চট্টগ্রামে সু-স্বাগতম বঙ্গকন্যা বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা

10

অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার

পলোগ্রাউন্ডে এর আগে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের মহাসমাবেশে শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছিলেন। তার ঠিক ১০ বছর ৯ মাস পর ৪ ডিসেম্বর আবার পলোগ্রাউন্ডে আসছেন আজ। জনসভাকে ঘিরে দিন-রাত চলছে নানা প্রস্তুতি, চট্টগ্রামজুড়ে চলছে মাইকিং। পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে পুরো চট্টগ্রাম। বদলে যাওয়া এই চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ডে আজ রোববার জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন তিনি আরো ছোট বড় ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের জনসভা স্বরণকালের বৃহত্তম এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশ হবে বলে মনে করি। কারণ ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মাঝে যেভাবে উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, এতে আমি নিশ্চিত যে এটি স্মরণকালের একটি বৃহত্তম জনসভা হবে।এর আগেও বার আউলিয়ার পুণ্যভূমি ও বিপ্লব তীর্থ চট্টগ্রাম থেকেই নেত্রী নির্বাচনী রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করেছিলেন ২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর লালদিঘি ময়দানে নির্বাচনী জনসভায় চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কথা রেখেছেন, সে অঙ্গিকার পূরণ করেছেন। সেই থেকে টানা ১৪ বছরে এই অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এবারও চট্টগ্রামের জনসভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রাজনৈতিক নির্দেশনা দেবেন বলে আশা করছেন দলীয় নেতারা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চতুর্থবারের মতো দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর শাসনামলে বাংলাদেশ অর্জন করেছেন অনেক যুগান্তকারী।এবার চট্টগ্রামে যেইসব প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে- পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে তিনটি প্রকল্প। সেগুলো হলো— জেলার ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, স›দ্বীপ উপজেলার ৭২নং পোল্ডারের ভাঙনপ্রবণ এলাকায় ¯েøাপ প্রতিরক্ষা কাজের মাধ্যমে পুনর্বাসন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প ও বাঁশখালী উপজেলার ৬৪/১এ, ৬৪/১বি এবং ৬৪/১সি পোল্ডারের সমন্বয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশের স্থায়ী পুনর্বাসন প্রকল্প কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে সীতাকুÐ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ফটিকছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রাউজান টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া কোতোয়ালি থানাধীন দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসার একটি ছয়তলা ভবন এবং সীতাকুÐ টেকনিক্যাল স্কুলে একটি পাঁচতলা ভবন ও একটি চারতলা প্রশাসনিক ভবন, ওয়ার্কশপ, একতলা সার্ভিস এরিয়া ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণসহ ভবন নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীনে কোতোয়ালি থানাধীন গুল-এ-জার বেগম সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবন, কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবন, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ১০ তলা অ্যাকাডেমিক ভবন, কুসুমকুমারী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবন, পূর্ব বাকলিয়া সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবন, মীরসরাই উপজেলার করেরহাট কে এম উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা ভবন, পাঁচলাইশ থানাধীন বন গবেষণাগার উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবন, বোয়ালমারী উপজেলাধীন হাজী মোহাম্মদ জানে আলম উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা ভবন, পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা ভবন, স›দ্বীপের সন্তোষপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা ভবন এবং ডবলমুরিং থানাধীন সরকারি সিটি কলেজে ১০ তলা অ্যাকাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হবে। পলোগ্রাউন্ড বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবন স¤প্রসারণ, সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের লালদিঘি মাঠের ছয় দফা মঞ্চ নির্মাণসহ সংস্কার কাজ এবং খুলশী থানাধীন সিএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবনের স¤প্রসারণ কাজও উদ্বোধন করা হবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে রয়েছে মীরসরাইয়ে হিংগুলি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র এবং লোহাগড়ায় চুনতি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিটাক চট্টগ্রাম কেন্দ্রের নারী হোস্টেল নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে নাসিরাবাদ শিক্ষানবিস প্রশিক্ষণ দফতর সংস্কার ও আধুনিকায়ন কাজ। উদ্বোধনের তালিকায় অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়ানহাটে হর্টিকালচার সেন্টারে একটি প্রশিক্ষণ ও অফিস, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন (প্রতিটি ৫০০০ বিএইচপি/ ৭০ টন বোলার্ড পুল) টাগবোট সংগ্রহ শীর্ষক প্রকল্প ও চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড এবং টার্মিনালের জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ শীর্ষক প্রকল্প। এসব প্রকল্পের বাইরে আরও চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেগুলো হচ্ছে- নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রামের মীরসরাই ও স›দ্বীপ অংশে জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ, আনোয়ারায় বাংলাদেশ মেরিন অ্যাকাডেমির আধুনিককরণ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান স্থাপন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনে চট্টগ্রামস্থ বিপিসি ভবন নির্মাণকাজ।
বাংলাদেশের উন্নয়ন সত্যিই তাক লাগানোর মতো। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র তকমা মুছে গেছে বহু আগে। এখন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো এক বিস্ময়ের নাম বাংলাদেশ। অনেক সূচকে দৃষ্টান্তস্থাপনকারী ‘মডেল’ দেশ। অন্য অনেক দেশের জন্য উৎসাহ, অনুপ্রেরণা আর অনুসরণীয় দেশের নাম ‘বাংলাদেশ’। এর ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে সক্ষম রাষ্ট্রের মূর্ত প্রতীক হিসেবে। শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের কলঙ্কতিলক মোচন করে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ জনপদ। প্রবাসী বাঙালিদের জাতি গঠন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের নিমিত্তে ৩টি অনাবাসী ব্যাংক স্থাপিত হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সমুদ্রে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে বøু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও ছিটমহল বিনিময়, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ- এতসব অর্জন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলেই হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়স দুই বছর বাড়িয়ে ৫৯ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়স বাড়িয়ে করা হয় ৬০ বছর। অর্জনের তালিকায় আরও আছে- কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, মহাসড়কগুলো চার লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণ, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫.৬০ শতাংশে উন্নীত করা। উন্নয়নের মহাসড়কে ধাবমান বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে দিবে সরকারের গৃহীত মেগা প্রকল্পগুলো। চট্টগ্রাম ঘিরে যেসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে তা সময়মতো শেষ হলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে যা এসডিজি অর্জন ও ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সহায়ক হবে। প্রধানমন্ত্রী যেসব মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন সেগুলো বাস্তবায়নে অর্থের সংস্থানও করে দিয়েছেন। কক্সবাজারের দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইন স্থাপন প্রকল্প, মীরসরাই, আনোয়ারা ও মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল, এলএনজি টার্মিনাল, কোরিয়ান ইপিজেড, আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, বে-টার্মিনাল, গভীর সমুদ্রবন্দর, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ অনেক বৃহৎ প্রকল্প উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এসব প্রকল্প পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম সারাদেশের মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব পাবে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বরাদ্দ হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধুর কৃষি ও পল্লী উন্নয়নের নীতির পথ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ খাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও পর্যাপ্ত আর্থিক বরাদ্দের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগ- আশ্রয়ণ, একটি বাড়ি একটি খামার, ঘরে ফেরা কার্যক্রম, দুস্থ ভাতাসহ ১৪৫টি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কার্যক্রম থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সুবিধা পাচ্ছিল। ১০০টি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক উদ্বোধন করা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লাখেরও বেশি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, কমিউনিটি ক্লিনিক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, বিনিয়োগ বিকাশ এবং পরিবেশ সুরক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান ও আয় বৃদ্ধির কার্যক্রম। ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) সাফল্যের পর ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে দেশ। এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় দেশের চিত্র বদলে গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশের এ আলোর পথের যাত্রা অব্যাহত থাকুক। আলোকবর্তিকা হয়ে বিশ্বের বুকে আলো ছড়াক। সেরাদের সেরা হয়ে উঠুক বাংলাদেশ এবং বঙ্গকন্যা এই প্রত্যাশা।
লেখক : উপাচার্য, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়