চকরিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের হাতে সাবেক জজ লাঞ্ছিত

70

কক্সবাজারের চকরিয়ায় এক ইউপি চেয়ারম্যানের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ ফেরদাউস আহমদ। তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে চকরিয়া থানার অভ্যন্তরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজকে থাপ্পড় মেরে লাঞ্ছিত করেন সাহারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল। এ ঘটনায় জড়িত ইউপি চেয়ারম্যানেক তাৎক্ষণিক আটক করে থানা হাজতে আটক রাখে পুলিশ। হাজত বাসের এক ঘন্টা পর চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী ও চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরীর জিন্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়লে সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত চকরিয়া উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ব্রাম্মণপাড়া এলাকার বাসিন্দা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ ফেরদাউস আহমদের ভাতিজা নেজাম উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার রাতে আমার চাচা সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আলহাজ¦ ফেরদাউস আহমদ ব্যক্তিগত কাজে চকরিয়া থানায় যান। এসময় থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্তের রুমে বসা ছিলেন সাহারবিল ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল। সেখানে কথা প্রসঙ্গে আমার চাচা সাহারবিল ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের ভগ্নদশার ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুলের কাছে জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে তেলেবেগুনে জ¦লে উঠেন তিনি। এক পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল আমার চাচা সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ ফেরদাউস আহমদকে থাপ্পড় মেরে লাঞ্ছিত করে। ঘটনার পরপরই ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুলকে থানা হাজতে আটক করে রাখে পুলিশ। একঘন্টা হাজত বাসের পর ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আমার চাচার কাছে ক্ষমা চাইলে পরে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী ও চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরীর জিম্মায় পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।
ঘটনার ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ইউপি চেয়ারম্যানের হাতে লাঞ্ছনার শিকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ ফেরদাউস আহমদের মুঠোফোনে কল করা হলে ফোন রিসিভ করেন তার ভাতিজা নেজাম উদ্দিন। এ সময় তিনি বলেন, থানায় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার শিকার হওয়ার পর থেকে আমার চাচা খুই অসুস্থতা বোধ করছেন। তাই তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করছেন।
ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল বলেন, মঙ্গলবার রাতে আমার এলাকার সমস্যা নিয়ে আমি চকরিয়া থানায় গেলে সেখানে থানার সেকেন্ড অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন সালাম দিয়ে আমাকে তার রুমে ঢুকান। তখন সেখানে উপস্থিত সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আলহাজ¦ ফেরদাউস আহমদকে লক্ষ্য করে বলেন ওনাকে চিনেন কি-না। তখন আমি না সুচক জবাব দিলে সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আলহাজ¦ ফেরদাউস আমাকে লক্ষ্য করে বলেন, সাহারবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তো আব্দুল হাকিম বলে শুনছিলাম। ওনি আবার এলো কোত্থেকে? তখন বিষয়টি নিয়ে দু’জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের সূত্র ধরে থানার ভেতর অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে অবশ্য উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধের মীমাংসা হয়। ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, আসলে আমি জানতামনা ওনি অবসরপ্রাপ্ত সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ। তাহলে ওনার সাথে এভাবে উচ্চবাক্য বিনিময় করতাম না। পরে বিষয়টি নিয়ে আমি অনুতপ্ত হওয়ার পর ওনার কাছে ক্ষমা চাইলে উভয়ের মাঝে বিরোধ মীমাংসা হয়।
চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার রাতে থানায় সংগঠিত বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজকে লাঞ্ছিত করার কারণে ঘটনার সাথে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যানকে আটক রাখা হয়। পরে উভয় পক্ষের মাঝে আপোষ মীমাংসা হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চকরিয়া পৌর মেয়রের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওসি তদন্ত আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে যদি লাঞ্ছনার শিকার সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন তাহলে অবশ্যই আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।