চট্টগ্রামে ই-অরেঞ্জের মালিকসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

5

নিজস্ব প্রতিবেদক

ই-কমার্সের নামে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে রাজধানী ঢাকার পর এবার চট্টগ্রামের আদালতেও মামলা হয়েছে অনলাইনে পণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে। অগ্রিম টাকা পরিশোধের পরও দীর্ঘদিন পণ্য সরবরাহ না করায় ই-অরেঞ্জের মালিকসহ সাত জনের বিরুদ্ধে গতকাল বুধবার দুপুরে মহানগর হাকিম হোসেন মোহাম্মদ রেজার আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়।
নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজারের ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী নুরুল আবছার পারভেজ, মোর্শেদ সিকদার ও মাহমুদুল হাসান খানের পক্ষে নুরুল আবছার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত অভিযোগ আমালে নিয়ে পুলিশের বিশেষায়িত তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইকে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় ই-অরেঞ্জের মালিক বর্তমানে কারান্তরীণ সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, ভারতে পালিয়ে সেখানকার কারাগারে আটক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা শেখ সোহেল রানা, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আমানুল্লাহ, বীথি আক্তার, জায়েদুল ফিরোজ ও নাজমুল হাসান রাসেলকে আসামি করা হয়েছে।
আদালতে বাদীপক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ জানান, ভুক্তভোগী তিনজনের পক্ষে নুরুল আবছার পারভেজ নামে একজন গ্রাহক মামলাটি দায়ের করেছেন। ই-অরেঞ্জ সারাদেশে লাখ লাখ গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এখানকার প্রতারিত গ্রাহকদের টাকা ফেরত চেয়ে আদালতে প্রতিকার চেয়েছি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ২৭ মে’র পর থেকে বিভিন্ন সময় পণ্য কেনার জন্য মামলার বাদী নুরুল আবছার পারভেজ, মোর্শেদ সিকদার ও মাহমুদুল হাসান খান নামে তিন ব্যবসায়ীর প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা ই-অরেঞ্জকে প্রদান করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পরও প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহ করেনি। অর্ডার নেয়ার পর থেকে ই-অরেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ফেসবুকে নোটিশের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহের আশ্বাস দেয়, কিন্তু তারা পণ্য সরবরাহ করেনি। এভাবে পণ্য সরবরাহ না করে প্রতিষ্ঠানের মালিকরা দেশের প্রায় এক লাখ গ্রাহকের ১১শ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এর আগে চলতি বছরের গত ৩ আগস্ট প্রতারণা করে গ্রাহকের নয় কোটি ৫৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালতে মামলা করেন এক ভুক্তভোগী। মামলার পর গত ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আবুবকর সিদ্দিকের আদালতে ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। পরে বিচারক তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একইদিন সকালে অগ্রিম অর্থ পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য না পাওয়ায় গুলশান থানায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রতারণার শিকার গ্রাহক মো. তাহেরুল ইসলাম। তার সঙ্গে ভুক্তভোগী আরও ৩৭ জন তখন থানায় উপস্থিত ছিলেন। মামলার এজাহারে তাদের প্রত্যেকের স্বাক্ষর রয়েছে।
এদিকে, ই-অরেঞ্জের মাধ্যমে গ্রাহকের ১১শ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত রাজধানীর বনানী থানা পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা অবৈধ পথে ভারতে পালিয়ে সেখানকার সামান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। ভারতের কারাগারে অন্তরীণ সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তৃতীয় দফায় চিঠি পাঠালেও সাড়া মেলেনি দিল্লির। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ভারতের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোকে (এনসিবি) চিঠিগুলো পাঠানো হয়।