চকরিয়ায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত ১৮ ইউনিয়ন

11

চকরিয়া প্রতিনিধি

চকরিয়ায় টানা তিনদিন ভারী বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি মাতামুহুরী নদীর বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে মাতামুহুরী নদীর ঢলের পানির তোড়ে বিএমচর ইউনিয়নের কন্যারকুম ও কোনাখালী ইউনিয়নের মরংঘোনা পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গিয়ে ওইসব ইউনিয়নগুলোতে অন্তত ২০ হাজার লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার বেশ কয়েকটি আভ্যন্তরীণ সড়ক তলিয়ে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল সিকদার বলেন, ভারী বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এলাকার বেশিভাগ নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। বেশকিছু গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ঢলের পানিতে বরইতলী ইউনিয়নে অন্তত ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৬৫/এ-৩ পোল্ডারের তিনটি পয়েন্টে ভাঙা রয়েছে। এ অবস্থায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জরুরিভিত্তিতে বেড়িবাঁধ মেরামত করা না হলে ইউনিয়নের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হবে।
চিরিংগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন বলেন, বর্ষণ অব্যাহত থাকায় এবং মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলের চিংড়িজোন পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চিংড়ি জোন এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে কয়েকশত কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
বিএমচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বুধবার সকালে ইউনিয়নের কইন্যারকুম অংশের ৩০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে ডুবে যাচ্ছে উপকূলীয় লোকালয়। এতে উপকূলীয় সাত ইউনিয়নের মানুষ ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখিন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
পশ্চিম বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা বলেন, ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
এছাড়া টানা ভারিবর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লক্ষ্যারচর, হারবাং, সাহারবিল, কৈয়ারবিল, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, পূর্ব বড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা ও খুটাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গিয়ে শতশত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পৌরমেয়র মো. আলমগীর চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টিতে পৌরসভার নিচু এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডের তিন শতাধিক পরিবার জলাবদ্ধতার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। আটকে থাকা পানি যাতে দ্রুত নেমে যেতে পারে সেজন্য পূর্ব থেকে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ভারি বর্ষণের ফলে মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি যাতে দ্রæত ভাটির দিকে নেমে যেতে পারে সেজন্য উপকূলীয় এলাকার সকল স্লুইস গেটগুলো খুলে দিতে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়া পরিবারের মাঝে সহায়তা হিসেবে বিতরণের জন্য ১৮টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে (প্রতিটি ইউনিয়নে) চার মে. টন করে সর্বমোট ৭২টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।