ঘোরাঘুরি-কেনাকাটা উদ্বোধনের পরপরই

25

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর হালিশহর এলাকার আবাহনী মাঠে কুঠির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের নিজস্ব পণ্যের পাশাপাশি, দেশি-বিদেশি বাহারি পণ্য নিয়ে শুরু হয়েছে বাণিজ্য মেলা। চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এ মেলার আয়োজন করে।
গতকাল রবিবার সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, এখনও পুরোপুরি জমে ওঠেনি মেলা। অনেক দোকানি এখনো দোকান তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিছু কিছু দোকান সাজানো হচ্ছে, কেউ কেউ পণ্য সাজিয়ে রাখছেন। তবে উদ্বোধনের আগে যারা দোকান সাজিয়েছিলেন, তারা বেচাকেনা শুরু করেছেন।
মেলায় আসা শাহী নুর তাজ আদিবা জানিয়েছেন, মেলা পুরোপুরি প্রস্তুত না হলেও গৃহস্থালি পণ্যের দোকানিরা এসেছেন। ঘরের কিছু জিনিসপত্রের প্রয়োজন ছিল, তাই ভিড় বাড়ার আগে কিনতে আসলাম।
দাম কেমন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মোটামুটি স্বাভাবিক। কিছু পণ্য একদামে বিক্রি করছেন। যা আমরা পছন্দমত কিনতে পারছি। তেমন একটা দর কষাকষি করতে হচ্ছে না। আয়োজক কমিটির দেয়া তথ্যমতে, ছোট বড় প্রায় ৩০০টি স্টল এবং ৮টি প্যাভেলিয়ন রয়েছে এবারের মেলায়। নারী উদ্যোক্তাদের স্বল্পমূল্যে, ক্ষেত্রবিশেষে বিনামূল্যে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবারের মতো এবারের মেলাতেও শিশুদের বিনোদনের জন্য আকর্ষণীয় বিনোদন পার্কসহ বিনামূল্যে টিকিট সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মেলার শেষদিন প্রবেশ টিকিটের ড্র অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে মোটরসাইকেলসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার দেওয়া হবে। মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ক্যাম্প, সিসিটিভি ক্যামেরা, বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর হালিশহর আবাহনী মাঠে মাসব্যাপী ৩য় বাংলাদেশ সিএমএসএমই বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। এসময় তিনি বলেন, আমি চট্টগ্রামের ছেলে, তাই চট্টগ্রামের প্রতি আমার একটা বিশেষ ভালো লাগা কাজ করে। আমি নিজেও চাই- এখানে উইমেন চেম্বারসহ ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো যাতে নিয়মিত মেলা আয়োজন করতে পারে সেজন্য একটি নির্ধারিত জায়গা থাকুক।
তিনি আরও বলেন, দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আইএমএফ’র রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা ৩৫তম অবস্থানে রয়েছি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন বাংলাদেশ সম্ভবত ৫৯তম স্থানে ছিল। আমরা মনে করি এটি আমাদের উল্লেখযোগ্য অর্জন। প্রধানমন্ত্রী ২০১০ সালে এম এ মান্নান ফ্লাইওভার উদ্বোধন করতে এসে বলেছিলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব তিনি নিজ হাতে নিয়েছেন। উনার সেই দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালনও করেছেন। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে হেলিকপ্টারে করে নেভির একটা প্রোগ্রামে এসেছি। তখন আমি লালখান বাজার থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারটা দেখছিলাম। অনেক লম্বা একটা ফ্লাইওভার। আমার মনে হয়, এয়ারপোর্ট থেকে লালখান বাজার মোড় আসতে সময় লাগবে ২০ মিনিট। বঙ্গবন্ধু টানেল হচ্ছে। কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন হচ্ছে। চট্টগ্রামে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর হচ্ছে। এখানে অনেক শিল্প কারখানা হচ্ছে। এটার ফলাফল আপনারা আগামী ১০ বছরে পাবেন।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বলেন, চট্টগ্রামে মেলার জন্য একটি স্থায়ী ভেন্যু দরকার। যেটি ঢাকায় আছে। আমার চেম্বার-অফিস কোথায়, সেটির চেয়ে বড় বিষয় হল উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন করা। কারণ নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা রয়েছে। বর্তমান সরকার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক কাজ করছেন। উন্নত রাষ্ট্রের জন্য নারী জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে যেতে হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আজকের যুগের নারীরা শিক্ষা-দীক্ষায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। এক সময় নারীরা ছিলেন অবহেলিত। এখন তারা আর অবহেলিত নয়।
চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেগম চেমন আরা তৈয়ব, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, উইমেন চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি আবিদা মোস্তফা, সিনিয়র সহসভাপতি ও এফবিসিসিআই’র পরিচালক ডা. মুনাল মাহবুব এবং সিএমএসএমই ব্যাংকিং স্পেশালিস্ট আলী সাবেত।
পরে ভূমিমন্ত্রী বেলুন উড়িয়ে মাসব্যাপী সিএসএমএসই বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেনএবং মেলায় বসানো স্টলগুলো ঘুরে দেখেন।