চট্টগ্রামে জমজমাট কেনাকাটা

29

নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে জমে উঠেছে ঈদ কেনাকাটা। সকাল ১০টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত চলছে বেচা-বিক্রি। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে মার্কেটগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি ততই বাড়ছে। এভাবে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত চলবে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
দোকানিরা জানিয়েছেন, ১০ রমজানের পর থেকে এবার জমে উঠেছে ঈদ-কেন্দ্রিক কেনাকাটা। তবে ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, ফিক্সড প্রাইস তথা একদামে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে আমাদের ঠকানো হচ্ছে।
ক্রেতাদের অভিযোগের প্রমাণও পেয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল সোমবার নগরীর সানমার ওশান সিটি শপিং সেন্টারের বাটা শো-রুমে পুরনো জুতোয় বেশি দামের নতুন প্রাইস ট্যাগ লাগানোর প্রমাণ পায় ভোক্তা অধিকার। তারা একটি জুতোর ১৯৯৯ টাকার ট্যাগ উঠিয়ে ২২৯৯ টাকার নতুন ট্যাগ বসায়। বিষয়টি অভিযানকালে প্রমাণিত হয়। এ অপরাধে সতর্ক করাসহ বাটা জুতোর শো-রুমটিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সানমারে আসা ক্রেতা মারুফুল ইসলাম বলেন, মানে ভাল পাওয়ার আশায় সানমারের মত শপিং সেন্টারে এসেছি। কিন্তু এখানেও আমাদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। মানুষের প্রতি বিশ্বাস দিন দিন উঠে যাচ্ছে।
এদিকে, গত দুই বছর করোনার কারণে নানা বিধিনিষেধ থাকায় আশানুরূপ ব্যবসা ষ পৃষ্ঠা ৭, কলাম ১.
ষ প্রথম পৃষ্ঠার পর
করতে পারেননি দোকানিরা। এবার রাষ্ট্রীয় কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় এবং ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তারা বলছেন, ১০ রমজানের পর থেকে বিক্রি বেড়েছে। শেষ দিকে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।
গত রবিবার সরেজমিনে নগরীর টেরিবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর থেকে মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় লেগে আছে। সকাল থেকে রাত ২টা পর্যন্ত চলে কাপড় বিক্রি। এক সময় কাপড়ের পাইকারি বাজার হিসেবে এই বাজারের খ্যাতি থাকলেও সময়ের ব্যবধানে খুচরা কেনাকাটার জন্যও টেরিবাজার সুনাম কুড়াচ্ছে বেশ। কাপড়ের পাইকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সময়ের বিবর্তনে এখানে স্থান করে নিয়েছে আধুনিক শপিংমল ও মেগাশপ।
রহিমা আক্তার তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন টেরিবাজারে। তিনি বলেন, ঈদের সময় যত এগিয়ে আসবে ততই ভিড় বাড়বে। আজ কিছু কাপড় কিনতে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম রাতে ঝামেলা কম হবে। রাতেও দেখি অনেক ভিড়। একসঙ্গে অনেক দোকান থাকা এবং ভিন্ন ভিন্ন কালেকশন থাকার কারণে প্রতি বছর টেরিবাজার থেকেই কেনাকাটা করি।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, শবে বরাতের পর থেকে রমজান শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত পাইকারি হিসেবে প্রচুর বিক্রি হয়েছে। তারপর প্রথম রমজান থেকে ১০ রমজান পর্যন্ত বিক্রি কিছুটা কম হয়েছে। তবে ১০ রমজানের পর থেকে এখন ভাল বিক্রি হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করছি। এছাড়া রমজানের শেষ দিকে বেচাকেনা বেড়ে যায়।
টেরিবাজারের জিএম মেগামার্ট মেগা শপিং মলের পরিচালক রেজাউল করিম মিথুন বলেন, করোনার কারণে দুই বছর ঈদে তেমন বিক্রি হয়নি। এ বছর বিক্রি শুরু হয়েছে। আগের চেয়ে ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। তবে দুই বছর পর যেমন বিক্রির আশা করেছিলাম, তেমন হচ্ছে না।
অন্যদিকে নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজার ক্রেতাদের জন্য খুবই জনপ্রিয়। ঈদকে ঘিরে নগরীর সবচেয়ে বড় এ বাজারে ধনী-গরিব সব শ্রেণির ক্রেতার সম্মিলন ঘটে এখানে।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে রকিবা সোলতানা রুফু নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, পরিবারকে সাথে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছি। অন্য বছরের তুলনায় কাপড়ের দাম বেশি বলে মনে হচ্ছে। ঝামেলা এড়াতে সকালের দিকেই চলে এসেছি মার্কেটে।
টেরিবাজার ও রেয়াজউদ্দিন বাজার ছাড়াও নগরীর নিউ মার্কেটের বিপণীবিতান, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, সানমার ওশান সিটি, সিটি সেন্টার, ফিনলে সেন্টার, আমিন সেন্টার, ভিআইপি টাওয়ার, মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, আখতারুজ্জামান সেন্টারে ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে।
শুধু ভিআইপি, মধ্য ও নি¤œবিত্তদের মার্কেট নয়। হকার্স মার্কেটগুলোতেও চলছে জমজমাট ঈদ বেচাকেনা। জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল আমিন পূর্বদেশকে বলেন, বিক্রি মোটামুটি আছে। রোজার প্রথম দিকের তুলনায় এখন বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে। মার্কেট জমজমাট হতে শুরু করেছে। আশা করছি সামনে বিক্রি বাড়বে। যারা চাকরিজীবী তাদের অনেকেই এখনও বেতন-বোনাস পায়নি। বেতন-বোনাস পেলে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, রোজার শেষ দিকে আমাদের বিক্রি বাড়ে। কিন্তু এই সময়ে মার্কেটের আশপাশের সড়কে জব্বারের বলি খেলাকে কেন্দ্র করে মেলা দেওয়া হচ্ছে। ২৪, ২৫ ও ২৬ তারিখ মেলা চললে ক্রেতারা এখানে আসতে চাইবে না। মেলার কারণে যানজট তৈরি হবে। ফলে ক্রেতারা মার্কেটে আসতে পারবে না। তাই আমাদের দাবি মেলা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হোক।
আবার ঈদ কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে মার্কেটকেন্দ্রিক যানজট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে নগর ট্রাফিক পুলিশ। মার্কেটকেন্দ্রিক সবচেয়ে বেশি যানজট হচ্ছে ট্রাফিকের দক্ষিণ ও উত্তর বিভাগে। দুই জোনে ছোট বড় তিন শতাধিক মার্কেট রয়েছে। এরমধ্যে রেয়াজউদ্দিন বাজার ও টেরিবাজরের ২৮৮ মার্কেটে কোন পার্কিং ব্যবস্থা নেই। এতে ঈদ বাজার কেন্দ্রিক যানজট নিরসনে বিপাকে পড়ছে ট্রাফিক পুলিশ। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যানজট নিরসনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে যানজট নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে মার্কেটকেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে।
সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ পূর্বদেশকে বলেন, আমরা যানজট নিরসনে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। স্কুল-কলেজ খোলা, সরকারের উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। এছাড়া নগরীতে গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও সড়কের প্রশস্ততা বাড়েনি। তারপরও ট্রাফিক বিভাগের কোন কমতি নেই। মার্কেটকেন্দ্রিক অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে আমরা সর্বোচ্চ কাজ করে যাচ্ছি।