চট্টগ্রামে একদিনে ৭৩৮ শনাক্ত সারাদেশে ৮ হাজারেরও বেশি

4

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ১১৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ৭৩৮ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ হয়েছে। সারাদেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়ে গেছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার বাড়ছে। এ অবস্থায় ১১ দফা নির্দেশনা না মানলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে অনলাইন ক্লাসে যেতে হবে। নমুনা অনুপাতে চট্টগ্রামে শনাক্তেরর হার ২৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। নতুন ৭৩৮ জনকে নিয়ে চট্টগ্রামে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৪৫৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনায় মারা গেছেন ১ হাজার ৩৪০ জন। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে অ্যান্টিজেন টেস্টসহ ১৬টি ল্যাবে ৩ হাজার ১১৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ৭৩৮ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ হয়। নতুন আক্রান্ত ৬৪৭ জন নগরের ও ৯১ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। এ সময় চট্টগ্রামে নতুন করে কেউ মারা যাননি। তিনি বলেন, সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অবশ্যই সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।
ল্যাবভিত্তিক তথ্যমতে, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি ল্যাবে ১১০ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ল্যাবে ৮৮ জন, অ্যান্টিজেন টেস্টে ১২৮ জন, ইমপেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবে ৭৮ জন, শেভরন হাসপাতাল ল্যাবে ৬৪ জন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে ৫০ জন, জেনারেল হাসপাতাল আরটিআরএল ল্যাবে ৩০ জন, মেডিকেল সেন্টার হাসপাতাল ল্যাবে ১৮ জন, ইপিক হেলথকেয়ার ল্যাবে ৭৫ জন, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ল্যাবে ৫০ জন, এশিয়ান স্পেশালাইজড হাসপাতাল ল্যাবে ১৩ জন এবং শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ল্যাবে ৩৪ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৪০৭ জন। এ সময় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯৮। আগের দিন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৬ হাজার ৬৭৬ জন। একদিনের ব্যবধানে নতুন রোগী বেড়েছে ১ হাজার ৭৩১ জন।
গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশে করোনার সংক্রমণের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানানো হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট ৩৫ হাজার ৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯৮। আগের দিন এ হার ছিল ২০ দশমিক ৮৮।
করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে গত বছরের মাঝামাঝি দেশে করোনায় মৃত্যু, রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার বেড়েছিল। তবে আগস্টে দেশব্যাপী করোনার গণটিকা দেওয়ার পর সংক্রমণ কমতে থাকে।
গত মাসের প্রথম দিকেও দেশে করোনা শনাক্তের হার ১-এর ঘরেই ছিল। তবে ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে এসে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। গত মাসের শেষ দিকে যেখানে দৈনিক রোগী শনাক্ত ৫০০-এর ঘরে ছিল, সেখানে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে এই সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে যায় ১০ জানুয়ারি। তার চার দিনের মাথায় গত শুক্রবার দৈনিক রোগী শনাক্ত ৪ হাজার ছাড়য়।
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। করোনার এই ধরন অতিসংক্রামক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম মঙ্গলবার জানিয়েছেন, রাজধানী ঢাকায় ওমিক্রনের সংক্রমণ বেশি ঘটেছে।
তবে ঢাকার বাইরে এখনো করোনার ডেলটা ধরনের সংক্রমণ ঘটছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। সবধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান-সমাবেশ বন্ধসহ ১১ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা না মানলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় এক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণের কারণে এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা ভাবছে না সরকার। তবে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়লে অনলাইন ক্লাস চালু করা হতে পারে বলে। তিনি বলেছেন, যদি এমন হয় যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে, ক্লাস চালু রাখা সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসে যেতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে করোনায় মারা যাওয়া ১০ জনের মধ্যে ৮ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। তাদের মধ্যে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। চট্টগ্রাম, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে মারা গেছেন। সাতজনের মৃত্যু হয়েছে সরকারি হাসপাতালে, তিনজনের বেসরকারি হাসপাতালে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৬ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৪ জন। সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ১৬৪ জনের। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭৯৫ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৪৭৫ জন সুস্থ হয়েছেন।