ঘরে ঘরে জ্বর সর্দি কাশি

26

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ বাড়ছে। ক্রমান্বয়ে আক্রান্ত হচ্ছে পরিবারের সবাই। অনেকেই এটিকে মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত বলছেন। একইসাথে রয়েছে করোনা ও টাইফয়েডের ভয়। জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হলে এন্টিজেন টেস্ট করার পাশাপাশি সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের আবহাওয়ায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দিনে গরম, আবার হঠাৎ বৃষ্টি এবং রাতে হাল্কা ঠান্ডা পড়ছে। ফলে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন সব বয়সী মানুষ। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখন ঘরে ঘরে মৌসুমি জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ চলছে। এসব রোগ থাকছে তিন থেকে অন্তত সাতদিন এবং ক্ষেত্রবিশেষে ৮ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত। জ্বর কমলেও শুকনো কাশি, দুর্বলতায় ভুগছেন অনেকে। অনেকের গলাব্যাথা হচ্ছে। জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
চিকিৎসকরা জানান, আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে জ্বরের মাত্রা ১০২ থেকে ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত। সেই সঙ্গে গায়ে, হাতে ও পায়ে ব্যথা। সর্দি, কাশির মতো উপসর্গ। জ্বর তিন থেকে চারদিন থাকছে। জ্বর কমে গেলেও সর্দি-কাশির সঙ্গে থাকছে শারীরিক দুর্বলতা। প্রায় দশদিন পর্যন্ত ক্লান্তিভাব। বাচ্চা থেকে বয়স্ক, সবাই এই মৌসুমে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।
বেশ কিছুদিন ধরে জ্বর, সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা একজন রোগী বলেন, অফিস থেকে ঘরে ফিরে হঠাৎ শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। রাত বাড়তেই জ্বর-সর্দি ও কাশির সঙ্গে শরীরে ব্যথা শুরু হয়। দ্রুত টেলিফোনে পরিচিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করি। একদিন পর আমার ছেলের জ্বর-সর্দি-কাশি, বমি ও ডায়রিয়া শুরু হয়। একইসঙ্গে স্ত্রীও জ্বরে আক্রান্ত হয়। আমার শারীরিক অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলেও বাকি দুজন এখনও সুস্থ হয়ে উঠেনি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণে এখন ঘরে ঘরে ভাইরাস জ্বর হচ্ছে। কারো জ্বর-সর্দি হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সাধারণ ফ্লুর যে চিকিৎসা সেটা নিতে হবে। পরিবারের সুস্থ সদস্যদের কাছ থেকে যথাসম্ভব আইসোলেশন বজায় রাখতে হবে। আমরা যেভাবে কোভিডে স্বাস্থ্য সচেতন ছিলাম একইভাবে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। অন্যথায় পরিবারে অন্যরাও আক্রন্ত হতে পারে।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, দেশে দিনরাতের তাপমাত্রা বাড়ছে-কমছে। এই রোদ এই বৃষ্টি। এই গরম, এই ঠান্ডা। খেয়ালি এই আবহাওয়ার সঙ্গে বাড়ছে সর্দি-কাশি-জ্বরের মতো মৌসুমি রোগ। আবার দেশে করোনা আছে, ডেঙ্গুও আছে। এ দুটির উপসর্গও জ্বর। তবে যে জ্বরই আসুক না কেন, কোনো অবহেলা করা যাবে না। উদাসীনতা ও খামখেয়ালিপনা করলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। ঈদকে কেন্দ্র করে সারা দেশে স্বাস্থ্যবিধি না মানার চিত্র সবাই দেখেছে। এভাবে চলতে থাকলে সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ্বর খুবই মারাত্মক। এই জ্বরে শরীরে র‌্যাশ ওঠে, প্রচন্ড মাথাব্যথা দেখা দেয়। চার/পাঁচ দিনের বেশি জ্বর থাকলে একই সঙ্গে করোনা ও ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে হবে। একই সঙ্গে সবার মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, যেহেতু এখন ডেঙ্গু, করোনা ও সিজন্যাল জ্বরের মৌসুম, তাই অনেকে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে এমনিতেই ভালো হচ্ছে। তবে যাদের জ্বর চার/পাঁচ দিনের বেশি থাকছে তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরলে নিজে নিরাপদ থাকার পাশাপাশি পরিবারও সুরক্ষিত থাকবে।