক্কেলদের সেবা। যে জ্ঞান, মেধা তাঁর ছিল তাতে তিনি মামলায় যে কোন ফি আদায় করতে পারতেন। কিন্তু তিনি জানতেন যে, আমাদের দেশের লোক গরিব। সামান্য ফি নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে কিছু না নিয়েই তিনি মামলা করে যেতেন। মামলা করাই ছিল তাঁর জীবনের আদর্শ।
চতুর মক্কেলরা এর সুযোগ নিত। যার ফলে হাজার হাজার মামলা করার পরও বদরুল হক খান কোন দিন ধনী বা বিত্তশালী হননি। অর্থের জন্য মনে কোন দুঃখবোধ বা হা পিত্যেশও ছিলেন না। তাঁর ছিল অফুরন্ত কর্মশক্তি। তাঁর ধীশক্তির, যোগ্যতার স্বীকৃতি তিনি পেয়েছিলেন অবিভক্ত বাংলার দুই আইনের দিকপাল থেকে। এদের একজন হচ্ছেন যুক্তবঙ্গ পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও অন্যজন যুক্তবঙ্গের প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী খুবই সম্মান করতেন বদরুল হক খানকে। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক তাঁকে আইনজীবী বন্ধু হিসেবে সম্বোধন করে কথা বলতেন। দেখতেও তিনি ফজলুল হকের মত ছিলেন তবে একটু বেঁটে এই যা ১৯৫২ সালে চট্টগ্রামের একটি চাঞ্চল্যকর ফৌজদারী মামলা যে মামলায় ইলেক্ট্রিসিটি বিভাগের একজন প্রবীণ প্রকৌশলী ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ অভিযুক্ত ছিলেন। অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করার জন্য চট্টগ্রামে আসেন। অপরদিকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে ছিলেন পি.পি. বদরুল হক খান। কৃতিত্বের সঙ্গে তিনি সোহরাওয়ার্দীর প্রতিপক্ষ হিসেবে মামলা পরিচালনা করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে সেশন মামলা তিনি দক্ষতার সঙ্গে রাষ্ট্রের পক্ষে পরিচালনা করতেন। একজন পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে তাঁর যোগ্য রাষ্ট্রীয় কর্তব্য পালনের উদাহরণ চট্টগ্রাম বার সমিতির সদস্যদের নিকট চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
হাজার হাজার মামলা পরিচালনা কালে ঘটনার মধ্য থেকে সত্যকে বের করে আনার অদ্ভুত রকমের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ছিল বদরুল হক খানের। এই উদ্ভাবনী ক্ষমতার জন্য চট্টগ্রাম জেলার (সাবেক কক্সবাজার মহকুমা পর্যন্ত) ঘরে ঘরে তার নাম ছিল সুপরিচিত। বিশাল অভিজ্ঞতার কারণে তাঁকে কাগজপত্র দেখতে হত না। মক্কেলের কথা শুনে বুঝে নিতেন কি করতে হবে। বইপত্র পড়তেন না বলে সমসাময়িক অন্য উকিলরা মনে করতেন হাইকোর্টের নতুন নতুন রুলিং দিয়ে তাঁকে ঘায়েল করবেন। পরে দেখা যেত ঐ রুলিংগুলি তিনি আগেই দেখে নিয়েছেন। এর বিপরীতে কি দেখাতে হবে তার জন্যও তিনি তৈরি আছেন।
পাকিস্তান আমলে বদরুল হক খানের সহযোগি ব্যারিস্টার সলিমুল হক খান মিল্কী বলেন, আমি ও বদরুল হক খান ‘ল’ কলেজে শিক্ষকতা করতাম। তিনি ক্লাসে কি পড়াতেন তা আমি কোনদিনই বুঝতে পারি নাই। কোন সিলেবাসের বালাই নেই। ক্লাসে কোন বই নেওয়া নেই। কেবল হাজিরা খাতাটা নিয়ে ক্লাসে গেলেন। তারপর বলতে থাকলেন কাহিনীর পর কাহিনী। ছাত্ররা মন দিয়ে শুনছে। যখন ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করতাম কি পড়িয়েছেন, ছাত্ররা উত্তর দিতো, ভালো পড়িয়েছেন। পরে বুঝেছিলাম তিনি কখনো আইনটাকে প্রথমে তুলে ধরতেন না। একটা মামলার কাহিনী বলতেন ও সে মামলায় যে আইনগুলি প্রয়োগ করা গেল তা বলতেন। যার ফলে আইনের ব্যাখ্যা ছাত্রদের কাছে সহজ হয়ে আসতো। ছাত্ররাও তাঁর ক্লাসে আগ্রহ নিয়ে হাজির হতো।
তিনি যখন আদালতে যুক্তিতর্ক শুরু করতেন তখন আদালত ভবনে আইনজীবী ও জনগণের ব্যাপক জনসমাগম হত এবং উপস্থিত সবাই মোহাবিষ্ট হত। ইংরেজি ভাষার উপর তাঁর দখল শুধু বিস্ময়কর নয়, অবিশ্বাস্য রকমের বিস্ময়কর। চট্টগ্রাম আইন কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভ‚মিকা অপিরসীম। তিনি ঐ কলেজের সহ-অধ্যক্ষ ছিলেন বহু বৎসর। মুসলমানের ভাগ্য উন্নয়নের চিন্তা বদরুল হক খানের মুসলিম মানসে ক্রিয়াশীল ছিল। তাই তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতি সক্রিয়ভাবে সমর্থন করতেন।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির সময় তিনি ছিলেন সরকারি উকিল। লাখ লাখ হিন্দু চট্টগ্রাম ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেয়। অনেকে দেশত্যাগী হিন্দুদের বাড়িঘর জমিজমা দখল করার জন্য কেউ কেউ তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলো। তিনি কারো কথায় কর্ণপাত করেননি। বদরুল হক খান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন সুদীর্ঘকাল। তাঁর হাজার হাজার মামলা পরিচালনা ছিল কুৎসিতের বিরুদ্ধে সুন্দরের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের, সঙ্কীর্ণতার বিরুদ্ধে ঔদার্যের সংগ্রাম। তিনি রেখে গেছেন দার্শনিকতায় সমৃদ্ধ হাজার হাজার মামলা পরিচালনার ইতিহাস যা মেধায়, প্রজ্ঞায়, বিচক্ষণতায়, আইনের ব্যাখ্যায় মূল্যবান সম্পদ বলে বিবেচিত। শুধু যুক্তিতর্কই নয়, বলিষ্ঠ ভাষা ও তার পাÐিত্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত আইনের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।
হাজার হাজার মামলা পরিচালনার প্রভাবে সমগ্র ব্রিটিশ বাংলা ও পাকিস্তানে তাঁর সৃষ্টি হয়েছিল হাজার হাজার ভক্তমÐলী। এ সমস্ত হাজার হাজার ভক্তমÐলীর নিকট তিনি কিংবদন্তীর নায়ক ধর্মবীর, কর্মবীর, বটবৃক্ষ ও চৌকষ আইনজীবী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। চট্টগ্রাম জেলার সাবেক কক্সবাজার মহকুমাসহ প্রত্যেক থানার শতশত ইউনিয়নের হাজার হাজার গ্রামের মানুষের কল্পনায় তিনি সব সময় সর্বাবস্থায় হিরো হয়েই ছিলেন। গ্রামের নিরক্ষর কৃষকদের কাছে তিনি ছিলেন মুরব্বী ও বটবৃক্ষ। আদালতে মামলা পরিচালনা করেছেন চৌকষ ইংরেজিতে। পুরো আদালত অবাক হয়ে চেয়ে থাকত তার মেধা, প্রজ্ঞা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার দিকে। কৃষক-শ্রমিক-আইনজীবী ও লোকে লোকারণ্য তাঁর মামলাস্থলে বিরাজ করত পিনপতন নীরবতা। অসাধারণ যোগ্যতার প্রভাবে মেধা ও প্রতিভার কারণে তিনি যদি কলিকাতায় আইন ব্যবসা করতেন, ব্রিটিশ ভারতেও প্রতিষ্ঠা লাভ করা তার জন্য কঠিন ছিল না।
জনাব বদরুল হক খান ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সেখানে এক বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান ও বাগ্মী হিসেবে পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের যেমন পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান সীমান্ত প্রদেশ প্রমুখ অঞ্চলের প্রতিনিধিদের কাছে বেশ সমাদৃত হন। চট্টগ্রাম শহরের চাক্তাইতে কণফুলী নদীর উপর নেতু নির্মাণ, বন্দরের বিপরীতে নদীর ওপারে শিল্প কারখানা স্থাপন, নদীর ওপারে শহরের সম্প্রসারণ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা প্রভৃতির ব্যাপারে পার্লামেন্টে অনেক সারগর্ভ ভাষণ তিনি দেন। আজ তাঁর স্বপ্নের অধিকাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও তিনি সহযোগিতা করেন।
মরহুম বদরুল হক খান শুধু আইনজীবী হিসেবে দেশের সেবা করছেন তাই নয়, তিনি একজন দক্ষ রাজনীতিবিদও ছিলেন। তিনি দু’বার চট্টগ্রাম জেলা বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৬২ সালে মুসলিম লীগের টিকিটে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি জামালুস সাত্তার এর বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়েন। তাঁর প্রতিদ্ব›িদ্বতার নির্বাচন বাতিল করতে আদালতে মামলা দায়ের করলে তা আজো উচ্চ আদালতের নজির হয়ে আছে তিনি আদালতে জনাব সাত্তারের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনেন। এ নম্বর অভিযোগ হচ্ছে জনাব সাত্তার একজন সরকারী কন্ট্রাকটর হিসেবে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য এবং দুই নম্বর হচ্ছে তিনি আনোয়ারার ভোটারদের চা কেক খাইয়ে আপ্যায়িত করেছেন। বিচারের সময় দেখা গেল জনাব জামাসুল সাত্তার কন্ট্রাকটর হলেও নির্বাচন সময়কালীন তার কোন কাজ ছিল না। এবং হাইকোর্ট এটাও বললেন চা কেক খাইয়ে আজকাল ভোটরদের বশ করা যায় না। বদরুল হক খান হাইকোর্টে হেরে গিয়ে সুপ্রীম কোর্টে আপিল করেন। সুপ্রীম কোর্টও বললেন যেহেতু জামালুস সাত্তারের নির্বাচনের সময় কোন কাজ ছিল না। অতএব তাকে কন্ট্রাকটর বলা যায় না। কিন্তু সুপ্রীম কোর্ট ঐ চা কেকের ব্যাপারে ধরে বসলেন। জামালুস সাত্তারের নির্বাচন বাতিল হয়ে গেল।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের তিনি সদস্য পদ লাভ করলেন এবং আইনজীবীদের জন্যে উচ্চ আদালতের এক নজির রেখে গেছেন। এই নজির তাঁকে আইনের জগতে অনাদিকাল বাঁচিয়ে রাখবে।
মুসলিম লীগ করলেও বাঙালিদের স্বার্থের পক্ষে পার্লামেন্টে সব সময় সোচ্চার ছিলেন। বাঙালির প্রতি বৈষম্য অবসানের জন্য তিনি সব সময় পার্লামেন্টে আর্গুমেন্ট করেছেন। জনাব বদরুল হক খান পার্লামেন্ট পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ভাইস এডমিরাল এ.আর. খানের নিকট জানতে চান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে পূর্ব পাকিস্তানি অফিসারের সংখ্যা কত। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জবাবে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানিরা বেঁটে/খাটো হওয়াতে এবং ইংরেজিতে দক্ষতা কম থাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে খুব কম পূর্ব পাকিস্তানি অফিসার হিসেবে আছেন।
আরেকবার পাকিস্তান পার্লামেন্টে পাকিস্তানের সংস্থাপন মন্ত্রী জেনারেল হাবিব উল্লা খানের নিকট তিনি জানতে চান সি.এস.পি বা সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তানে পূর্ব পাকিস্তানিদের সংখ্যা কত। পাকিস্তানের সংস্থাপন মন্ত্রী জবাবে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানিদের মধ্যে সি.এস.পি হওয়ার জন্য উপযুক্ত লোক পাওয়া যায না। জনাব বদরুল হক খান তাঁর ভাষণে বলেন, বৃটিশ বাংলার হিন্দু নেতারা বাঙালি মুসলমানদের বড় বড় চাকরি থেকে বঞ্চিত করতেন যোগ্যতাহীনতার অভিযোগ আনয়ন করে। একই ধারা যদি পাকিস্তানেও অব্যাহত থাকে তা হলে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের পাকিস্তানি হয়ে কি লাভ?
ইংরেজি ভাষার উপর তাঁর দখল শুধু বিষ্ময়কর নয় অবিশ্বাস্য রকমের বিস্ময়কর। কি বক্তৃতায় কি আলাপচারিতায়, আইনশাস্ত্রে ছিল তাঁর বিশাল পাÐিত্য। আদালতে মামলা পরিচালনা করছেন চৌকষ ইংরেজিতে, মামলায় প্রতিপক্ষকে জেরা করছেন বলিষ্ঠ ভঙ্গিতে। তাঁর কথার চোটে ও বাক্যবানের আঘাতে আদালতে মিথ্যা সাক্ষী দিতে আসা লোকজন ভিরমি খেয়ে যেতো। অবলীলায় সত্য বেরিয়ে আসতো। ঘটনার মধ্য থেকে পুরো আদালত অবাক হয়ে চেয়ে থাকত তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার দিকে।
তিনি সম্প্রাদায়িক ছিলেন এ কথা কেউ কখনো বলতে পারবে না। ১৯৪৭, ১৯৬৩, ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে দাঙ্গার সময তিনি কখনো সাম্প্রদায়িকতাকে মদদ দেননি। অনেক আত্মীয় স্বজন তাঁকে দেশত্যাগী হিন্দুদের বাড়িঘর জমিজমা দখল করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি কারো কথায় কর্ণপাত করেননি। এ ধরণের কাজ তিনি নৈতিকতা ও ধর্ম বিরোধী বলে মন করতেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের মধ্যে অধিকাংশ ছিলেন হিন্দু। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কালিশঙ্কর দাশ, শৈলেন্দ্র চৌধুরী, জ্যোৎ¯œাময় চৌধুরী, নলিনী রক্ষিত, সুনীতি হাজারী, কে পি নন্দী, প্রসন্ন ঘোষ রায় প্রমুখ।
জনাব বদরুল হক খান আজ তাঁর কর্ম ও অসংখ্য ভাবশিষ্যের মাধ্যমে বেঁচে আছেন। অসংখ্য শিষ্যও ছাড়াও তার পরিবারে বহু দক্ষ আইনজ্ঞ সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মরহুম এর পুত্র অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক খান, ভ্রাতুষ্পুত্র চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও একাধারে সাবেক জিপি ও পিপি জনাব আলহাজ এ এইচ, এম মোজাফফর আহাম্মদ খানের নাম উল্লেখযোগ্য। মরহুম এর অপর ভ্রাতুষ্পুত্র বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট খান শফিকুল মান্নান, তাঁর পুত্র মরহুম মোজাম্মেল হক খান (এ পি পি) ও এ এইচ, এম মোজাফফর আহাম্মদ খান আজ আমাদের মধ্যে নেই। তাঁর বংশের পরবর্তী আইনজীবীগণের মধ্যে বর্তমান পিপি জসীম উদ্দিন আহমদ খান, এডভোকেট আলহাজ ইসমাইল হোসেন খান, এডভোকেট রিজোয়ানুল হক খান, বর্তমান জি.পি নজমুল হাসান খান আলমগীর প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৬৯ সালের ২৬ জুলাই সকালে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা