চকরিয়া থানার ওসি’র প্রত্যাহার দাবি

410

কক্সবাজারের চকরিয়ায় যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদি ও মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর বাড়িতে (মুক্তিযোদ্ধা কুঠির) পুলিশি হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় চকরিয়া থানার ওসি’র প্রত্যাহার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। তাদের দাবি, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবনবাজি রেখে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করা একজন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে পুলিশের এ বর্বরোচিত হামলা ও লুটপাটের ঘটনার দায় চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান কোনদিনই এড়াতে পারেননা। তার নির্দেশই চকরিয়া থানার একদল উচ্ছৃঙ্খল পুলিশ পরিকল্পিতভাবে এ হামলার ঘটনা ঘটায় বলে দাবি করেছেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর দ্বিতীয় সন্তান জিয়াউল করিম মো. তারেক। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদি ও মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর বাড়িতে (মুক্তিযোদ্ধা কুঠির) পুলিশী হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন এর নির্দেশে বৃহস্পতিবার রাতে চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান, এসআই মিজানুর রহমান, এসআই তুষ্ট লাল বিশ্বাস, এএসআই জেড রহমান ও ৬ জন কনস্টেবলসহ ১০ জনকে চকরিয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
এ ঘটনায় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজী মোহাম্মদ মতিউল ইসলামকে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং দোষী পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় তাৎক্ষনিক ১০পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হলেও গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রম নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর পরিবার। পরিবারের দাবি, এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্যান্যদের বাঁচাতেই এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপরদিকে ঘটনার একদিন পর গতকাল শুক্রবার বিকাল ২টার দিকে তদন্ত কমিটির প্রধান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজী মোহাম্মদ মতিউল ইসলাম ঘটনাস্থল প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর বাড়ি পরিদর্শন করেছেন।
পুলিশের নির্যাতনের শিকার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর স্ত্রী নেছারা বেগম বলেন, তদন্ত আদৌ আলোর মুখ দেখবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তার বাড়িতে হামলা, লুটপাট এমনকি পরিবারের নারী সদস্যদের উপর অমানষিক নির্যাতন করেছে পুলিশ। তাহলে কিভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত করবে? তার দাবি মূলতঃ ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের রক্ষা করতেই এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর ছেলে এম কে মোহাম্মদ মিরাজ বলেন, লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা গোলাম মোস্তফা কাইছারের ইন্ধনে ও চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমানের নির্দেশে পুলিশ বাড়িতে ঢুকে ঘন্টাব্যাপী তাÐব চালায়। এসময় পুলিশ ছোট ভাই মুরাদুল করিম সিফাত তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর সামনে বেধড়ক পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। বর্তমানে সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তারা পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে ধ্বংস করতেই এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে পুলিশকে শাস্তি দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ জড়িত পুলিশকে কিভাবে গঠিত তদন্ত কমিটি শাস্তি দিবে তা আমার বোধগম্য নয়। মূলত এসব পুলিশকে বাঁচাতেই পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশ দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে এত বড় একটি ঘটনার তদন্ত করা যায় না। আমরা সুষ্ঠ বিচারের স্বার্থে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি।
গতকাল শুক্রবার রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আ. লীগ নেতারা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি পরিদর্শন করেছেন।
এ সময় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার মাসে একজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। ঘটনার পিছনে কারা জড়িত তাদের তাদের অবশ্যই খোঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এ সময় মেয়র মুজিবুর রহমানের সাথে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা জামাল উদ্দিন জয়নাল, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, আওয়ামী লীগ নেতা ওয়ালিদ মিল্টন, পরিমল বড়ুয়া, চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকিত হোসেন সাজিব, লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামী-যুবলীগের সভাপতি মো.সরওয়ারসহ বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা।
কক্সবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মো.শাহজাহান বলেন, আমি প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়র হোসেন বাঙ্গালীর বাড়িতে ন্যাক্কারজনক পুলিশি হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।