চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ আইনমন্ত্রীর সময়োপযোগী ঘোষণা

18

চলতি বছরের মধ্যেই চট্টগ্রামে হাইকোর্টের একটি সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়টি প্রধান বিচারপতি সদয় বিবেচনায় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। গত শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ‘আইনজীবী মিলনমেলা-২০২১’ অনুষ্ঠানে রাজধানী ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী একথা জানান। আইনজীবীদের উদ্দেশে মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “আমি আপনাদের একটা সুখবর দিতে চাই। নতুন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তিনি চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়টি সদয় বিবেচনায় নিয়েছেন। আমার মনে হয়, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই আমরা চট্টগ্রামে একটা সার্কিট বেঞ্চ পেতে যাচ্ছি। সার্কিট বেঞ্চ হবে, সে বিষয়ে আপনারা আমার ওপর আস্থা রাখতে পারেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এটা চান। এ ব্যাপারে কিছুদিনের মধ্যেই হয়ত আমরা একটা ঘোষণা দেব।” আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্যে সকল আইনজীবীসহ চট্টগ্রামবাসী আনন্দিত ও উৎফুল্ল। এটি অবম্যই চট্টগ্রামবাসীর জন্য বড় সুখবর। এমন একটি সুখবরের জন্য চট্টগ্রামবাসীকে প্রায় চারদশক অপেক্ষা করতে হয়েছে। আইনজীবীদের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামও করতে হয়েছে। সূত্র জানায়, গত ২০২০ সালে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির ১২৫ বছর পূর্তি হয়। সেখানে আইনজীবীদের আক্ষেপ ছিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর নগর প্রধান বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামে হাইকোর্টেও সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন না করা। কোন সংবিধান বিশেষজ্ঞ সাংবিধানিক বিধিনিষেধের কারণে এটি সম্ভব নয় উল্লেখ করলেও জনগণ ও রাষ্ট্রের স্বার্থে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন করে হাইকোটোর সার্কিট বেঞ্চ চালুর দাবি আইনজীবিদের। আইনজীবীদের ভাষ্যে জানা যায়, এ জন্যে প্রয়োজনে সংবিধানে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে এর সংশোধনের বিধানও রাখা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, পার্লামেন্ট সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানের যে কোন বিধানের পরিবর্তন করতে পারে, এমনকি সরকারের ধরনও (অনুঃ ১৪২) পরিবর্তন করতে পারে। সংবিধান প্রণয়নের কোন মৌলিক উদ্দেশ্য ব্যাহত না হলে এ ধরনের সংশোধন বৈধ।
আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা বর্তমানে ঢাকা হাইকোর্টে মোকদ্দমার আধিক্য, বিচারপ্রার্থী জনতার হয়রানি ও আর্থিক দুর্দশা থেকে রেহাই দিতে চট্টগ্রামে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ সময়োপযোগী, বাস্তবসম্মত। কেননা, চট্টগ্রামে হাইকোর্টের স্থায়ী কোন বেঞ্চ না থাকায় চট্টগ্রামের বিচার প্রার্থী লোকজনকে রাজধানী ঢাকায় নানা ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতে হয়। আমরা জানি ১৯৮২ সালে হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকার চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের উদ্যোগ নেন এবং ১৯৮৩ সালে আগ্রাবাদ জাম্বুরী মাঠের পাশে মোট ২৭,০০০ বর্গফুট আয়তনের ভবনে ৪৪ কক্ষ বিশিষ্ট দুটি এজলাসসহ হাইকোর্টের একটি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা হয়। কিন্তু দুর্ভগ্য যে, পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে সংবিধানের ৮ম সংশোধনীর বিপরীতে সুপ্রীমকোর্টের একটি আদেশের মাধ্যমে তা বাতিল করা হয়। সেই থেকে চট্টগ্রামে বিচার প্রার্থী লোকজনকে আবার ঢাকায় দৌড়াতে হচ্ছে। মূলত ঢাকাভিত্তিক আইনজীবীদের একচোখা নীতিই দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর নগরী ও প্রধান বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রাম হাইকোট বেঞ্চ হারালেও চট্টগ্রামবাসী নিরাশ হয়নি; তাদের বিশ্বাস বীরপ্রসবিনী চট্টগ্রামবাসীর আন্দোলন বৃথা যায় না। আমরা অনুধাবন করতে পারছি, বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনা এ চট্টগ্রামের প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছেন। চট্টগ্রাম নগরসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের আবকাঠামোগত উন্নয়ন , বহুগামী কানেক্টিভিটিসহ সামগ্রিক উন্নয়নে তাঁর সরকারের আন্তরিকতা আমাদের কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করে। সর্বশেষ আইনমন্ত্রী চট্টগ্রামের হাইকোর্টেও সার্কিট বেঞ্চ চালুর যে ঘোষণা মন্ত্রীর ভাষায় তা মূলত: প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে, চট্টগ্রামে একটি হাইকোর্টেও সার্কিট বেঞ্চ হোক। আইনমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর এ অভিপ্রায় বাস্তবায়নে সর্বশেষ প্রয়াস অব্যাহত রাখবেন-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।