ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা দ্র্রুত করতে হবে

25

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা রবিবার বিকেল নাগাদ বাংলাদেশ সীমান্ত ত্যাগ করে মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যে আঘাত হেনেছে বলে জানা যায়। তবে কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন অতিক্রমকালে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে এসব এলাকার বিস্তির্ণ জনপদে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানান, মোখার আঘাতে কক্সবাজার জেলার ১২ হাজার ঘরবাড়ির আংশিক ও পরিপূর্ণ ক্ষতি হয়েছে এর মধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ১২শত কাঁচাঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। আশার কথা, এতে কোন মানুষের প্রাণহানী ঘটেনি। স্থানীয় প্রশাসনের সতর্কতা ও আশ্রয়কেন্দ্রে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিয়ে আসার কারণে জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। আমরা মহান প্রতিপালকের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। কয়েকদিন ধরে মোখা নামক অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের যে আবাস আমাদের দেয়া হয়েছিল তাতে উপকূল এলাকা নয শুধু, দেশের মানুষ চরম আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। আসলে কী ঘটতে যাচ্ছে! চট্টগ্রামের মানুষ ১৯৯১ সালের সুপার সাইক্লোনের নিষ্ঠুর আচরণ অবলোকন করেছিল। সুতরাং ঘূর্ণিঝড় বললেই ‘সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়’ অবস্থা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারবাসীর। এবার যা গর্জে তা হয়নি বটে, এতে আমাদের আত্মতৃপ্তির কোন কারণ নেই। মানুষের ক্ষতি হয়নি, কিন্তু যা নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকবে সেই ঘর আর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। হাজারো মানুষ পানিবন্দি থাকবে কয়েকদিন। বিশেষ করে সেন্টমার্টিন দ্বীপের সাতহাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে। অপরদিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপসহ মহেশখালী, কুতুবদিয়া এবং কক্সবাজার ও টেকনাফ সদরেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আরো কোন কোন জেলায় কী পরিমান ক্ষতি হয়েছে, তা হয়ত আজ বা কালকের মধ্যে জানা যাবে। আমরা মনে করি, এখন সরকারের উচিৎ দ্রæত উপকূলীয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। মানুষ প্রাথমিকভাবে সরকারি পর্যায়ে যে সহযোগিতা পেয়েছে তা সাময়িক। এখন তাদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে দ্রæত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে যাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের মাথাগুজার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এছাড়া এ ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে উপকূল এলাকা রক্ষায় সরকার যেসব বাঁধ নির্মাণ করেছে, এরমধ্যে অনেকগুলো বাঁধের নড়েবড়ে অবস্থার সচিত্র খবর সংবাদপত্রে ছাপানো হয়েছে। বিশেষ করে স›দ্বীপ, বাঁশখালী, মহেশখালী, কুতুবদিয়া এলাকার অনেক বাঁধ সামান্য জোয়ারেই ভেঙ্গে গেছে। এসব বাঁধ নির্মাণের ত্রæটি চিহ্নিত করে বাঁধগুলো পুননির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে। একইসাথে এসব বাঁধ নির্মাণের সাথে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনাও জরুরি। আমরা মনে করি, যেকোন ঝড় বা জলোচ্ছ¡াস থেকে উপকূলীয় এলাকা রক্ষার প্রধান মাধ্যম হতে হবে এসব বাঁধ। সরকার মহাপরিকল্পনার আওতায় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে এসব বাঁধ নির্মাণ করেছে। সুতরাং বাঁধ নির্মাণের পর যদি উপকূলবাসী সুফল না পায়, জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আতঙ্কে দিন যাপন করতে হয়, তবে এ বাঁধের কি প্রয়োজন ছিল! এ ব্যাপারে সরকারের মনোযোগ এবং নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নজরদারিতে আনা প্রয়োজন। দেশে যখনই কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়, তখন দুর্যোগকবলিত এলাকার মানুষের পুনর্বাসন, ত্রাণ বিতরণ ইত্যাদি নিয়ে নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। সংবাদপত্রে এসব নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হয়। আমরা করোনার মত মহামারিকালেও বিভিন্ন জায়গায় চরম অনিয়মের খবর সংবাদপত্রের সুবাদে জেনেছি। একটি স্বাধীন ও সভ্য জাতির জন্য এ জাতীয় অনৈতিক অনিয়ম মোটেই কাম্য হতে পারে না। এসব অনিয়ম দূর করতে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরাসরি তদারকি শুরু করা হয়। যার সুফল অসহায় মানুষ পেয়েছে। মোখার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত জনপদের মানুষ সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ পাবে এবং তাদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে কোনরকম গাফিলতি হবে না। এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।