চট্টগ্রামে সিনেমা হলে চলছে বার্ধক্য সিনেপ্লেক্সের জয়জয়কার

29

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকার গুলজার মোড়। সিনেমাপ্রেমিরা গুলজার সিনেমা হলের নাম বলতে বলতে প্রচলন হয়েছে এ মোড়ের। এ নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে দুই-তিন দশক আগের পুরনো স্মৃতি। যেখানে জটলা বেধে থাকতো সিনেমাপ্রেমিরা। কিন্তু এখন সব সোনালী অতীত। গুলজার মোড় বলতে এখন ভেসে উঠে ইট-পাথরে তৈরি সুবিশাল শপিংমল। যেখানে এক সময় ছিল চট্টগ্রামের নামকরা সিনেমা হল ‘গুলজার’। তবে আশার আলো জাগিয়ে সিনেমা হলের যৌবন ফিরিয়ে আনছে মাল্টিমিডিয়া সিনেমা হল। চট্টগ্রামে দুই সিনেপ্লেক্সে চলছে জমজমাট সিনেমা।
সিলভার স্ক্রিনের ম্যানেজার (অপারেশন) সালাউদ্দীন মো. পারভেজ বলেন, সিনেমা ভালো হলে দর্শক আসে। যেমন ‘হাওয়া’ ও ‘পরাণ’ সিনেমার সময়ে। তখন দর্শক ছিল অনেক বেশি। এখন মেইড ইন চিটাগাংও মোটামুটিভাবে চলছে। সিনেমা ও সিনেমা হলের পরিবেশ ভালো হলে মানুষ হলমুখী হবে। অনেক সময় মানুষ হলের পরিবেশ খুঁজে আবার একশ্রেণির দর্শক বাড়তি টাকা দিয়ে নয় মোটামুটি ভালো পরিবেশ ও কম টাকায় সিনেমা দেখতে চাই।
স্টার সিনেপ্লেক্সের সিনিয়র ম্যানেজার (মিডিয়া) মেজবাহ উদ্দীন জানান, আমরা চট্টগ্রামে স্টার সিনেপ্লেক্স চালু করার পর দর্শকদের কাছ থেকে প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। আমরা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আরো লোকেশনে করার জন্য পরিকল্পনা করছি। শুধু আমরা সিনেমা হল করলে তো হবে না, ভালো সিনেমা, ভালো গল্প ও কন্টেন্ট দরকার। যে দেখে মানুষ সিনেমা দেখবে, সিনেমা হলমুখী হবে।
জানা যায়, এক সময় চট্টগ্রাম নগরে ২৭টি সিনেমা হল থাকলেও সময়ের সাথে সাথে বন্ধ হতে থাকে একের পর এক সিনেমা হল। বর্তমানে তা কমে হয়েছে তিনটিতে। কালের পরিক্রমায় এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে সাগরিকা, আকাশ, রঙ্গম, উজালা, ঝুমুর, জলসা, লায়ন, বনানী, সানাই, উপহার, রিদম, মেলোডি, সঙ্গীত, নূপুর, চাঁদনী, কর্ণফুলীসহ অনেক হল। সর্বশেষ বন্ধ হয়েছে আলমাস ও দিনার। শুধু নগর নয়, নগরীর বাইরের সীতাকুÐের বাড়বকুÐের পরাগ, ফটিকছড়ির নাজিরহাটের ঝংকার, ভাটিয়ারির বিএমএ সিনেমা হল, হাটহাজারীর রূপালী, পটিয়ার ছন্দা ও সবুজ সিনেমা হলও বন্ধ হয়ে গেছে । এছাড়াও বর্তমানে চালু থাকা সিনেমা হল দুইটি ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন কর্তৃপক্ষ।
সিনেমা হল বার্ধক্যতে যখন একে একে হারিয়ে যাচ্ছে তখন নব যৌবনে শুরু হয়েছে মাল্টিমিডিয়া সিনেমা হলের পথচলা।
চট্টগ্রামে ইতোমধ্যেই দুইটি ডিজিটাল সিনেমা হল চালু হয়েছে। একটি চট্টগ্রামের প্রথম সিনেপ্লেক্স ‘সিলভার স্ক্রিন’ ও মাল্টিমিডিয়া সিনেমা হল ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’। দুইটি হলেই রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণের দর্শক। বিশেষ করে ‘হাওয়া’ ও ‘পরান’ সিনেমা চলাকালীন সময়ে দর্শকের ভিড় ছিল উপচেপড়া। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে নতুন করে মাল্টিমিডিয়া হল করার জন্য পরিকল্পনা করছে স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। মাথা উচু করে এখনো দাঁড়িয়ে থাকা সিনেমা প্যালেস ও ঝুমুরের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সাঈদ হোসেন জানান, হাওয়া ও পরাণ মুভি রিলিজ হওয়ার পর থেকে দর্শক বেড়েছে। এখন আবার দর্শক নেই সিনেমা হলে। ভালো সিনেমা আসলে দর্শক আসবেই। আমাদের দেশে ভালো সিনেমা না হওয়ার কারণে দর্শক সিনেমা হলে আসতেছে না। এ সপ্তাহে সিলভার স্ক্রিনে চলছে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে নির্মিত মেঘলা মুক্তা অভিনীত ‘পায়ের ছাপ’ ও ‘কাগজ: দ্য পেপার’। স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘অবতার’ ও মেইড ইন চিটাগাং। এই দুই সিনেমা হলে নিয়মিত দর্শক আসলেও হাওয়া ও পরাণ সিনেমা চলাকালীন দর্শকদের বাড়তি চাপ ছিল বলে জানান কর্তৃপক্ষ।