ঢাকা প্রতিনিধি
তিন সপ্তাহ না যেতেই আবারও পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। পাইকারিতে গড়ে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং খুচরায় ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। আজ থেকে কার্যকর হবে এ দাম। সোমবার এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ, যা গতকাল মঙ্গলবার প্রচার করা হয়েছে।
এর ফলে খুচরায় গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ভারিত গড়ে দাঁড়াবে ৭ টাকা ৮৫ পয়সা, যা আগে ৭ টাকা ৪৮ পয়সা ছিল। আর গড়ে পাইকারি বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৬ টাকা ৭০ পয়সা। এর আগে চলতি মাসেই গত ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) গড়ে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেটি জানুয়ারি থেকেই কার্যকর করা হয়। এবার ফেব্রুয়ারি থেকে গড়ে আরও পাঁচ শতাংশ দাম বাড়ানো হলো।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। দাম বাড়ানোর ক্ষমতা সরকারের হাতে নিতে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে একটি আইন পাস করা হয়। গত ১৪ বছরে এ নিয়ে ১১তম বারের মতো গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ল বিদ্যুতের দাম।
এদিকে তিন সপ্তাহের মাথায় ফের ৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, এটা নতুন করে বাড়ানো নয়, আগের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য বিদ্যুতের খুচরা গ্রাহকদের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্নভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে। তাতে খুচরায় গড়ে ৫ শতাংশ দাম বেড়েছে। এছাড়া পাইকারিতেও গড়ে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ দাম বেড়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সোমবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রত্যেক মাসেই গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করার কথা আমরা আগেই বলেছিলাম। আগামী মাসে বিদ্যুতের দাম আরেকবার সমন্বয় করতে হবে। আমাদের আর ভর্তুকি দেওয়ার সুযোগ নেই। এখন এভাবে সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই যেতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে বিদ্যুৎ সরবরাহের নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও অতি উচ্চ চাপ অনুযায়ী বিভিন্ন গ্রাহক শ্রেণির বিদ্যুতের মূল্য (এনার্জি রেট বা চার্জ) নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে গ্রাহককে শ্রেণি অনুযায়ী প্রতিটি সংযোগের বিপরীতে ডিমান্ড রেট এবং মোট বিলের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়।
প্রজ্ঞাপনে চাপ অনুযায়ী আবাসিক, সেচ বা কৃষিকাজে ব্যবহার করা পাম্প, ক্ষুদ্র শিল্প, নির্মাণ, শিক্ষা, ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল, ব্যাটারি চার্জিং স্টেশন, বাণিজ্যিক ও অফিস, শিল্প গ্রাহক শ্রেণিতে নতুন হার নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম সর্বনিম্ন ৪ টাকা ১৪ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১৭ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বর্ধিত দর অনুযায়ী একজন গ্রাহক ফেব্রæয়ারিতে লাইফলাইনে (৫০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহার) বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য ইউনিট প্রতি (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) দেবেন সর্বনিম্ন ৪ টাকা ১৪ পয়সা, যা জানুয়ারিতে ছিল ৩ টাকা ৯৪ পয়সা।
আর প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ১৭ টাকা ৬৪ পয়সা দিতে হবে অস্থায়ী বাণিজ্যিক বা অফিসে বিদ্যুৎ খরচের জন্য, যা জানুয়ারিতে ছিল ১৬ টাকা ৮০ পয়সা।
নিম্ন চাপের আবাসিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশি সাধারণ ৭৫ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়ে থাকে। এসব গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার হলে প্রতি ইউনিটের দর হবে ৪ টাকা ৬২ পয়সা (আগে ৪ টাকা ৪০ পয়সা); ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট হলে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৩১ পয়সা (আগে ছিল ৬ টাকা ০১ পয়সা); ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট হলে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৬২ পয়সা (আগে ছিল ৬ টাকা ৩০ পয়সা)।
এর বাইরে আবাসিকে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট হলে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৯৯ পয়সা (আগে ছিল ৬ টাকা ৬৬ পয়সা); ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট ১০ টাকা ৯৬ পয়সা (আগে ছিল ১০ টাকা ৪৪ পয়সা) এবং ৬০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বে ১২ টাকা ৬৩ পয়সা (আগে ছিল ১২ টাকা ০৩ পয়সা) করা হয়েছে।
নতুন মূল্যহারে সেচ বা কৃষি কাজের জন্য ব্যবহৃত পাম্পের বিদ্যুতের জন্য দিতে হবে ৪ টাকা ৫৯ পয়সা। এক্ষেত্রে আগের দর ৪ টাকা ৩৭ থেকে বাড়ানো হয়েছে ১২ পয়সা।
ক্ষুদ্র শিল্পে ফ্যাট রেট করা হয়েছে ৯ টাকা ৪১ পয়সা (আগে ছিল ৮ টাকা ৯৬ পয়সা); অফ পিকে ৮ টাকা ৪৬ পয়সা ( আগে ছিল ৮ টাকা ০৬ পয়সা) এবং পিক আওয়ারে ইউনিটপ্রতি দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ টাকা ২৯ পয়সা (আগে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা ছিল)।
বাণিজ্যিক ও অফিসের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট রেট ১১ টাকা ৩৬ পয়সা (আগে ছিল ১০ টাকা ৮২ পয়সা); অফপিক ১০ টাকা ২২ পয়সা (আগে ছিল ৯ টাকা ৭৩ পয়সা) এবং পিক ১৩ টাকা ৬৩ পয়সা (আগে ছিল ১২ টাকা ৯৮ পয়সা)।
অপরদিকে উচ্চ চাপে শিল্পের জন্য ফ্ল্যাট রেট ধরা হয়েছে ৯ টাকা ৩১ পয়সা (আগে ছিল ৮ টাকা ৮৭ পয়সা), অফি পিকে ৮ টাকা ৩৯ পয়সা (আগে ছিল ৭ টাকা ৯৯ পয়সা) এবং পিক আওয়ারে ১১ টাকা ৬৪ পয়সা (আগে ১১ টাকা ০৯ পয়সা ছিল)।
ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা আগেই জানিয়েছিলেন।
