চট্টগ্রামে বুস্টার নিয়েছেন দুই ডোজ নেওয়াদের ২৫ শতাংশ

30

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামে কয়েকদিন ধরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত ৭ দিনে চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪২১ জন। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত বুধবার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা প্রস্তুত রাখাসহ ৮ নির্দেশনা দিয়েছে সিভিল সার্জন। সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে করোনার টিকার বুস্টার ডোজ নিতে অনীহাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। চট্টগ্রামে করোনা টিকার দুটি ডোজ নেয়াদের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। টিকাদানের এ পরিস্থিতি চিন্তায় ফেলেছে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৭২ লাখ ২৯ হাজার ১৯৬ জন। তাদের মধ্যে ৬৭ লাখ ৮৮ হাজার জন নিয়েছেন দ্বিতীয় ডোজ। অপরদিকে বুস্টার ডোজ নিয়েছেন তাদের ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ১৭৬ জন। যা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নেয়াদের ২৫ শতাংশের কম। এদিকে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে। গত ৭ দিনে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৪২১ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার ৫১১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে জেলায় ৭০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। একইসাথে চট্টগ্রামে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৪ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক মানুষ বুস্টার ডোজ না নিলে ‘ইমিউনিটি’ তৈরি হবে না। এতে সংক্রমণের বৃদ্ধি ঠেকানো কঠিন।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, চট্টগ্রামে বুস্টার ডোজ নিয়েছেন তাদের ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ১৭৬ জন। দ্বিতীয় ডোজের সাথে তুলনা করলে বুস্টার ডোজ গ্রহণের হার খুবই কম। আরও কমপক্ষে ৫০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। কিন্তু এসএমএস পাঠানোর পর অনেকে টিকা নিতে আসছেন না। প্রতিদিন যে টিকা বরাদ্দ দেয়া হয়, তার এক তৃতীয়াংশ ফেরত আসে। তিনি বলেন, এখন লক্ষণ দেখা দিলেও মানুষের মধ্যে টেস্ট করানোর আগ্রহ নেই। আমাদের হাতে থাকা কিটের মধ্যে কিছুর মেয়াদ আগামী নভেম্বরে শেষ হয়ে যাবে। এছাড়া সরকারি ব্যবস্থাপনায় অ্যান্টিজেন টেস্ট করাতেও খুব কম লোক আসেন। কিন্তু লক্ষণ থাকলে অবশ্যই পরীক্ষা করানো উচিত। উপজেলাগুলোতেও সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। সামনে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পশুর হাট বসবে। প্রতিটি হাটে দিনে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হবে। শুধু জেলা না, হাটগুলোতে সারাদেশ থেকে মানুষ আসবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুর রব বলেন, স্কুলের শিশু-কিশোরদের মধ্যে বুস্টার ডোজ নেওয়ার প্রবণতা খুবই কম। এছাড়া একেবারে শুরুতে বুস্টারের বিষয়ে যে বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল, তাতে সম্ভবত মানুষের মনে ধারণা হয়েছে বুস্টার শুধু বয়স্কদের জন্য। আবার অনেকে এখনো অপেক্ষা করেন কখন এসএমএস আসবে তারপর বুস্টার নিতে কেন্দ্রে যাবেন। অথচ এখন দ্বিতীয় ডোজের পর চার মাস পার হলেই বুস্টার ডোজ নেওয়া যায়। এটা হয়ত অনেকে জানেন না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কোভিড রোগীদের জন্য বিশেষ শয্যা প্রস্তুত, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রস্তুতি, অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা, সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার, পরীক্ষা বাড়ানো, সন্দেহভাজনদের অ্যান্টিজেন টেস্ট এবং প্রয়োজনে পিসিআর টেস্ট করাসহ আটটি নির্দেশনা দিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়।
এদিকে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করাতে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভিড় করছেন অধিকাংশ মানুষ। সরকারি হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা সহজলভ্য হলেও বেশি দামে মানুষ নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে। কারণ সরকারি হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহে যতœশীল না হওয়া এবং রিপোর্ট পেতে দেরী হওয়ায় মানুষ টাকা বেশি হলেও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পরীক্ষা করাচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালে করোনা নমুনা পরীক্ষা ও এন্টিজেন টেস্ট ফি ১০০ টাকা করে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫১১ জনের। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা হয়েছে ১৮০ জনের এবং বেসরকারি হাসপতালে পরীক্ষা হয়েছে ৩৩১ জনের। এন্টিজেন টেস্ট করেছে ৮০ জন। গত বুধবার ৫২১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করেছে ৪৯ জন, যাদের ১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর বেসরকারি হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করেছে ৪২৩ জন, যাদের মধ্যে ৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া এন্টিজেন টেস্ট হয়েছে ৪৯ জনের।
গত ২৮ জুন করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪৮৬ জনের। এরমধ্যে সরকারি হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৬৩ জনের। আর বেসরকারি হাসাপতাল ও ক্লিনিকে নমুনা পরীক্ষা করিয়েছে ২৯৮ জন। এন্টিজেন টেস্ট করিয়েছে ২৫ জন।
পরীক্ষা করতে আসা রোগীরা জানান, নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে সরকারি হাসপাতালে ভোগান্তি বেশি পোহাতে হয়। সে তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালে ভোগান্তি কম।