চট্টগ্রামে সর্বদলীয় সভায় ৩ ভাষায় পোস্টার লেখার সিদ্ধান্ত

9

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কর্মসূচি অনুযায়ী চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম সর্বদলীয় সভা আহবান করা হয়। সভায় ছাত্র-যুবক-সংস্কৃতিসেবী-শ্রমিক-রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আলোচনার পর সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। পরিষদের প্রথম সভাতেই বাংলা, ইংরেজি ও উর্দু- এ তিন ভাষায় পোস্টার লেখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় তরুণ সাহিত্যিক মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী আহব্বায়ক এবং রেলওয়ে শ্রমিক লীগ নেতা চৌধুরী হারুনুর রশীদ ও আওয়ামী মুসলিম লীগের চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ যুগ্ম আহব্বায়ক নির্বাচিত হন। কমিটিতে আরও ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ ও শ্রমিক নেতা জহুর আহমদ চৌধুরী, আওয়ামী মুসলিম লীগ সভাপতি মোজাফফর আহমেদ ও মুসলিম লীগের এককালীন নেতা আমির হোসেন দোভাষ, আওয়ামী মুসলিম লীগ নেতা ডা. আনোয়ার হোসেন, জেলা মুসলিম লীগের একাংশের নেতা আজিজুর রহমান ও তমদ্দুন মজলিসের নেতা আজিজুর রহমান। বিভিন্ন ক্লাব ও যুব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন কৃষ্ণ গোপাল সেনগুপ্ত (কালাচাঁদ)। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিসেবীদের মধ্য থেকে শামসুদ্দিন আহমদ, তৎকালীন গণতন্ত্রী দলের অধ্যাপক মফিজুল ইসলাম, রুহুল আমিন নিজামী (উদয়ন পত্রিকার সম্পাদক) সুধাংশু ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও মহল্লা সর্দার শামসুদ্দিন জগলু, দোকান-কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা মনীন্দ্র মহাজন ও সুনীল মহাজন, তৎকালীন ছাত্রনেতা এমদাদুল ইসলাম ও আবু জাফর, ডা. সৈয়দুর রহমান, ডা. নুরুল আজিম, ডা. সরোজ দে প্রমুখ।
পরে সংগ্রাম পরিষদকে আরও বর্ধিত করা হয়। সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ থাকায় তাদের সরাসরি কোন প্রতিনিধি ছিল না। জেলার বিশিষ্ট সাহিত্যিক গোপাল বিশ্বাস কমিউনিস্ট পার্টি ও সংগ্রাম পরিষদের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করতেন।
এছাড়া সভায় তিন ভাষায় পোস্টার লেখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উর্দুভাষী পোস্টার লেখার কর্মীও এসে জোটে। কর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ লাগিয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজার, খাতুনগঞ্জ এলাকা থেকে দু’আনা একআনা করে চাঁদা তুলে পার্টির অফিসে জমা দিত। এ দিয়েই মাইক ও পোস্টারের খরচ চলত। আওয়ামী লীগ অফিস থেকে প্রচার কাজের জন্য প্রথমেই বের হন ওবায়দুল হক ও চকবাজারের সালেহ আহমদ। কর্মীরা ‘অ’ ‘আ’ ‘ক’ ‘খ’ বর্ণ লিখে তা নিয়ে মিছিল বের করত। প্রতিদিন সন্ধ্যায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার-স্কোয়াডগুলো পথসভা করে সংক্ষিপ্ত ভাষণে রাষ্ট্রভাষার দাবি সাধারণ জনতার কাছে তুলে ধরত। রাতের খাওয়া সেরে গণতন্ত্রী দল আর যুবলীগের কর্মীরা পোস্টার লাগাতে বের হতেন।