চট্টগ্রামজুড়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ কারণ চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে

19

প্রচÐ দাবদাহ এরসাথে লবণাক্ত ওয়াসার পানিতে দিশাহারা যখন নগরবাসী তখন চট্টগ্রাম নগর এবং নগরের বাইরে চার উপজেলায় আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। নগরীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে প্রচুর ডায়রিয়া রোগী। চট্টগ্রাম শহরের কাছের চার উপজেলার সরকারি হাসপাতালে ইতোমধ্যে প্রায় তিন শতাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তির খবর পাওয়া গেছে। তবে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে এ সংখ্যা ২৯১জন। চিকিৎসকরা বলছেন, পানিবাহিত এই রোগ গ্রীষ্ম মৌসুমে কিছুটা বাড়ে। তবে এবার অনেক বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। গরমে অতীষ্ঠ অনেকে বাইরের না গিয়ে ঘরে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। অনেকে মনে করছেন, চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ রমজানের আগে থেকেই লবণাক্ত পানি সরবরাহ করছে। এসব পানি পান করে লোকজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে নগরীর যেসব এলাকায় লবণাক্ত পানি সরবরাহ হচ্ছে সেখানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীও বেশি। তবে চট্টগ্রাম ওয়াসার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বরাবরের মতো দাবি করেছেন, ওয়াসার পানিতে কিছুটা লবণাক্ততা আছে। তবে তা খুবই সহনীয় মাত্রায়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার মতো লবণাক্ত নয়। তাছাড়া বৃষ্টিপাত শুরু হলে ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ একেবারেই কমে যাবে। এরপর পানি নিয়ে উৎকণ্ঠার কিছু থাকবে না। জানা গেছে নগরীর বন্দর, হালিশহর, চকবাজার, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, খাজা রোড, মোহরা, ষোলশহর এলাকায় ডায়রিয়া রোগী বেশি। নগরীর সব এলাকায় ওয়াসার লবণাক্ততার খবর পাওয়া গেলেও এসব এলাকায় চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহ করা পানি লবণাক্ততা বেশি। উল্লেখিত এলাকার সামর্থ্যবানরা ওয়াসার পানি বাদ দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জারের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানি কিনে পান করছেন। এ সুযোগে অসাধুরা প্রতি জার ৪০ টাকার স্থলে এখন ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা করে বিক্রি করছেন। অভিযোগ রয়েছে, জারের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানিও দূষিত। নগরবাসী যাচাই না করেই কিনে নিচ্ছেন। এতে ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বেসরকারি মা শিশু হাসপাতালে প্রচুর রোগী ভর্তি আছে। নগরীর আগ্রাবাদে মা ও শিশু হাসপাতালে শিশু ডায়রিয়া ইউনিট শয্যা কানায় কানায় পূর্ণ। আক্রান্তদের বেশিরভাগ শিশু ও বয়স্ক। চট্টগ্রাম নগরীর বাইরে ১৭টি হাসপাতালে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ভর্তি হচ্ছে ডায়রিয়া রোগী। ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) কেন্দ্রেও প্রচুর ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম বলেন, গরমের মৌসুম শুরুর পর থেকে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। খোলা ও বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। সচেতনতা বাড়লে ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা মিলবে। এদিকে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব সতর্কতায় কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়। সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর স্বাক্ষরে ৪ এসব নির্দেশনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। একইসাথে বেশক’টি উপজেলায় ডায়রিয়া প্রাদুর্ভাবের কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে ডায়রিয়া প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি অতি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার জন্য সকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে প্রদত্ত নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে: সকল স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী মজুত রাখতে হবে। ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগের চিকিৎসায় জাতীয় গাইডলাইন অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম নগর ও ডায়রিয়া আক্রান্ত চার উপজেলায় অতিমাত্রায় ডায়রিয়ার কারণ অনুসন্ধানে ঢাকার আইইডিসিআর-এর একটি প্রতিনিধি দল গত সোমবার চট্টগ্রাম এসছে। তারা ইতোমধ্যে আক্রান্ত রোগী, এলাকার পানি ও খাবারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সংস্থার সাথে কথা বলে মূল কারণ উদঘাটন করবেন বলে জানা যায়। আমরা আশা করি রোগতত্ত¡, নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর এ উদ্যোগ সফল হবে। একইসাথে ডায়রিয়া আক্রান্তদের নিরাময়ে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা জেনেছি, ডায়রিয়া বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার জন্য উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইনচার্জ ও স্যানিটারি পরিদর্শকদের ফোকাল পারসন মনোনীত করে সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে মসজিদ ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি গণমাধ্যমও এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে। নগরীতে গতবছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ডায়রিয়াসহ কলেরার খবরে নগরবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। ওইসময় সিভিল সার্জন ও চিকিৎসকদের আন্তরিক ভূমিকা কলেরা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।