চট্টগ্রামে এবারো ভয়াবহ জলাবদ্ধতার আশঙ্কা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম আরো দ্রুত করতে হবে

91

শ্রাবণ মেঘের দিনগুলো তাদের স্বভাবরীতি নিয়েই যেন ফিরে এসছে। আষাঢ় বৃষ্টির গল্প শুনিয়ে গেছে মাত্র শ্রাবণ অঝোরধারায় বৃষ্টি নামাচ্ছে। ঋতু বৈচিত্রে দারুন উপভোগ্য এ মৌসুমে হয় কারো পৌষমাস আর কারো সর্বনাশ! দেশের উত্তর দক্ষিণাঞ্চলের নিচু ও হাওর এলাকায় তো পৌষ মাসের কথায় আসেনা তবে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের এ সমৃদ্ধ চট্টগ্রামের নগরবাসীকে আষাঢ়-শ্রাবণের বৃষ্টিভেজা দিনগুলোতে থৈ থৈ জলেই বাস করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে জলের সাথে নগরবাসীর কষ্টের বাস বন্ধ করতে সরকারের হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ ও কাস্তবায়ন চললেও কখন নাগাদ এ জলবাসের অবসান হবে-তা ঠিক সঠিকভাবে কেউ বলতে পারছেন না। সম্প্রতি কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আবারও সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বিশেষ করে, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট, চকবাজার, বাকলিয়া, খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক, হালিশহর এলাকাসহ অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। শুধু সড়কে নয়, বাসা ও দোকানপাটেও ঢুকেছে পানি। কোনো কোনো স্থানে ফ্লাইওভারের নিচেও জমেছে হাঁটু পানি। এতে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে রোববার দিনভর রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও করোনার কারণে তা এখন বন্ধ। তিন বছর মেয়াদকালের এ প্রকল্পের দুই বছর পার হয়ে গেলেও এখনও খাল খনন, খাল পরিষ্কার এবং খাল উদ্ধারের কাজ অনেক বাকি রয়েছে। ইতোমধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরের পাথরঘাটার টেকপাড়া, কলাবাগিচা ও মরিয়ম বিবি খাল, মহেশখালে, ফিরিঙ্গিবাজার খাল, চাক্তাই খাল এবং রাজাখালী খালে ¯øুইস গেইটের জন্য বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এসব বাঁধের কারণে বৃষ্টির পানি দ্রæত নামতে পারছে না। ফলে ভরা বর্ষায় জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। বলাবাহুল্য যে, উল্লেখিত খালগুলো দিয়ে নগরের ১১টি ওয়ার্ডের পানি প্রবাহিত হয়ে নদীতে পড়ে। এসব এলাকায় প্রতি বছরই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে প্রায় ২০টি খালে খননকাজ চলছে। চাক্তাই খালের মুখে জোয়ার প্রতিরোধক ফটকের নির্মাণকাজ চলছে। এজন্য খালের প্রায় অর্ধেকের বেশি অংশজুড়ে বাঁধ দেয়া হয়েছে। খোলা অংশ দিয়ে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করছে। দেশের অন্যতম বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের অবস্থান এ খালের পাশে। চাক্তাই খাল ও রাজাখালী খালের সঙ্গে যুক্ত রাজাখালী-২ খালেও বাঁধ দেয়া হয়েছে। এতে খালটিতে পানির প্রবাহ নেই। নগরের ফিরিঙ্গিবাজারের ব্রিজঘাটা এলাকায় ফিরিঙ্গিবাজার খালটিতে তিনটি বাঁধ দেয়া হয়েছে। পাইপ দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। অপরদিকে করোনার কারণেও দর্ঘিদিন ধরে বন্ধ রাখতে হয়েছিল প্রকল্পের কাজ। যদিও এখন আবার কাজ শুরু হয়েছে, কিন্তু ভরা বর্ষা মৌসুমে এ কাজ কতটুবু এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে- তা শঙ্কার বিষয়। সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী সূত্রে দাবি করেছে, করোনার কারণে গত দুইমাস কাজ বন্ধ থাকলেও নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে পানি নিষ্কাশনের কাজ চালানো হয়। তবে অতি বৃষ্টিপাতের কারণে কোথাও কোথাও পানি জমা হয়ে আছে। তাতে কিছু মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে।
আমরা জানি, ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, স¤প্রসারণ ও সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর তীরে সড়ক নির্মাণে আরেকটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এছাড়া সিডিএ কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ, সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্প পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতার সমস্যা সম্পূর্ণ দূর হবে না। আমরা আগে বলেছি, বর্ষাকাল চট্টগ্রামবাসীর জন্য খুবই আতঙ্কের। এ সময়ে খালের মুখে কোনো বাঁধ থাকলে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলে তখন পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এবং এটিই স্বাভাবিক। আমরা আশা করি, প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যতদ্রুত সম্ভব নাগরিক সমাজে স্বস্তি ফিরে আনতে আরো দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগে নেবেন।