চট্টগ্রামে কলেরা রোগী বাড়ছে এখনই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি

14

কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম নগরীতে ডায়রিয়া ও কলেরা রোগীর বৃদ্ধির খবরে এ সম্পাদকীয় স্তবকে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দেয়া হয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম সিটি কর্পোরেশন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও চট্টগ্রাম ওয়াসা এ বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করে ডায়রিয়া রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেবে। কিন্তু বুধবার দৈনিক পূর্বদেশে এ সংক্রান্ত প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, সাধারণ ডায়রিয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও নগরীর বেশ কিছু এলাকায় কলেরার লক্ষণও দেখা গেছে। ক্রমান্বয়ে কলেরা রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এ খবর নিঃসন্দেহে চট্টগ্রামবাসীর জন্য উদ্বেগের। করোনা মহামারিসহ জীবনের বিভিন্ন বাঁকে নানা সংকট কাটিয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যেসময় দায় হয়ে পড়েছে, সেই ক্রান্তিকালে কলেরার মত দুরারোগ্য হাতছানি দেয়া মানে অনিবার্য বিপদের মুখোমুখি হওয়া। বিশ্বব্যাপী মহামারি আর যুদ্ধের দামামার মধ্যে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও উরোপের বিভিন্ন দেশে পানির স্তর শুকিয়ে যাওয়া, খাল, বিল, নদী-নালার পানি শুকিয়ে মাটির ফাটল দেখা দেয়া। অনেক দেশের নাগরিক এখন সুপেয় পানি পাচ্ছেনা। পেটের পিড়াসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মানুষ অসহায়ত্ব বরণ করছে। আমাদের দেশ নদীমাতৃক দেশ হলেও চট্টগ্রামসহ অনেক অঞ্চলে পানির স্তর একেবারে কমে গেছে। সলো টিউবওয়েলগুলোতে পানি উঠছেনা, ডিব টিবওয়েলগুলোতে আইরনের পরিমাণ বেশি, ঘোলা ও ময়লাযুক্ত পানি। ওয়াসার উপর ভরসা রাখা তো দায় সবসময় ছিল। এ অবস্থায় নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় ডায়রিয়া কোন কোন এলাকায় কলেরার নমুনা পাওয়া খবরে আমাদের জন্য মোটেই সুখকর নয়। একসময় কলেরা মহামারি আকারে প্রবেশ করেছিল। পাঁচ থেকে চার দশক আগে তৎকালিন সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নানা উদ্যোগ ও দ্রæত ব্যবস্থার ফলে কলেরা এখন সাধারণ রোগেই পরিনত হয়েছে। এর সুচিকিৎসাও আছে। শিশুদের জন্য নিয়মিত টিকাও প্রদান করা হয়। এতকিছুর পরও আবারও কলেরা রোগের বিস্তার ঘটা মানেই নগরী ও উপজেলায় খাবার পানি দূষিত হচ্ছে অথবা পানিয়ব্যবহারে তৈরি খাবার দূষিত হচ্ছে। এ বিষয়গুলোর সিভিল সার্জন কার্যালয়, সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন। তবে এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন ডায়রিয়া বা কলেরা নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দৈনিক পূর্বদেশের প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় গত দুই মাসে ৬ হাজার ৪৩ জন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এসব উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৪ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। অপরদিকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গত ৯ দিনে ৩৮৩ জন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা সবাই চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫ জন ডায়রিয়া রোগী। সংশ্লিষ্টদের মতে, ডায়রিয়ার একটি ফর্ম হলো কলেরা, যার জীবাণু সাধারণত অপরিচ্ছন্ন খাবার বা দূষিত পানি থেকে আসে। মূলত ডায়রিয়া পানির কারণেই এ সময়ে বেশি হয়। গরমে পানি কমে যাওয়ার ফলে রোগটার প্রকোপ বাড়ে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, কলেরার জন্য দায়ী একটি বিশেষ ব্যাকটেরিয়া এবং এই ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনটাই কলেরা। কলেরার জীবাণুতে আক্রান্ত হলে শরীরে ডায়রিয়ার দেখা দেয় ও রোগী ক্রমাগত বমি করতে পারে। এছাড়া শরীরেও নানা ল²ণ দেখা দেয়। বিশেষ করে রোগী বারবার বমি ও মলত্যাগ করতে থাকে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। তীব্র গরমে পানির কারণে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। তাই সতর্কতার সাথে জীবনযাপন করতে হবে।
পূর্বদেশ প্রতিনিধি নগরীতে হঠাৎ ডায়রিয়া ও কলেরা বৃদ্ধির বিষয়ে বিআইটিআইডির দায়িত্বশীলদের কাছে জানতে চাইলে, তারা বলেন- হাসপাতালে ভর্তিকৃতদের মধ্যে সব বয়সের রোগী রয়েছে। তবে এদের মধ্যে মাঝবয়সী ও পুরুষের সংখ্যা বেশি। একই পরিবারের একাধিক সদস্যও আছেন। এছাড়া আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্য আয়ের জনগোষ্ঠি। যাদের স্যানিটেশন ব্যবস্থা তেমন ভালো নয়। অপরদিকে সিভিল সার্জন ইলিয়াছ চৌধুরী বলেছেন, আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী ওয়াসার সরবরাহ করা পানি না ফুটিয়ে পান করার কথা জানিয়েছেন। তাদের পায়খানা ও বমি হচ্ছে। কারো কারো জ্বর আছে। যাদের জ্বর আছে, তাদের ম্যালেরিয়া পরীক্ষাও করানো হয়েছে। সিভিল সার্জন বলেন, যেসব এলাকা থেকে রোগীরা আসছেন, সেখানে জলাবদ্ধতার সমস্যা আছে। প্রায় সময় এসব এলাকা জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়। গত সপ্তাহে এসব এলাকায় জোয়ারে নালা-নর্দমা, স্যুয়ারেজ লাইন ও সেফটি ট্যাংক সয়লাব হয়ে যায়। এসব এলাকার জনগোষ্ঠি ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান সিভিল সার্জন। আমরা আশা করি, পরিস্থিতি যাই হোক, সময়ে এক ফোঁড়, অসময়ে দশ ফোঁড়। এখনও সময় আছে, এ সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করার। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এ রোগ যেন বিস্তার না ঘটে সেই দিকে সতর্কতার সাথে মনোযোগ দিতে হবে।