চট্টগ্রামে কবে হবে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল

21

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রচেষ্টাটা দেড়যুগ আগের হলেও ছয় বছর আগে চীন সরকারের সহযোগিতায় উদ্যোগ নেয়া হয় চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার। কিন্তু সেই উদ্যোগ এখনও দেখেনি আলোর মুখ। এজন্য শুধুমাত্র একটি উপযুক্ত জায়গার অভাবের কথাই সামনে আনা হচ্ছে বারবার। ফলে তিমিরেই রয়ে গেল পোড়া ও দগ্ধরোগীদের জন্য প্রস্তাবিত বিশেষ সেবাকেন্দ্রটি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা।
সম্প্রতি অগ্নিদগ্ধ রোগীদের পূর্ণাঙ্গ সেবা দিতে গিয়ে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নগরবাসীর প্রশ্ন, উপযুক্ত চিকিৎসা সুবিধা না পেয়ে আর কত রোগী মারা গেলে চট্টগ্রামে গড়ে উঠবে একটি বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল?
তথ্যমতে, চট্টগ্রাম হচ্ছে শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চল। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। মিরসরাইকে নিয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হয়ে গেছে। আনোয়ারায় আছে কেইপিজেড। নগরীতেও বড় শিল্পপল্লী আছে কয়েকটা। তাছাড়া আগে থেকেই বহু ভারী ও মাঝারি শিল্প রয়েছে এখানে। যেখানে দেশের বড় বড় কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিশেষ করে সীতাকন্ডজুড়ে জাহাজ ভাঙা থেকে শুরু করে ইস্পাত উৎপাদন শিল্পের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান। এসব প্রতিষ্ঠানে অগ্নিদগ্ধ থেকে শুরু করে নানা দুর্ঘটনা ঘটে থাকে প্রায় সময়। কিন্তু তাদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে নেই বিশেষায়িত কোন বার্ন হাসপাতাল। ফলে প্রতিনিয়ত উপযুক্ত চিকিৎসা সুবিধা না পেয়ে মারা যায় অনেক রোগী।
এদিকে বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষের জন্য একমাত্র হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের উপরই এ নিয়ে ভরসা রাখতে হয়। কিন্তু সেখানেও পূর্ণাঙ্গ কোন সেবা নেই বললেই চলে। তাতে করে একটু জটিল রোগীদের উন্নত সেবা পেতে পাড়ি দিতে হয় ঢাকায়। এভাবে চলছে যুগের পর যুগ। এই অবস্থা থেকে দ্রæত নিস্তার চান চট্টগ্রামের মানুষ। অতি সম্প্রতি বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের জন্য চীন সংযুক্ত হতে চাওয়ার তথ্য এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে।
এদিকে চমেক হাসপাতালে বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ওয়ার্ডে রোগীদের জন্য শয্যা আছে মাত্র ২৬টি। তার মধ্যে সাধারণ সময়ে রোগী ভর্তি থাকে ৫০ জনের বেশি। বিশেষ পরিস্থিতিতে রোগী ছাড়িয়ে যায় আরও কয়েকগুন।
তথ্যমতে, ছয় বছর আগে ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সর্বপ্রথম চমেক হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য জায়গা পরিদর্শনে আসে চীন সরকারের ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ চীনা দূতাবাস সম্মতির কথা জানিয়ে চট্টগ্রামে সম্পূর্ণ আলাদা বিশেষায়িত একশ শয্যার বার্ন ইউনিট করার আগ্রহ প্রকাশ করে চীন সরকার। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ চতুর্থবারের মতো চীনা প্রতিনিধি দলের সাথে কয়েক দফা রুদ্ধধার বৈঠকে বসে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতেও কোনরকম সুরাহা না মেলায় ফেরত যায় চীনের প্রতিনিধিরা। এ নিয়ে স্বয়ং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার আলোচনা হলেও প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন করতে রাজি হয়নি চীন। যার কারণে বর্তমানে চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিট পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
যদিও শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের ২০ জুলাই এক বৈঠকে চীন সরকারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামে ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন হাসপাতাল’ নির্মাণের প্রস্তাব দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত। যার ফলে পুনরায় আশার আলোর দেখা মেলে। কিন্তু দুই বছর কেটে গেলেও চাহিদামত জায়গার অভাবেই তা আলোর মুখ দেখছে না।
এদিকে ‘সচেতন তরুণ প্রজম্ম’ নামে একটি সংগঠনের নেতারা এই দাবিতে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে বলেছেন, চট্টগ্রামে একটি বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের কাজ গত দেড় দশকে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। জায়গার অভাব, অর্থ সংকটসহ নানা অজুহাতে এ হাসপাতাল নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে অসংখ্য ছোট বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। পাশাপাশি অগ্নি দুর্ঘটনাও সা¤প্রতিক তুলনামুলকভাবে অনেক গুণ বেড়েছে। অগ্নিকাÐে দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা প্রদানে বেগ পেতে হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রায়ই আশঙ্কাজনক রোগী ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যান। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম এবং আশেপাশের জেলার সাধারণ মানুষ ও শিল্প সংশ্লিষ্ট কর্মজীবীদের চিকিৎসার জন্য অবিলম্বে সকল জটিলতা নিরসন করে বিশেষায়িত পূর্ণাঙ্গ বার্ন হাসপাতাল নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।
গতকাল শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের দাবিতে সচেতন তরুণ প্রজন্মের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন ও সংহতি সমাবেশে বক্তারা এ দাবি জানান।
সচেতন তরুণ প্রজন্মের প্রধান সমন্বয়কারী ম. মাহমুদুর রহমান শাওনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন নাগরিক আন্দোলন নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান। সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জি. জাবেদ আবছার চৌধুরী। সংগঠনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাহিদ তানছির স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
সংগঠক শামশুজ্জোহা আজাদ পলাশের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন চকরিয়া সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হামিদ হোসেন, ইফতেখার উদ্দীন জাবেদ, সংগঠক শাহ জামান, কাজী আরশাদুল আলম জীবন, সম্মিলিত সামাজিক সংগঠন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম শরীফ, প্রথম আলো বন্ধু সভা চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শাওন রায়, মেঘলার সহ সভাপতি এসএম মিরাজ, মানবাধিকার কর্মী আহসান হাবীব, সংগঠক নাজিম উদ্দীন চৌধুরী এ্যানেল, কানিজ ফাতেমা, সেইফ দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রামের সভাপতি মোহাম্মদ আশরাফ উল্লাহ, আলো দেখাবোই’র নির্বাহী পরিচালক এমএইচ স্বপন, হেলথ বিডি’র সিইও খন্দকার মোহাম্মদ হালিম, পপুলার জনকল্যাণ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এমএ জলিল, যোদ্ধার তানভীরুল হক, শিখরের সদস্য রেজাউল করিম, জসিম উদ্দীন হায়দার, ফারুক হোসেন, সাংবাদিক জেসমিন জুই, ময়ূরাক্ষীর ইলিয়াস সুমন, সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি ইঞ্জি. শাহীন চৌধুরী। এছাড়া আরও সংহতি প্রকাশ করেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।