চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে প্রস্তুতি স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশ

22

করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে কমে যায় রোগী ভর্তি। খালি পড়ে থাকে নগরীর হাসপাতালগুলোর কোভিড ওয়ার্ডের শয্যাগুলো। তবে করোনার নতুন ভেরিয়েন্টে ওমিক্রনের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ায় হাসপাতালগুলো কোভিড ওয়ার্ডগুলো চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় শয্যা ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত করছে নগরীর ২৩ ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালগুলো। করোনা বাড়ার সাথে সাথে এসব হাসপাতালের নড়াচড়া শুরু হয়ে গেছে।
চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপতাল, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালসহ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে পুনরায় প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের এক জরুরি বৈঠকে হাসপাতালগুলোকে ওমিক্রন মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম জেলায় এখন পর্যন্ত মোট ১ লাখ ২ হাজার ৬৮১ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। যার মধ্যে নগরীর ৭৪ হাজার ৩০০ জন ও উপজেলার ২৮ হাজার ৩৮১ জন। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৩৩২ জন। তবে এখনও চট্টগ্রামে ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি।
এদিকে কোভিডের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের সময় চট্টগ্রামে সরকারি নিয়ন্ত্রণে সরকারি ও বেসরকারি নয়টি হাসপাতালকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। হাসপাতালগুলো হলো চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইটি), চট্টগ্রাম রেলওয়ে বক্ষবাধি হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল, হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল এবং করোনা আইসোলেশন সেন্টার। কভিডের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত এ হাসপাতালগুলোতে মোট শয্যা সংখ্যা ৮৬৬টি। এছাড়া আইসোলেশন সেন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা সংস্থা সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক এবং সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পূর্বদেশকে বলেন, চট্টগ্রামের কোভিড সংক্রমণের শুরু থেকেই সবার আগে জেনারেল হাসপাতাল রোগীদের চিকিৎসাসেবায় সর্বোচ্চ সহায়তা করেছে। ওমিক্রন ভয়াবহ বলে আমরা জেনেছি। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের ভয়াবহতার বিষয়টি সামনে নিয়ে হাসপাতালগুলোকে আবারো আগের মতো প্রস্তুতি নেয়ার কাজ শুরু করছি। যন্ত্রপাতিসহ সব বিষয় মোকাবেলায় হাসপাতালগুলো সর্বাত্মক সহায়তা করবে।
তিনি আরও বলেন, ওমিক্রন মোকাবেলায় জেনারেল হাসপাতালের কোভিড শয্যাগুলো রেডি আছে। আমরা ইতোমধ্যে নার্স ও ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেছি। তবে ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের সম্পর্কে আগাম কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে বিদেশ থেকে আসা যাত্রী বা প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সঙ্গে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের এক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল। এই পর্যন্ত হাসপাতালটিতে প্রায় ২১ হাজার করোনা রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। হাসপাতালে করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রণ মোকাবেলায় ১০০ শয্যার একটি ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একইসাথে রয়েছে ১৫টি আইসিউ শয্যা।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আজাদ পূর্বদেশকে বলেন, করোনার দুঃসময়ে বেসরকারি হাসপাতাল হয়েও মা ও শিশু হাসপাতাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। করোনার সংক্রমণ বাড়ার কারণে হাসপাতালটিতে ১৭২ শয্যার একটি কোভিড ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়। ২২টি আইসিউ শয্যার প্রস্তুত করা হয়। এদিকে নতুন ভেরিরেন্ট ওমিক্রণ মোাকবেলায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ১০০ শয্যার একটি কোভিড ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে।
সার্বিক প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ওমিক্রন নিয়ে সতর্ক অবস্থানে আছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।