চট্টগ্রামের ভবিষ্যৎ নির্ধারণী মহাপরিকল্পনা

101

এম এ হোসাইন

চট্টগ্রাম শহরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, নগরবাসীর গুণগত জীবনযাত্রা, নাগরিকের নিরাপত্তা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যসহ সবগুলো বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মহাপরিকল্পনা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছে। পরিকল্পিত শহর গড়তে এ মহাপরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে। এর আগেও ১৯৯৫ সালে ২৫ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছিল। এবারের মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে ২০ বছর মেয়াদি। ‘প্রিপারেশন অব চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান (২০২০-২০৪১)’ শিরোনামে চলমান মহাপরিকল্পনাটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।
চট্টগ্রামের উন্নয়নে অংশ নেওয়া সকল সংস্থা এবং চট্টগ্রামের প্রতিটি ক্ষেত্রকে এই মহাপরিকল্পনার সাথে যুক্ত করতে চায় সিডিএ। বিভিন্ন সংস্থার সাথে নিয়মিত সভায় মিলিত হচ্ছে সিডিএ। মাঠ পর্যায়ের বাস্তব অবস্থা তুলে আনা এবং সে অনুযায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে চায় সংস্থাটি। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ওয়ার্ড পর্যায়ের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করার কথাও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিকল্পিত নগরায়ন ও গণমুখী উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নতুন করে ২০ বছরের জন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে। এতে প্রত্যেক শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত গ্রহণ করা হবে। এই মাস্টারপ্ল্যান ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর উন্নয়নের জন্য ১৯৯৫ সালে করা মহাপরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৫ সালে। এবার পাঁচ বছর ব্যবধান রেখে ২০২০ সাল থেকে ২০৪১ সালের জন্য নতুন মহাপরিকল্পনা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিকল্পিত নগরায়ন, গণমুখী উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ২০ বছরের জন্য নতুন এই মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। প্রকল্পটির আওতায় স্ট্রাকচার প্ল্যান, তিনটি নির্ধারিত এলাকার জন্য অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য মাস্টারপ্ল্যান, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কৌশল এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। এর আগে ১৯৯৫ সালে ২৫ বছর মেয়াদি সর্বশেষ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। এদিকে সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের সঙ্গে মহাপরিকল্পনা নিয়ে অংশীজন সভা করেছে সিডিএ। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম নগরীকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে আগামী ২০২০-৪১ সালের জন্য মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম বন্দরনগরীকে বাণিজ্যিক এবং পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিতে হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে পেশাজীবী প্রতিনিধি, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, চাকরিজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিদের মতামত নিতে হবে। শুধু পরিকল্পনা গ্রহণ করলে হবে না, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সকলকে আন্তরিক হতে হবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সর্বপ্রথম মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে ১৯৬১ সালে। নিয়মানুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পরপর মহাপরিকল্পনা হালনাগাদ করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে দ্বিতীয় দফায় মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু তারপর আর মহাপরিকল্পনা হালনাগাদ করা হয়নি। এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা শুরু হলে আবারও মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেয় সিডিএ। তাছাড়া নিয়মানুযায়ী মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করার পর তা আইনে পরিণত হয়। মহাপরিকল্পনার নির্দেশনা মেনেই নগরীর উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হয়ে থাকে।
প্রকল্পটির পরিচালক সিডিএ’র উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আবু ঈসা আনছারী বলেন, মহাপরিকল্পনাটি চট্টগ্রাম শহরে ভবিষ্যত কী হওয়া উচিত এবং এরজন্য কী কী প্রয়োজন তার বিস্তারিত ধারণা দেবে। এখনো আমরা শুরুর পর্যায়ে আছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি। বিভিন্ন অংশীজনের কাছ থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আরো কিছুটা সময় গেলে অগ্রগতি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা দেয়া যাবে। এখনো শুরুই বলা চলে।
গত বছরের এপ্রিলে আনুষ্ঠানিকভাব মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করে সিডিএ। সিডিএ কার্যালয়ের ছাদ থেকে ড্রোন উড়িয়ে মাঠ পর্যায়ের জরিপ কার্যক্রম শুরু করা হয়। একই দিন কলেজিয়েট স্কুল মাঠে চট্টগ্রামের ভূমির সার্বিক অবস্থা নির্ণয়ে মাটি পরীক্ষা কার্যক্রমও শুরু করা হয়। এরপর থেকে অংশীজন সভার আয়োজন শুরু করে সিডিএ। বিভিন্ন পেশাজীবী ও সংস্থার সাথে অংশীজন সভার মাধ্যমে মতামত সংগ্রহ করছে সংস্থাটি।