ঘোমটা দিয়ে ভোটে অংশগ্রহণ নাকি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন

3

পূর্বদেশ ডেস্ক

আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনীতি। সামনের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয়ে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিগত কয়েকদিন ধরে উভয়পক্ষের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সভা-সেমিনারে উত্তপ্ত কথামালায় একে-অপরকে ঘায়েল করে বক্তব্য দিচ্ছেন। গতকাল এক ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে স্বতন্ত্র পরিচয়ের ঘোমটা ছেড়ে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সৎ সাহস প্রদর্শনের আহŸান জানান। অপরদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ইস্পাতের ন্যায় কঠিন গণঐক্য তৈরি করে এই সরকারকে হটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।
ওবায়দুল কাদের গতকাল শনিবার সকালে তাঁর বাসভবনে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিং করেন। এতে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিএনপি স্বতন্ত্র পরিচয়ের ঘোমটা পরে অংশ নিচ্ছে। তিনি বিএনপিকে ঘোমটা ছেড়ে প্রকাশ্যে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সৎ সাহস প্রদর্শন করার আহবান জানান।
শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন অর্জনে দেশের মানুষ খুশি দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এজন্য বিএনপির আন্দোলনে জনগণ সাড়া দিবে না। তিনি আরও বলেন, বিএনপির নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে এক দফার আন্দোলনের রঙিন খোয়াবও অচিরেই দুঃস্বপ্নে রূপ নিবে। ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, পরবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
আবরার হত্যা নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপির শাসনামলে দলীয় একজন লোকের বিচার হয়েছে কোন অপকর্মের জন্য, এমন কোন নজির দেখাতে পারবেন কি? তিনি বলেন, উল্টো শেখ হাসিনা সরকারই বিশ্বজিত ও বরগুনার রিফাত হত্যার বিচার করেছে।
অপরদিকে গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও জাতীয় যুব সংহতির আহব্বায়ক মহসিন সরকারের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ইস্পাতের ন্যায় কঠিন গণঐক্য তৈরি করে এই সরকারকে হটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো।
জাতীয় পার্টি আয়োজিত এ স্মরণসভায় মোশাররফ বলেন, আমাদের একটাই স্বার্থ, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সেটা করতে হলে এই সরকারের পতন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, জনগণের ভোটাধিকার, এগুলো সব একই দাবি। এই এক দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, আরও বড় প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে আমরা এই সরকারকে হটিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো।
তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, ২০ দলীয় জোট এবং দেশের গণতান্ত্রিক জনগণ আগামী নির্বাচনে যাবে না, যেতে পারে না। এর সঙ্গে বলতে চাই সেই নির্বাচন করতেও দেওয়া হবে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই স্বৈরাচারী সরকারকে হঠাতে হবে। এজন্য একটি কঠিন আন্দোলনের সৃষ্টি করতে হবে। জনগণ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত, আপনারা কথা বলে দেখেন, মানুষ এই সরকারের বিদায় চায়, পরিবর্তন চায়। যদি এই দেশকে বাঁচাতে হয়, দেশের স্বার্থকে রক্ষা করতে হয়, সেক্ষেত্রে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হয়, ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হয়। এই লুটেরা অর্থনীতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে এই সরকারকে হটানো ছাড়া আমাদের সামনে বিকল্প কোনো পথ নেই। যদি সরকার হটে যায় তাহলে আগামী নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করা সম্ভব।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আজ যে জাতীয় সংকটে আমরা উপনীত হয়েছি তার থেকে মুক্ত হতে হলে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণ যাদের ভোট দেবে সেই প্রতিনিধিরা দেশ পরিচালনা করবে। জনগণের প্রতিনিধি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার, মানবাধিকার, সাম্য ও সামাজিক বৈষম্য দূর করা সম্ভব। তাই এদেশকে রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনের বিকল্প নেই। এই গণআন্দোলনের জন্য বিএনপি, ২০ দল এবং গণতান্ত্রিক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হাওলাদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাপা মহাসচিব আহসান হাবিব লিঙ্কন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।