গ্রাহক হয়রানি বন্ধে অভিযোগ বক্স ও অ্যাপস চালু করুন

34

বিএসটিআইয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং প্রতিষ্ঠানটিকে গ্রাহকবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে অভিযোগ বক্স স্থাপন ও অ্যাপস চালুর আহব্বান জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। গতকাল বুধবার বিকেলে বিএসটিআই কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ আহব্বান জানান। আহব্বানে সাড়া দিয়ে প্রয়োজনীয় পদেক্ষপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন বিএসটিআই চট্টগ্রামের পরিচালক সেলিম রেজা।
‘জনতার ঐক্য চাই’ শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বিএসটিআই চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালকের সাথে মতবিনিময়ে নিরাপদ খাদ্য ব্যস্থাপনায় পচা-বাসি, ভেজালমুক্ত মানসম্মত পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার আহব্বান জানান।
খোরশেদ আলম সুজন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দেশের সাধারণ জনগণের মাঝে নিরাপদ খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে নানাবিধ প্রকল্পের মাধ্যমে বিএসটিআইকে গতিশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিএসটিআইও সে লক্ষ্যে কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। তথাপি আমরা সাধারণ জনগণ উদ্বিগ্ন এবং শংকিত। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী যেভাবে ভেজালের জাল বিস্তৃত করে রেখেছে এর থেকে সাধারণ জনগণকে মুক্তি দিতে বিএসটিআইয়ের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে হবে। শুধুমাত্র মাঝে মাঝে কিছু কারখানা কিংবা দোকানপাটে অভিযান পরিচালনা করে জনগণকে ভেজালের হাত থেকে মুক্ত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সারা বছরব্যাপী পরিকল্পিত অভিযান। কারণ আপনাদের মনে রাখতে হবে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএসটিআই জনগণের নিকট দায়বদ্ধ।
তিনি বলেন, ইদানিং আমরা লক্ষ্য করছি ভেজাল খাদ্য উৎপাদনকারী এবং বিপণনকারীরা তাদের নিত্যনতুন অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। হরিপুর থেকে তেল এনে পরিশোধিত করে বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠান সেই তেল পেট্রোল পাম্পে ব্যবহার করছে। যার ফলে জনসাধারণের লাখ লাখ টাকার গাড়ির যান্ত্রিক ত্রূটি ধরা পড়ছে। নষ্ট হচ্ছে ইঞ্জিনসহ দামি যন্ত্রপাতি। তাছাড়া সৌদি আরব এবং অন্যান্য দেশ থেকে ব্রোস্টের তেল এনে সেই তেল পরিশোধিত করে ভোজ্যতেলের সাথে মিশিয়ে প্রকাশ্যে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পচা বিবর্ণ খেজুর বাজারে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ জনগণ না বুঝে এসব পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছে। জনসম্মুখে এতোসব অপকর্ম চললেও বিএসটিআইয়ের কার্যত কোনো দৃষ্টি নেই।
সুজন বলেন, ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খবর পাচ্ছি আসন্ন রমজানকে টার্গেট করে ভেজাল খাদ্য উৎপাদনকারীরা এখন থেকেই ভোজ্যতেল, সেমাই, লাচ্ছা সেমাই, নুডুলস, ঘিসহ বিভিন্ন ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে। কারণ রমজানের সময় আইন-শৃংখলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকে, তাই এ সময়টাকে টার্গেট করে তারা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আগে তারা বিভিন্ন হাট-বাজারে ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন করে বিপণন করতো। কিন্তু এখন সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর লোকচক্ষুর অন্তরালে অভিজাত এলাকার বাসাবাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটে তাদের ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের চাকচিক্য মোড়কে ভোক্তাগণ প্রতিনিয়তই প্রতারিত হচ্ছে। বিভিন্ন নামহীন ব্র্যান্ডধারী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদিত মিনারেল ওয়াটার নামক দূষিত পানি পান করে জনগল প্রায়শই দীর্ঘ মেয়াদী পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে শুধু জরিমানা নয়, প্রয়োজনে আইন করে জেলসহ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য পরিচালকের প্রতি আহব্বান জানান সুজন।
নাগরিক উদ্যোগের এমন কার্যক্রমের প্রশংসা করে বিএসটিআই চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক মো. সেলিম রেজা বলেন, যে কোনো রাষ্ট্রের মূলভিত্তি হচ্ছে জনগণ। জনগণ সচেতন থাকলে সেখানে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ইতিমধ্যে মহাপরিচালক সকল আঞ্চলিক কার্যালয়কে ভেজাল খাদ্রদ্রব্য উৎপাদন এবং বিপণন বন্ধে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। মহাপরিচালক মহোদয়ের নির্দেশনার সাথে নাগরিক উদ্যোগের উত্থাপিত বিষয়গুলো একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, বিএসটিআই চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রস্তাবিত তিন তলার স্থলে ইতিমধ্যে দশ তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। যার উন্নয়ন কাজও চলমান। এছাড়া পঞ্চাশ কোটি টাকার আধুনিক যন্ত্রপাতিও ক্রয় করা হয়েছে। ভবনের কাজ শেষ হলে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য আর ঢাকায় যেতে হবে না। চট্টগ্রামেই সব পণ্যের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যাবে।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএসটিআই উপ-পরিচালক (মেট) মো. শওকত ওসমান, উপ-পরিচালক (সিএম) মো. নুরুল আমিন, রাজনীতিবিদ আব্দুর রহমান মিয়া, সাইদুর রহমান চৌধুরী, নাগরিক উদ্যোগের সদস্য সচিব হাজী মো. হোসেন, নগর যুবলীগ সদস্য আব্দুল আজিম, অধ্যক্ষ কামরুল হোসেন, মো. শাহজাহান, মো. জাহাঙ্গীর, মো. নাছির, সফি আলম বাদশা, নগর ছাত্রলীগ সভাপতি এম ইমরান আহমেদ ইমু, মো. ওয়াসিম, আজম আলী জুয়েল, জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।