গ্রেপ্তারের পর মুক্ত ট্রাম্প নিজেকে নির্দোষ দাবি

9

পূর্বদেশ ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হওয়ার কিছু সময় পর মুক্তি পেয়েছেন। শুনানি শেষে ফ্লোরিডায় ফিরে গেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাবেক এক পর্ণ তারকাকে গোপনে অর্থ প্রদান সংক্রান্ত একটি মামলায় তিনিই প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট যাকে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। শুনানির আগে ট্রাম্পকে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও, শুনানি শেষে তাকে ছেড়ে দেয় আদালত।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুরে নিউ ইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ার থেকে গাড়িবহর নিয়ে ম্যানহাটনের আদালতে যান সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ সময় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয় শহরজুড়ে। ৭৬ বছরের ট্রাম্প গাড় নীল স্যুট ও লাল টাই পরে আদালতে উপস্থিত হন। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্ক দÐবিধির ১৭৫ ধারা অনুযায়ী ব্যবসায়িক রেকর্ড জালিয়াতির ৩৪টি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালতে তিনি ৫৭ মিনিটের মতো অবস্থান করেন। সেখানে ব্যবসায়িক প্রতারণার ৩৪টি অভিযোগে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের মামলার পরবর্তী ব্যক্তিগত শুনানির তারিখ ৪ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
আদালতের বাইরে কথা বলার সময় ট্রাম্পের অ্যাটর্নি টড ব্রাঞ্চ বলেন, আমার মক্কেল হতাশ এবং বিচলিত। তিনি এই বিচারকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) মোটেও ভালো দিন নয় … এই দেশে এটি ঘটবে আশা করিনি। বিশেষ করে এমন একজনের সঙ্গে যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আমরা এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যাচ্ছি, কঠোর লড়াই।
ম্যানহাটনের আদালত কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় ট্রাম্প কোনও কথা বলেননি। তাকে অনেকটা বিমর্ষ দেখাচ্ছিল তাকে। সরাসরি চলে যান ফ্লোরিডায়। নিজ বিলাসবহুল রিসোর্টে ফিরেই ভাষণে পুরো ঘটনা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ট্রাম্প। বলেন, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াই থেকে সরিয়ে দিতেই এমন আয়োজন করেছেন প্রসিকিউটরা। ২০২৪ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার জন্য এমন ভুয়া মামলা আনা হয়েছে। যা অবশ্যই অবিলম্ববে বন্ধ করা উচিত।
২০২২ সালে মার-এ-লাগো এস্টেট থেকে এফবিআই স্পর্শকাতর নথি উদ্ধারের প্রসঙ্গে সমালোচনা করে বলেন, আমাদের দেশ নরকে যাচ্ছে। এসব ঘটনা আমাদের দেশের জন্য অপমানজনক। কারণ বিশ্ব আমাদের দেশকে নিয়ে হাসি তামাশা করছে।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ভুয়া অ্যাখা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আনা হয়েছে বিভিন্ন সময়। দুটি মিথ্যা অভিশংসন আনা হয়। মূলত আমি যে অপরাধ করেছি যারা এ জাতিকে ধ্বংস করতে চায়, তাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য।
আইনজীবী কোনও অপরাধ খুঁজে পায়নি দাবি করে সমর্থকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণও নেই। আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞরাও আশ্বস্ত করেছেন বলে জোর গলায় দাবি করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
নিউ ইয়র্কে ব্যবসায়িক রেকর্ড জাল করা একটি বড় অপরাধ। এ ক্ষেত্রে প্রসিকিউটরদের প্রমাণ করতে হবে যে ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে সাবেক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ২০০৬ সালের একটি অভিযোগ ঢাকতে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন। আর এটা করতে গিয়েই ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় জালিয়াতির ৩৪টি ভিন্ন অপরাধ করেছেন ট্রাম্প।
ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ আদালতের শুনানির পর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিউ ইয়র্ক নির্বাচনি আইনের যে লঙ্ঘন হয়েছে সেগুলোকে আড়াল রাখার উদ্দেশ্য ছিল ট্রাম্পের।
সম্ভাব্য শাস্তি কি?
যদি জালিয়াতির অভিযোগে ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হন, তবে প্রতিটি অপরাধের জন্য ট্রাম্পকে চার বছর করে কারাদন্ডের মুখোমুখি হতে হবে। বিচারক এই সাজা পরপর দিতে পারেন, যার অর্থ ট্রাম্পকে দীর্ঘ কারাবাসে যেতে হবে।
তবে এই অভিযোগে বাধ্যতামূলক কারাদন্ডের বিধান নেই। এমনকি সব ক্ষেত্রে দোষী সাব্যস্ত হলেও, ট্রাম্পকে জেলে যেতে হবে না।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দোষী সাব্যস্ত হলে সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং ২০২৪ সালের প্রার্থীকে কারাগারে সাজা দেওয়া হবে কি না তা অনিশ্চিত।