চট্টগ্রামে যুবলীগের কমিটি গঠন কার্যক্রম শুরু

104

রাহুল দাশ নয়ন

পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্ধিত সভা করছে যুবলীগের কেন্দ্রীয় টিম। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটির পর আজ বান্দরবানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বর্ধিত সভা। গত দুইটি সভাতে সংগঠনকে চাঙা রাখতে কমিটি গঠনের দিকেই জোর দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্ধিত সভা করে সংগঠন চাঙার বার্তা দিলেও চট্টগ্রামের উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর যুবলীগ সেই পুরানো ধারাতেই। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে সংগঠন চলছে নিরবে। কেন্দ্র থেকে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিলেও চট্টগ্রামের নেতাদের সেদিকে আগ্রহ নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ তিন কমিটি ৮, ৯ ও ১১ বছরের পুরানো। তবে সব কমিটিই নতুনভাবে করার উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা পার্বত্য এলাকায় বর্ধিত সভা করছি। এ সভাগুলো থেকে সংগঠন গুছাতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দেয়া হচ্ছে। নতুন করে সবগুলো কমিটি সাজানো হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরেই চট্টগ্রাম যুবলীগের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’
জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের আহব্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আহব্বায়ক ও দেলোয়ার হোসেন খোকা, দিদারুল আলম, ফরিদ মাহমুদ, মাহবুবুল হক সুমনকে যুগ্ম আহব্বায়ক করা হয়। এ কমিটি গঠনের পর থেকে ছয়টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন ছাড়া নেতাকর্মীদের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। আট বছরেও নতুন কমিটি গঠন না হওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে আহব্বায়ক কমিটির পাঁচ নেতা বিভিন্ন সময় গ্রæপিং বিভাজন ও পৃথক কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকেন। নেতাকর্মীরা বলেন, নগর যুবলীগের বর্তমান কমিটির নেতারা আওয়ামী লীগে পদ মিলবে না এ শঙ্কায় কমিটি ছাড়তে চাইছেন না।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহব্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা পূর্বদেশকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে কোনও নির্দেশনা দেয়া হয়নি। ইতোমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি টিম সফর করছে। উনাদের চট্টগ্রামেও সফর করার কথা। কেন্দ্র থেকে সাংগঠনিকভাবে যে নির্দেশনা দেয়া হবে আমরা সেভাবেই পালন করবো।’
২০০৩ সালে সর্বশেষ মফিজ উদ্দিনকে সভাপতি ও শফিউল আজমকে সাধারণ সম্পাদক করে উত্তর জেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। ২০১২ সালে কেন্দ্রীয় যুবলীগের পক্ষ থেকে সীতাকুন্ডের এসএম আল মামুনকে সভাপতি ও হাটহাজারীর এইচএম রাশেদুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে এ কমিটি পুনর্গঠিত করা হয়। এ দুইজনই বর্তমানে উত্তর যুবলীগের সর্বেসর্বা। ইতোমধ্যে যুবলীগ সভাপতি এসএম আল মামুন সীতাকুন্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল আলম হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
২০১০ সালে আ ম ম টিপু সুলতানকে সভাপতি ও পার্থ সারথি চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটি করা হয়। আংশিক এ কমিটি ঘোষণার আরোও দুই বছর পর ঘোষণা করা হয় তিন বছর মেয়াদী পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এখন যুগ ছুঁইছুঁই হলেও কমিটি গঠনের কোনও উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে কিছু কিছু উপজেলায় সরাসরি কেন্দ্র থেকেই কমিটি গঠন হওয়ায় সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ.ম.ম টিপু সুলতান চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘সারা দেশব্যাপী যেভাবে বর্ধিত সভা হচ্ছে সেভাবে চট্টগ্রামেও হবে। আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। হয়তো পাবর্ত্য চট্টগ্রামের পর উত্তর, দক্ষিণ ও নগরে সাংগঠনিক কর্মসূচি দিবে। সংগঠন চাঙা করতে নেতারা চট্টগ্রামে সফর করবেন। এ সফর থেকেই নেতারা বর্ধিত সভা আয়োজন করে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হবে।’
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর জাতীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের নতুন কমিটি গঠিত হয়। এ সম্মেলনে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশকে চেয়ারম্যান ও মাইনুূল হোসেন খান নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর গত বছরের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম যুবলীগের সাথে প্রতিনিধি সভায় মিলিত হন এই দুুই শীর্ষ নেতা। তখন কেন্দ্রীয় যুবলীগের দুই শীর্ষ নেতা কমিটি গঠনের বিষয়ে চট্টগ্রামের দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশনা দেন। এ নির্দেশনার এক বছর পরেও কমিটি গঠন হয়নি। এখন নতুন করে প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিটে বর্ধিত সভা করে কমিটি গঠনের জন্য তোড়জোড় শুরু হয়েছে।