চট্টগ্রামে শুরু একুশে বইমেলা মেলার শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর নজরদারি প্রয়োজন

16

 

বৈশ্বিক মাহামারি করোনার কারণে গতবছর ২০২১-এ চট্টগ্রামে অমর একুশে বইমেলার আয়োজন শেষ পর্যন্ত বাতিল হলেও এবার থেমে থাকেনি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. রেজাউল করিম চৌধুরীর একান্ত সদিচ্ছায় এবং সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদসহ প্রকাশক, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিকদের সহযোগিতায় শুরু হয়েছে বইমেলা। গত রবিবার বিকেলে নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে মেলা উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র এম. মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায়, ব্যাপক সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, লেখক-পাঠকদের উপস্থিতিতে এ মেলার উদ্বোধন করা হয়। এ মেলা চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, রাজধানী ঢাকার পর এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বইমেলা, যেখানে ঢাকার পঞ্চাশের অধিক প্রকাশনীসহ চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশনীগুলো অংশগ্রহণ করেছে। মেলা কমিটি সূত্রে জানা যায়, মোট ১২১টি স্টল এ মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্নার, শিশু কর্নার, নারী কর্নার, লেখক কর্নার, সাংবাদিক কর্নার ও ফুড কর্নার খোলা হয়। পৃথকভাবে মোড়ক উন্মোচনের সেশন কর্ণারও রয়েছে। রয়েছে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার ডিজিটাল ডিসপ্লে সেন্টার। দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবরে জানানো হয়, করোনা মহামারীর কারণে গত বছর বইমেলা হতে না পারায় এবারের মেলা বেশ জমজমাট রূপ ধারণ করবে বলে আশা করছেন প্রকাশকরা। তবে বইমেলা নিয়ে উদ্বোধনের কয়েকদিন আগে একটি মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানারকম অপপ্রচার চালিয়ে আসছিল যে, বইমেলা ইসলামি বই-এর প্রকাশকদের স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়নি, ইসলামি বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ জাতীয় অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্য মেলাকর্তৃপক্ষ সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন, তাদের দাবি মেলায় কোন ইসলামি বই নিষিদ্ধ করা হয় নি, এখানে চট্টগ্রামের বেশকিছু স্বনামধন্য ইসলামি আধ্যাত্মিক প্রকাশনাকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে ইসলাম বিকৃতকারী, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ সৃষ্টি হয়-এমন বই মেলায় আসতে দেয়া হবেনা। মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বইমেলার উদ্বোধনী বক্তব্যে এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলেন, একটি মহল মেলায় ইসলামী বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। আমি বলতে চাই, এ ধরনের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে বইমেলায় স্বাধীনতাবিরোধী ও মৌলবাদী কোন বই প্রদর্শিত হতে পারবে না। মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের প্রচার হয় এমন বই মেলায় আসতে পারবে না। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ করে, রক্ত দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছি। ভাষার জন্য পৃথিবীতে একমাত্র বাঙালি জাতিই রক্ত দিয়েছে। মেয়র আরও বলেন, এ ধরনের অপপ্রচার একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ছিল। সেই স্বাধীনতাবিরোধী প্রেতাত্মারা এখনও আছে। বইমেলাতে অনেক ইসলামী বইয়ের প্রকাশকও রয়েছেন। আপনারা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসকল অপপ্রচার প্রকাশ হওয়ার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর সতর্কতার মধ্যে রয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরের দিন সকালে মেলা সংলগ্ন মসজিদের সামনে থেকে দুইজন সন্দেহভাজন লোককে গ্রেফতারের পর মেলার প্রবেশমুখে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। একটিমাত্র প্রবেশদ্বার ও বহিঃদ্বার উন্মুক্ত রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। এ কড়াকড়ি সাধারণ পাঠক ও দর্শনার্থীদের সাময়িক বিরক্তের কারণ হলেও মেলার শৃঙ্খলা রক্ষায় বিকল্প উপায় আছে বলে মনে হয়না। এছাড়া মেলা কমিটির পক্ষ থেকেও মঞ্চ ব্যবস্থাপনায় সার্বক্ষণিক চসিক পরিচালিত বিভিন্ন স্কুল কলেজের বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, গার্লস গাইড, রেইঞ্জার ও রেডক্রিসেন্ট দল স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এবং চসিকের আনসার বাহিনীও পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছে। আমরা মনে করি, চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের বইমেলার আয়োজনে যারা গুজব ও অপপ্রচার ছড়িয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি। আমরা আশা করি, গুজব আর অপপ্রচার যাই হোক, চট্টগ্রামবাসী এসব গুজবে কান দেবে না। মেলাপ্রিয় চট্টগ্রামবাসী, বিশেষ করে গত কয়েকবছরে বইমেলার প্রতি তাদের যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা গেছে এবার তা আরো বৃদ্ধি পাবে- এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।