ঘরের তাপমাত্রায় রাখার উপযোগী করোনা ভ্যাকসিন বানাচ্ছে আইআইএসসি

6

ঘরের তাপমাত্রাতেও দিব্যি রেখে দেওয়া যায়, এমন করোনা ভ্যাকসিন বানাচ্ছে বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স (আইআইএসসি)। দুই-একটি নয়, যখন আরও নানা রকমের কোভিড টিকা বাজারে আসার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, বিদেশের কয়েকটি ভ্যাকসিন যখন ভারতে ব্যবহারের বিষয়টি সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষায়, সেই সময়ে বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইআইএসসি-র এমন উদ্যোগকে আশাব্যঞ্জক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই অভিনব কোভিড টিকার প্রধান বিশেষত্ব এটি ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সমান সক্রিয় রাখা যায়। ফলে তাপমাত্রা বাড়লেও এই টিকা নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে না। এটি সংরক্ষণের জন্য রেফ্রিজারেশন ব্যবস্থারও সাহায্য নিতে হবে না। ফলে টিকা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। ভারতে ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা গড়ে ২১ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই টিকা তৈরির প্রকল্পের প্রধান আইআইএসসি-র অধ্যাপক রাঘবন বরদারাজন বলেছেন, ‘‘ইঁদুর ও গিনিপিগের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছি, আমাদের বানানো টিকা দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধী ব্যবস্থায় (ইমিউন সিস্টেম) প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারছে। সেটিও খুব অল্প সময়ে। সেই অ্যান্টিবডিগুলো ইঁদুর ও গিনিপিগের দেহে ঢুকে পড়া সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে অনায়াসে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারছে। ভাইরাস কোষে ঢুকে আর বংশবৃদ্ধি ঘটাতে পারছে না। ফলে, সংক্রমণও হচ্ছে না।’
ভাইরাসকে দেহকোষে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে বলেই এই অ্যান্টিবডিগুলোকে বলা হয় ‘নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি’। বরদারাজনের ভাষায়, ‘আমরা গবেষণাগারে টেস্ট টিউবে রাখা সংক্রমিত মানব দেহকোষের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছি, এই ভ্যাকসিন যে নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডিগুলো তৈরি করছে, সেগুলো এমনকি সার্স-কভ-২ ভাইরাসের নতুন কয়েকটি রূপকেও নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারছে।’
সার্স-কভ-২ ভাইরাসের সেই নতুন রূপগুলির মধ্যে মহারাষ্ট্রে প্রথম হদিস মেলা ভারতীয় ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ রূপটিও রয়েছে বলে গবেষকদের দাবি। বিশেষজ্ঞদের কাছে গবেষণাটি আরও আশাব্যঞ্জক মনে হয়েছে এই কারণে যে, কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা মানব দেহকোষে সার্স-কর্ভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে যে পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি করে, আইআইএসসি-র গবেষকরা দেখেছেন, তাদের বানানো টিকা ইঁদুরের দেহকোষে তার ২০০ গুণ অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারছে।
রাঘবন বলছেন, ‘আমাদের কোভিড টিকার প্রধান বিশেষত্ব, এটি ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেই রাখা যাবে। ফলে বেশি তাপমাত্রায় টিকা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।’