‘চট্টগ্রামে কর বিদ্রোহ হবে’

32

পূর্বদেশ অনলাইন
ব্রিটিশ আমলের নীল বিদ্রোহের ন্যায় চট্টগ্রামে গৃহকর বিদ্রোহের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতারা। আপিলের নামে সিটি করপোরেশনের ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সিটি মেয়র নির্বাচনী ওয়াদা ভঙ্গ করে রাজস্ব বিভাগের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঘুষের অবাধ সুযোগ করে দিয়েছেন। দি মিউনিসিপ্যাল ট্যাক্সেশন রুলস ১৯৮৬ বাতিল করে আয়তনের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের দাবিতে শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) কদমতলী আবুল খায়ের মেম্বার চত্বরে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ আয়োজিত সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। সভা শেষে মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সংগঠনের সভাপতি নুরুল আবছারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমির উদ্দিন, সাবেক কাউন্সিলর এম এ মালেক, সংগঠনের নেতা হাসান মারূফ রূমি, সাবেক সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস, মুজিবুল হক, হারুনুর রশীদ, মফিজুর রহমান, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, মীর মো. ইসলাম, মো. নজরুল ইসলাম, আরশাদ হোসেন, হাজি সৈয়দ হোসেন, হাসান ইমরান, হাসান মুরাদ শাহ, মো. ইসলাম, মো.আনোয়ার প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন সাজ্জাদ হোসেন জাফর ও সোহেল আহমদ। নুরুল আবছার বলেন, নির্বাচনের আগে এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসায় গেলে জানতে চেয়েছিলাম, মহিউদ্দিন চৌধুরী গৃহকরে হাত দেননি। আপনি কি করবেন? তখন রেজাউল করিম চৌধুরী বললেন, আমার নেতা যেখানে হাত দেন নাই, সেখানে হাত দিয়ে আমার নেতাকে অপমান করতে চাই না। গৃহকর বাড়াবো না। কিন্তু চেয়ারে বসার পর ৫ হাজার টাকার গৃহকর ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করছেন। কালেকটররা লাখ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্য চালাচ্ছে। কালেকটররা বলছে, এর ভাগ মেয়র পর্যন্ত যায়। আপনাকে মেয়র বানিয়ে আমরা কী অপরাধ করেছি- এমন প্রশ্ন তুলে নুরুল আবছার বলেন, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। মেয়র-কাউন্সিলররা সেবক। সেবা দেওয়ার জন্যই তাদেরকে আমরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছি। ১৫ টনের ধারণক্ষমতার সড়ক দিয়ে ৮০ টন ওজনের মালবাহী লরি চলে সড়ক নষ্ট করছে। যেসব মিল-কারখানা এসব লরির মালিক, মেয়র তাদের কাছ থেকে কর আদায় করেন না। অধ্যাপক আমির উদ্দিন বলেন, ১৯৮৬ সালেই চট্টগ্রামকে গিনিপিগ বানানোর ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তৎকালীন মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী সেই আইনটি বাস্তবায়ন করেননি। মীর নাছির, মহিউদ্দিন চৌধুরীও তা বাস্তবায়ন করেননি। পরের মেয়ররা তা বাস্তবায়ন করেছেন। আমাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সরকার ২০১৭ সালের এসেসমেন্ট স্থগিত করে। খোরশেদ আলম সুজন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পথ খুলে দিয়েছিলেন। বর্তমান মেয়র দায়িত্ব নিয়ে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। ভাড়ার ওপর হ্যান্ডেলিং ট্যাক্স বাংলাদেশের এমনকি পৃথিবীর কোথাও নেই- তাই চট্টগ্রামবাসীর ওপর এ যন্ত্রণাদায়ক পরীক্ষা না চালিয়ে অবিলম্বে স্বৈরাচারী আমলে করা অকার্যকর দি মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস -১৯৮৬ আইন বাতিল করে যৌক্তিক উপায়ে গৃহকর না নিলে সুরক্ষার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তিনি আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় কদমতলীতে গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে চট্টগ্রামবাসীকে এতে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান। সাবেক কাউন্সিলর এম এ মালেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বেশি করে গৃহকর আদায়ের পরামর্শ দিয়ে বলেন, চট্টগ্রামবাসী গণআন্দোলন করবে। প্রধানমন্ত্রীকেও স্মারকলিপি দেওয়া হবে। ২২ মহল্লা সর্দার কমিটির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাড়ির মালিকদের পক্ষে না থেকে আপনারা মেয়রের দালালি করছেন। সঠিকপথে ফিরে আসুন। হাসান মারূফ রূমি বলেন, মেয়র সাহেব আপিলের কথা বলছেন ১০ হাজার টাকার। ট্যাক্স ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে, ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ৬০-৭০ শতাংশ কমালেও তা ৫ গুণ বর্ধিত রয়ে যায়। করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের প্রতি নজর দেওয়ার জন্য তিনি দুদকের প্রতি আহ্বান জানান। সংরক্ষিত আসনের সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস পপি বলেন, সুরক্ষার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামবাসীর ওপর জেঁকে বসা করের বোঝা দূর হবে। মেয়র সাহেব নিজেই নিজের বিরোধীতা করছেন যা অত্যন্ত হাস্যকর। নীল বিদ্রোহের মতো চট্টগ্রামে কর বিদ্রোহ হবে।