চট্টগ্রামে প্রস্তুত ১৭ হাজার ৭৩০ তথ্য সংগ্রহকারী

51

সবুর শুভ

চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রথমবারের মতো হচ্ছে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) পদ্ধতির জনশুমারি ও গৃহগণনা জরিপ। জরিপে তথ্য সংগ্রহ করা হবে কম্পিউটার এসিসটেড পারসনাল ইন্টারভিউং (সিএপিআই) পদ্ধতিতে। চট্টগ্রামে জনশুমারির তথ্য সংগ্রহে রাখা হয়েছে ৭ জন জেলা শুমারি সমন্বয়কারী, ৩০ জন উপজেলা শুমারি সমন্বয়কারী, ১৮৮ জন জোনাল অফিসার এবং ১৭ হাজার ৫০৫ জন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহকারী।
এই শুমারি দ্রæত, সহজ ও নির্ভুলভাবে পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া এবং প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেশের ৬ষ্ঠ এই জনশুমারি আগামী ১৫ জুন থেকে শুরু হয়ে চলবে ২১ জুন পর্যন্ত। কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশসমূহের নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে জনশুমারিতে অন্তর্ভূক্তির প্রত্যয়ন পত্রটি সহায়ক হবে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, শুমারি আগে কয়েক দফা হলেও এবারই প্রথম জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) বা ভৌগলিক তথ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ভৌগোলিক উপাত্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনের জনশুমারি জরিপ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশের সবগুলো জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নের শুমারি বøক-গণনা এলাকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
এই বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে এবারই প্রথম জিআইএস ব্যবহার করে জনশুমারি করা হবে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার, মাইকিং, গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা। এসবের মধ্যদিয়ে মানুষজন সচেতন হবে। জনশুমারি অংশগ্রহণ করবে। এতে সফল হবে আমাদের পুরো প্রোগ্রাম। তিনি আরও বলেন, ভৌগলিক অবস্থানভিত্তিক জনসংখ্যার হিসাব নিরূপণ, গৃহ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান সরবরাহ, জাতীয় সম্পদের বণ্টন (বাজেট), নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ ও সরকারি চাকরিতে কোটা নির্ধারণের মতো বিষয়গুলো হচ্ছে এবারের শুমারির বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তথ্য সরবরাহ করা হবে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৯৭৪ সালে স্বাধীন দেশে প্রথমবারের মত জনশুমারি পরিচালিত হয়েছিল। তখন দেশে মোট জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ৩ কোটি ৭১ লাখ এবং মহিলা ৩ কোটি ৭৪ লাখ। দেশে দ্বিতীয় জনশুমারি পরিচালিত হয়েছিল ১৯৮১ সালে। তখন মোট জনসংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৯৯ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৬৩ লাখ এবং মহিলা ৪ কোটি ৩৬ লাখ। তৃতীয় জনশুমারি পরিচালিত হয়েছিল ১৯৯১ সালে। তখন মোট জনসংখ্যা ছিল ১১ কোটি ১৫ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ৭৩ লাখ এবং মহিলা ৫ কোটি ৪২ লাখ। চতুর্থ জনশুমারি পরিচালিত হয়েছিল ২০০১ সালে। তখন মোট জনসংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ৫ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৭৭ লাখ এবং মহিলা ৬ কোটি ২৮ লাখ। পঞ্চম জনশুমারি পরিচালিত হয়েছিল ২০১১ সালে। তখন মোট জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৯৮ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ৭ কোটি ৫০ লাখ এবং মহিলা ৭ কোটি ৪৮ লাখ।
সরকারের নীতি নির্ধারণী দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে খাদ্যপণ্যের সঠিক চাহিদা ও উৎপাদনের তথ্য পুরোপুরি নেই। শুধু এসব ক্ষেত্রে নয়, জনসংশ্লিষ্ট তথ্যের ওপর ভর করে যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে তার সবকিছুতেই তথ্যহীনতা রয়েছে। এতে ঠিকমতো পরিকল্পনা করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে এক ধরনের বিশৃংখল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় সংশ্লিষ্ট সকলকে। সবক্ষেত্রে শৃংখলা আনতেই জনশুমারির মাধ্যমে নির্ভুলভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব ড. শাহনাজ আরেফিনের দেয়া তথ্যমতে, শুমারিকর্মী হিসেবে ৩ লাখ ৭০ হাজার গণনাকারী, ৬৪ হাজার সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়েছে জনশুমারির তথ্য সংগ্রহে। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়টিও সম্পন্ন হয়েছে।