চট্টগ্রামে গ্যাস-সংকট নিরসনে স্থায়ী উদ্যোগ চাই

19

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর নগরী ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। এ নগরীর অভ্যন্তরে ও বাইরে রয়েছে বৃহৎ কয়েকটি শিল্পজোন। এ নগরীতে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিভিউশনের প্রধান কার্যালয়। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, এ নগরীর মানুষ এবং চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হয়না। এখানে গ্যাস আসে সমুদ্রে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে। যা ঘূর্ণিঝড়ের আবাস পেলে বন্ধ হয়ে যায়। সেই সাথে বন্ধ হয়ে যায় নগরীর চুলা, কল-কারখানা ও গ্যাস চালিত গাড়ির চাকা। এর প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতির ওপর আর চট্টগ্রামবাসী ভোগে মনস্তাত্বিক যাতনায়। দৈনিক পূর্বদেশে গত মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, গত রবিবার মোখা নামক প্রবল ঘূর্ণিঝড় না আসলে হয়ত চট্টগ্রামবাসী জানতনা আমাদের গ্যাসের কী করুণ অবস্থা! চট্টগ্রামের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ নগরী ও শিল্পাঞ্চলে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হয়না-এটি শুনতেই অবাক লাগে। আমরা দেখেছি ঘূর্ণিঝড়ের আগাম প্রভাব দেশের উপকূলীয় এলাকায় পড়ার আগেই চট্টগ্রাম নগরীর ঘরে ঘরে তার ধকল সইতে হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগে পরে দীর্ঘ ৫দিন প্রায় নগরীর কোন বাসা-বাড়িতে চুলা জ্বলেনি। এসময় মানুষের হাহাকার চোখে পড়ার মত ছিল। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীদের ঠিকমত খাবার দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল। এসময় বাধ্য হয়ে নগরবাসীকে জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের দাবিতে আন্দোলনও করতে হয়েছে। সামগ্রিকভাবে বলা যায়, গ্যাস নিয়ে চট্টগ্রামে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে। সরকারের উচিৎ চট্টগ্রামের মানুষের এ দুঃখবোধ আমলে নিয়ে জরুরিভিত্তিতে চট্টগ্রামে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া। সূত্র জানায়, এলএনজি সরবরাহ চালু হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে সংকটের সময়ও চট্টগ্রামের সঙ্গে ২৪ ইঞ্চি ব্যাসের সঞ্চালন লাইন থাকলেও জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস মিলছে না। অথচ ঘূর্ণিঝড় মোখার পর এলএনজি সরবরাহ সীমিত পরিমাণে চালু হলেও এখানে সংকট রেখে এলএনজি দেশের অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে মহেশখালী থেকে ২৭০ মিলিয়ন এলএনজি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে চট্টগ্রামে ১৫০ মিলিয়ন বরাদ্দ দিয়ে বাকি ১২০ মিলিয়ন অন্যত্র এলএনজি চালু হলেও চট্টগ্রামে গ্যাস-সংকট কাটেনি। এখনো বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা, সিএনজি ফিলিং স্টেশন, ক্যাপটিভ পাওয়ার চালু করা যায়নি। সকালে গ্যাস সরবরাহ চালু হলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত আবাসিক, বাণিজ্য ও শিল্পে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরেনি। গ্যাসচালিত গণপরিবহনের গাড়ি, প্রাইভেট গাড়ি ও সিএনজি অটোরিকশায় গ্যাস পাওয়া যায়নি। ফলে গতকালও সারা দিন নগরীতে গণপরিবহনের সংকট বিরাজ করছে। সড়কে গাড়ি সংকটে কর্মজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। গাড়ি-সংকটে সিএনজি অটোরিকশাগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করেছে। সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও গ্যাস মেলেনি। জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, এখন একটি টার্মিনাল থেকে ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। এলএনজিবাহী কার্গো ঘূর্ণিঝড়ের আগে গভীর সমুদ্রে রাখা হয়েছিল। এখন কার্গো নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে বুধবার থেকে দৈনিক ৪৫০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ দেওয়া যাবে।’
জানা যায়, চট্টগ্রাম যখন গ্যাসহীন ছিল তখন দেশের অন্যান্য অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ ছিল। কিন্তু সংকটের সময় জাতীয় গ্রিড থেকে এক ফোঁটা গ্যাস চট্টগ্রামে সরবরাহ দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম-বাখরাবাদ পাইপ লাইনে টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে সরবরাহ দেওয়া যায়নি। কারণ চট্টগ্রামে পৌঁছানোর আগেই কুমিল্লা, ফেনী ও মহাসড়কের পাশে থাকা গ্রাহকরা পাইপ লাইন থেকে গ্যাস নিয়ে নেবেন।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (বিপণন দক্ষিণ) বলেন, চট্টগ্রামে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। সার কারখানা ও বিদ্যুকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া যাচ্ছে না। পাইপ লাইনে চাপ স্বাভাবিক থাকবে। চট্টগ্রামে গ্যাস-সংকট দীর্ঘদিনের। বর্তমানে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তার মধ্যে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বরাদ্দ পাওয়া গেলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক রাখা যায়। এখানে গ্যাসের কারণে অনেক শিল্পকারখানা চালু করা যাচ্ছে না। আমরা জেনেছি চট্টগ্রামের চেম্বারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা হয়েছে, তারা আশ্বস্থ করেছে, সহসাই চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। আমরাও বিশ্বাস করি ভাসমান টার্মিনালগুলো জেটিতে নিয়ে আসা হলে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। তবে চট্টগ্রাম বাসীর প্রত্যাশা চট্টগ্রামকে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে নির্ভর করে না রেখে স্থায়ীভাবে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে এতোমধ্যে অবগত হয়েছেন। চট্টগ্রামের গুরুত্বকে অনুধাবন করে এ অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে-এমটি প্রত্যশা সকলের।