গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তি না দিলে অবস্থান কর্মসূচির হুমকি

32

সংবাদ সম্মেলন করে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে যান ডা. শাহাদাত হোসেন। ঘোষণা দেন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করার। তবে সেখানে আধঘণ্টা অপেক্ষা করেই ফিরে গেলেন তিনি। সাথে নিয়ে গেলেন নির্বাচন কর্মকর্তার দেয়া ‘আশ্বাস’।
গতকাল সোমবার সকালে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের মাঠে প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন।
এতে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গতকাল সোমবার ভোর পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন থানায় ১০টির বেশি ‘ফেব্রিকেটেড’ মামলায় এক হাজার নেতাকর্মী। সাতদিনে এসব মামলায় ৬৯জন গ্রেপ্তার এবং রবিবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া ২০ নেতকার্মীর মুক্তির দাবিতে নির্বাচন কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করেন। এরপর তিনি আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে লিখিতভাবে দলীয় কর্মীদের মুক্তি এবং মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করেন। তিনটার মধ্যে নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়া না হলে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বলেও জানান ডা. শাহাদাত। এরপর গণসংযোগে যোগদেন ডা. শাহাদাত। এলাকায় গণসংযোগ করে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে নির্বাচন কার্যালয়ে পুনরায় গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তিনি। কিন্তু অল্পক্ষণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করার পর নেতাকর্মীদের মুক্তির ব্যাপারে নির্বাচন কর্মকর্তা পদক্ষেপ নিবেন এমন আশ্বাসে আবার গণসংযোগে সক্রিয় হন শাহাদাত।
এ বিষয়ে কথা হলে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ঘোষণা অনুযায়ী আমাদের প্রার্থী নির্বাচন কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন। নির্বাচন কর্মকর্তার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তিনি ফিরে এসেছেন। আমরা দেখছি, নির্বাচন কর্মকর্তা কি পদক্ষেপ নেন। এরমধ্যে ব্যবস্থা না নিলে মঙ্গলবার (আজ) সকালে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিব।
সংবাদ সম্মেলনে ডা. শাহাদাত বলেন, গতকাল (রবিবার) রাতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মধ্যে নগরের বাকলিয়া থেকে বিএনপির এক নারীকর্মী ও তার ১২ বছরের শিশুকেও গ্রেপ্তার করেছে।
তিনি বলেন, গত ৭ দিন ধরে যে বিষয়টি লক্ষ্য করছি, কিছু গায়েবি ও সাজানো মামলা করা হয়েছে প্রতিটি থানায়। যে মামলাগুলো ২০১৮ সালের নির্বাচনের ঠিক ছয় মাস আগে থেকে দেখেছি। গত ১৯ তারিখ থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন থানায় ১০টির বেশি ‘ফেব্রিকেটেড’ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় এক হাজার কর্মীকে। গত ৭ দিনে এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬৯জনকে। এর মধ্যে শুধুমাত্র গতকাল এক রাতেই ২০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার রাতে বাকলিয়া থানায় নেত্রী মুন্নি ও তার ১২ বছরের শিশুকে ধরে নিয়ে গেছে। নাগরিক ঐক্য পরিষদের বীর মুক্তিযোদ্ধা একরামুল করিমকে রবিবার রাতে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় চকবাজার থানা পুলিশ। সঙ্গে তার ছেলেকেও ধরে নিয়ে যায়। অথচ তার ছেলে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, গত ১০ মাস করোনার সময়েও মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে। ভোটারদের আস্থা অর্জনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবিরাম মানুষের দুয়ারে ছুটে গেছি। নির্বাচনের ঠিক দুইদিন আগে মাস্তান, চাঁদাবাজ, ইয়াবা ব্যবসায়ী দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ ঘোলাটে করার পাঁয়তারা চলছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অতি উৎসাহী পুলিশের কারণে সেই পরিবেশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, গতকাল সিইসি এসেছিলেন। উনার কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আশা করেছিলাম। আওয়ামী লীগের মধ্যে মারামারিতে তিনজন নিহত হয়েছে, আমাদের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে, প্রচার গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের হয়রানি চলছে-এসব বিষয়ে সিইসি বক্তব্য দেবেন বলে আশা করেছিলাম।
ডা. শাহাদাত বলেন, চট্টগ্রামের নির্বাচন কর্মকর্তাকে আমরা এ পর্যন্ত ৪০টি অভিযোগ দিয়েছি। এসবের কোনো সমাধান হয়নি। গত ৭ দিন ধরে যেসব মিথ্যা মামলা হয়েছে, এই মিথ্যা মামলায় যাতে গ্রেপ্তার করা না হয় সেজন্য কমিশনকে বলেছি। আমাদের দাবি, এসব মামলা প্রত্যাহার করা হোক। যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহব্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রমুখ।