চট্টগ্রামে আ. লীগের শান্তির শোভাযাত্রা

29

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী চট্টগ্রামেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে সম্প্রীতি সমাবেশ ও শান্তি শোভাযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ প্রতিটি উপজেলায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। আওয়ামী লীগ ছাড়াও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও পৃথকভাবে এ কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচি থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তি রুখে দিতে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখার মনোভাব ব্যক্ত করেন নেতাকর্মীরা। আগামীকাল (২১ অক্টোবর) থেকে ১০ দিন পর্যন্ত মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ে শান্তি ও সম্প্রীতি কর্মসূচি পালন করা হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ : সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সম্প্রীতি ও শান্তি র‌্যালি দুপুরে আইসিসি কনভেনশন সেন্টার থেকে শুরু হয়। মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে এ র‌্যালি কাজির দেউড়ি, আসকার দিঘির পাড়, জামালখান প্রেস ক্লাব হয়ে আবারো আইসিসি কনভেনশন সেন্টারে ফিরে যায়। এসময় বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
র‌্যালি শেষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, চারিদিকে নাগিনীরা বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলছে। বাঙালি জাতিসত্তার শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে আঘাত করতেই বারবার সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা সৃষ্টি করে সম্প্রীতির পরিবেশ ক্ষুণ্ণ করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। সংগঠনের তৃণমূল স্তরকে সুসংহত ও সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে যারা এই অপকর্মের সাথে যুক্ত তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। আওয়ামী লীগ জনগণের আস্থা ও ভরসার প্রতীক। এই অহংকার কোনোদিন চূর্ণ হবে না। যে কোনো মূল্যে অহংকারকে ধরে রাখতে হবে। কারণ অশুভ শক্তি অশনি সংকেত ছড়াচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির মধ্যে বিভাজন ও বিভক্তির কারণেই ১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতাসীন হয়। ফলে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির রাজনৈতিক উত্থান ঘটেছিল। এটাই ছিলো বাঙালি জাতি সত্তার বিরুদ্ধে বড় অপঘাত। এই অপঘাতের শিকড় আরো গভীরে যাবার আগে উপড়ে ফেলতে না পারলে জাতীয় অস্তিত্বের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে না। তাই এখন থেকেই তৃণমূল পর্যায়ে জাতীয় অস্তিত্ব সুরক্ষায় অগ্রবর্তী বাহিনী গড়ে তুলতে হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ : সংগঠনের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি বলেছেন, বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি। এই দেশ সকল ধর্মের মানুষের। বর্তমান সরকার ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। আমাদের সংবিধান আমাদের সকলের ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় যার যার রীতি অনুযায়ী ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপনের পরিবেশ নিশ্চিত করেছে শেখ হাসিনা সরকার। বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।
গতকাল বিকেল ৩টায় আন্দরকিল্লাস্থ সংগঠন কার্যালয়ে দেশব্যাপী চলমান সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সম্প্রীতি সমাবেশ ও শান্তি শোভাযাত্রায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কোনো স্থান নেই, এদের যেকোনো ভাবে প্রতিহত করতে হবে। এরা দেশ ও সমাজের শত্রু। জঙ্গিগোষ্ঠীর উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা নয়। তারা মূলত বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তারা বাংলাদেশকে আফগানিন্তান-পাকিস্তান বানাতে চায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ঠাঁই নেই। তিনি দেশব্যাপী চলমান সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. মির্জা কছির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক এড. জহির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাশ, শ্রম সম্পাদক খোরশেদ আলম, প্রচার সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আবু জাফর, শিক্ষা সম্পাদক বোরহান উদ্দিন এমরান, ধর্ম সম্পাদক আবদুল হান্নান চৌধুরী মঞ্জু, সদস্য চেয়ারম্যান নাছির আহমদ, ছিদ্দিক আহমদ বি.কম, মাহবুবুর রহমান শিবলী, রাশেদ মনোয়ার, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি নুরুল হাকিম, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মো. জোবায়ের, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মো. গালিব সাদলী, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা, দক্ষিণ জেলা কৃষকলীগ সভাপতি আতিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আতাউল করিম আতিক, দক্ষিণ জেলা তাঁতীলীগ আহব্বায়ক দিদারুল আলম, দক্ষিণ জেলা মৎস্যজীবী লীগ যুগ্ম আহবায়ক সুরেশ দাশ, মহিলা নেত্রী জান্নাত আরা মঞ্জু, রেহেনা আক্তার কাজেমী, খালেদা আক্তার চৌধুরী, কাজী শারমিন সুমী, নাসরিন সুলতানা, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবমহিলা লীগ যুগ্ম আহবায়ক এড. কামেলা খানম রূপা, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহের প্রমুখ। সম্প্রীতি সমাবেশ শেষে এক বিশাল শান্তি শোভাযাত্রা নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ : সংগঠনের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেছেন, স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী একটি মহল দেশের আবহমান কালের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে পরিকল্পিতভাবে একের পর এক ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তারা অতীতেও এ ধরনের হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু বাংলার মানুষ তাদের প্রতিহত করেছিলো। ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যারা এসব অপকর্মে জড়িত তাদের চরম শিক্ষা দেয়া হবে। প্রতিটি পাড়া মহল্লায় এসব সা¤প্রদায়িক দুষ্কৃতিকারীদের প্রতিহত করার জন্যে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহব্বান জানান তিনি।
গতকাল বিকেলে দোস্ত বিল্ডিং চত্বরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি মিছিলোত্তর সম্প্রীতি সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আতাউর রহমান বলেন, এসব দেশ বিরোধী অপশক্তিকে কিভাবে মোকাবিলা করতে হয় তা আওয়ামী লীগ কর্মীদের ভালো করেই জানা আছে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চলনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ, মহিউদ্দিন রাশেদ, আবুল কাশেম চিশতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বাহার, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন বাবলু, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জাফর আহমেদ, প্রচার সম্পাদক প্রদীপ চক্রবর্তী, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক নাজিম উদ্দিন তালুকদার, শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক ইঞ্জি. মেজবাউল আলম লাভলু, বন ও পরিবেশ সম্পাদক আবু তালেব, উপ দপ্তর সম্পাদক আ স ম ইয়াছিন মাহমুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, মো সেলিম উদ্দিন, এসএম গোলাম রব্বানী, সাহেদ সরওয়ার শামীম, মো. ইসমাঈল, বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দিলোয়ারা ইউসুফ, সাধারণ সম্পাদিকা এড. বাসন্তী প্রভা পালিত, সহ-সভানেত্রী সৈয়দা রিফাত আকতার নিশু, রুমানা নাসরিন, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী এড. উম্মে হাবিবা, যুব মহিলা লীগের এড. জুবাঈদা সরওয়ার নিপা, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তানভীর হোসেন তপু, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম প্রমুখ। সমাবেশ শেষে এক শান্তি মিছিল দোস্ত বিল্ডিং চত্বর থেকে শুরু হয়ে স্টেশন রোড, নিউ মার্কেট, কোতোয়ালী হয়ে পুনরায় দোস্তবিল্ডিং চত্বরে এসে শেষ হয়।